X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
সিএনএন নিউজ এইটিনকে শেখ হাসিনা

সরকার বিরোধিতার উপমহাদেশীয় প্রবণতা অনুসরণ করেননি ভোটাররা

বিদেশ ডেস্ক
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:১০আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৭:২৪

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এইটিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা ও নেতৃত্বের সংকটের কারণে বিরোধীরা হেরে গেছে। তাছাড়া বিরোধীরা নিজেরাও নির্বাচনে খুব একটা সক্রিয় ছিল না। তার দাবি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মানুষের জন্য কাজ করে, যার বিষয়ে জনগণের আস্থা তৈরি হয়েছে। সেজন্যই ভোটারদের মধ্যে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যাওয়ার উপমহাদেশীয় প্রবণতা দেখা যায়নি নির্বাচনে। ফলশ্রুতিতে, টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে রেকর্ড গড়েছে আওয়ামী লীগ। সাক্ষাৎকারে ভারতবিরোধী শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে কাজ করতে না দেওয়া ও আসামের নাগরিকত্ব তালিকাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ পর্বে থাকছে সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ করা তার অভিমত। সরকার বিরোধিতার উপমহাদেশীয় প্রবণতা অনুসরণ করেননি ভোটাররা

সংবাদমাধ্যমটির পক্ষে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন জাকা জ্যাকব। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলকে ‘জনগণের ঐতিহাসিক রায়’, ‘পরপর তিন বার বিজয়ের রেকর্ড’ আখ্যা দিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন: ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ায় আপনার অনুভূতি কেমন?

শেখ হাসিনা: এটা ঠিক যে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরাই টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছি। এ জন্য প্রথমত আমি ভোটারদের ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা আমাকে ও আমার দলকে ভোট দিয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে এই দেশের মানুষ দেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। এবার আমরা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছি। প্রথমবার আমরা সরকার গঠন করেছিলাম ১৯৯৬ সালে। তখন জনগণ বুঝতে পেরেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে জনগণের জন্য কাজ করে।

সিএনএন নিউজ এইটিন: ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে এক ধরনের জনমত থাকার কথা বলা হয়। কারণ মানুষ সরকারের ওপর বেশি ক্ষুব্ধ থাকে। আপনি পরপর তিনবার জিতেছেন। নির্বাচন থেকে আপনি কী বুঝতে পেরেছেন?

শেখ হাসিনা: মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলে ক্ষমতাসীনবিরোধী অনুভূতি জেগে ওঠে না। দেশের জনগণ আমাদের গ্রহণ করেছে। তারা বুঝেছে, একমাত্র আমরাই তাদের ভালো করতে পারি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে দেশবাসী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে দেখেছেন, সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছেন, সামরিক শাসন দেখেছেন। পরবর্তীতে তাদের দেখতে হয়েছে সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতা, এমন কি অর্থ পাচারের মতো কর্মকাণ্ডও।

অন্যদিকে দেশের জনগণ আমাদের সরকারের ভূমিকা দেখেছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। আর সেজন্যই মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করেনি। আমাদের দেশের জনগণ কিন্তু তাদের ভোটাধিকারের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। আমরা যদি অগ্রহণযোগ্য কিছু করতাম তাহলে তারা আমাদের ভোট দিতেন না। আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সিএনএন নিউজ এইটিন: সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এমন কি কয়েকটি বিদেশি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলোকে আপনি কীভাবে দেখছেন? তারা বলেছেন, ‘জেলে থাকার কারণে নির্বাচনে বিরোধীদের অনেককেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। নির্বাচন পাতানো ছিল।’

শেখ হাসিনা: গণতন্ত্রে সমালোচনা খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আছে। সবাই সবার মতপ্রকাশ করতে পারে, আলোচনা করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু তাদেরকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। সমালোচনার করার আগে তাদের পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোর ফলাফল দেখা উচিত।

এবারের নির্বাচন অনেক শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমি অস্বীকার করছি না, যে কিছু কিছু স্থানে বিচ্ছন্ন সহিংসতা হয়েছে। আমরা সেটাও চাইনি। এগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকজন করেছে। তার বরং আমাদের দলের বহু নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। তারপরও মানুষে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে ভোট দিতে। নারী ও নতুন ভোটাররা বিপুল সংখ্যায় এগিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য।

তারা সমালোচনা করছেন। কিন্তু তাদেরকে তো প্রমাণ দেখাতে হবে যে কি খারাপ কাজ সরকার করেছে। সেরকম কিছু হয়ে থাকলে আমরা ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকব।

আমাদের বিরোধী দলের সমস্যা হচ্ছে, তাদের নেতা কে তা তারা তারা নিজেরাই জানে না। তারা নির্বাচনে জিতলে প্রধানমন্ত্রী হতো কে? তারা এ প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তাদের মনোনয়ন বাণিজ্য। নির্বাচনের নামে তারা বাণিজ্য করেছে। তারা টাকা নিয়ে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এক ঘণ্টার মধ্যে তারা আরেকজনকে সেই মনোনয়ন দিয়ে দিয়েছে।

জামায়াতের অনেক নেতাই যুদ্ধাপরাধী। তাদের বিচার হয়েছে। বিএনপি যখন জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েছে, তখন মানুষ তাদেরকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের জঙ্গিবাদ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির কারণে মানুষ তাদের গ্রহণ করেনি। মানুষ কেন তাদেরকে ভোট দেবে? জনগণ জানত আমাদের দল ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য, দেশের জন্য কাজ করবে। তখন তারা ধরে নিয়েছে, আমাদের ভোট দিলেই তাদের জন্য ভালো।

সিএনএন নিউজ এইটিন: জামায়াতকে নিয়ে যে একটা শঙ্কা ছিল যে তারা ক্ষমতাসীন হলে বাংলাদেশকে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কিছু বলুন।

শেখ হাসিনা: জামায়াত এখন বিএনপির সঙ্গে আছে। তাদের জোট আছে। আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেলেও বিএনপি তাদেরকে সঙ্গে রেখেছে। তাদের লোকদের মনোনয়ন দিয়েছে। সেইসব আসনে তারা জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সুতরাং যারা আমাদের সমালোচনা করছে তাদের বুঝতে হবে, বিরোধী দল নির্বাচনের সময় কী করেছে। আমার মনে হয়েছে, বিরোধীরা নির্বাচনের সময় আসলে সেই মাত্রায় সক্রিয়ও ছিল না। নেতৃত্বের সংকট তাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা ছিল। যখন দণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিকে নেতা করা হয় তখন জনগণ কেন তাদেরকে ভোট দেবে?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এইটিনকে দেওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার

তিস্তায় সমস্যা দিদিমণি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো মিয়ানমারের
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের বিষয়ে ভারতকে আশ্বস্ত করবেন কীভাবে?

/এএমএ/টিএন/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় উদযাপিত হলো ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’
২০২৪ সালের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ ১৬তম
বিএনপির প্রবাসী নেতাদের গ্রেফতারের অপেক্ষায় অ্যাসাইলাম শিকারিরা
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ