X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে হিন্দু নেতারা’

বিদেশ ডেস্ক
২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:১৬আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:০১

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় দেশটি ছেড়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিপন্নতা বাড়ছে। শরণার্থীরা বলছেন, ভারত না ছাড়লে রোহিঙ্গাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন দেশটির হিন্দু নেতারা। দীর্ঘদিন জম্মুতে বসবাসের পর গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৭৫ বছরের শরণার্থী ফায়েস আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতের শরণার্থী শিবিরে আমি ছয় বছর ছিলাম। কিন্তু গত বছর পুলিশ আমাদের ক্যাম্প পরিদর্শনের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। তারা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য তাদের সরবরাহ করতে বলে। পরিস্থিতি খুবই প্রতিকূল হয়ে উঠে। স্থানীয় হিন্দু নেতারা আমাদের হুমকি দিতে শুরু করে। তারা বলতে থাকে, ভারত না ছাড়লে তারা আমাদের খুন করে ফেলবে।

‘আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে হিন্দু নেতারা’ এমন অভিজ্ঞতা ফায়েস আহমেদের একার নয়। ভারতের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এ পর্যন্ত দেশটি থেকে অন্তত ১৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারে ফেরত পাঠনো হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তারা পালিয়েছে তারা।

দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হায়দ্রাবাদের একটি সেলুনে গত অক্টোবরে চুল কাটতে গিয়েছিলেন রোহিঙ্গা শরণার্থী জাকির হোসেন। এ সময় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভারত থেকে সাত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।

২৫ বছরের জাকির হোসেন বলেন, এটা (ভারতে শরণার্থীর জীবন) ছিল শেষ সম্বল। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের আশঙ্কা ছিল ভয়ঙ্কর। বহু বাধা বিড়ম্বনা পেরিয়ে ২০১৪ সালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের খবরে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।

২০১২ সালে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর ধরপাকড় শুরু করলে হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়। বর্মি সেনাবাহিনীর সহযোগী উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে পূর্ব পুরুষের বসতভিটা ছেড়ে ভিন দেশে শরণার্থীর জীবন বেছে নেন অনেকে। ‘আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে হিন্দু নেতারা’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে বর্মি সেনাবাহিনী। খুন-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে দেশ ছাড়তে শুরু করে লাখ লাখ মানুষ। পালিয়ে আসা মানুষের বেশিরভাগই বাংলাদেশে পালিয়ে আসলেও মালয়েশিয়া ও ভারতের মতো অন্যান্য দেশেও পালিয়েছে অনেকে। এখনও যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে অবশিষ্ট রয়েছেন তাদের অনেকের ঠাঁই হয়েছে নোংরা বন্দি শিবিরে। একেকটি বন্দিশিবির যেন একেকটি নির্যাতন কেন্দ্র।

জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। ভারতে পালিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৮ হাজার মানুষ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থায় নিবন্ধিত। তাদের একজন জাকির হোসেন।

জাকির হোসেন বলেন, রাখাইনে আমরা যা প্রত্যক্ষ করেছি তাতে হায়দ্রাবাদের বালাপুর শরণার্থী শিবিরের অবস্থা রাখাইনের চেয়ে খারাপ নয়। এই শহর অবশ্যই একটি অধিকতর ভালো বিকল্প।

এই আপাত স্বস্তি কিন্তু স্থায়ী হয়নি জাকির হোসেনের শরণার্থী জীবনে। আল জাজিরা’কে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ভারতীয় পুলিশ নিয়মিতভাবে আমাদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শুরু করে। আমাদের ফরম পূরণ করা এবং বায়োমেট্রিক ডাটা দিতে বলা হয়। ক্যাম্পজুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, আমাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।

ফায়েস আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশকে এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা বলে মনে হচ্ছে। সেখানকার বিভিন্ন শিবিরে আমাদের অনেক আত্মীয় রয়েছেন।’

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর ভারত সরকার চার রোহিঙ্গাকে ভারতে ফেরত পাঠালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শরণার্থীদের মধ্যে। ফেরত পাঠানো ওই চারজন অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে ২০১২ সাল থেকে আসামের কারাগারে বন্দি ছিলেন। noname

মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এদের বেশিরভাগই বসবাস করছে আশ্রয় শিবিরে। আবার অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে অনেককে রাখা হয়েছে অভিবাসী আটক কেন্দ্রে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসী উল্লেখ করে তাদের ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেশনে স্বাক্ষর করেনি ভারত। ২০১৮ সালে তারা ২৩০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে। কট্টরপন্থীরা হিন্দুরা বারবারই তাদের বিতাড়নের দাবি জানাচ্ছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্যা বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারসেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের মুখপাত্র নয়ন বোস বলেন, ৩ জানুয়ারি ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী নতুন এই ঢল শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে ৩০০ পরিবারের মোট ১৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের সবাইকে জাতিসংঘের ট্রানজিট সেন্টারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।’

জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ভারত সরকারের আচরণের সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন’কে তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী হিসেবে রোহিঙ্গাদের ভারতের সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে।

অমর্ত্য সেনের ভাষায়, ‘এটা অদ্ভুত যে প্রতিবেশী দেশগুলোর অমুসলিমদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিলেও মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য কোনও জায়গা দিতে পারছে না ভারত। অথচ ভারতের শাসক গোষ্ঠী ভালো করেই জানে মিয়ানমারে তাদের কী ধরনের অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়নের স্বীকার হতে হচ্ছে।’ সূত্র: আল জাজিরা, নিউজ এইটিন।

/এমপি/
সম্পর্কিত
রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের
রাইসির জন্য খামেনির প্রার্থনা
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকছে ভারী অস্ত্র
সর্বশেষ খবর
টিআইবির ‘হলফনামা বিশ্লেষণ’ নিয়ে প্রশ্ন আ.লীগ নেতাদের
উপজেলা নির্বাচনটিআইবির ‘হলফনামা বিশ্লেষণ’ নিয়ে প্রশ্ন আ.লীগ নেতাদের
রাইসির মৃত্যুতে লাভ কার?
রাইসির মৃত্যুতে লাভ কার?
বিদেশে অর্থপাচার রোধে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই: সিআইডি
বিদেশে অর্থপাচার রোধে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই: সিআইডি
এক উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬ প্রার্থী, বিপাকে ভোটার
এক উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৬ প্রার্থী, বিপাকে ভোটার
সর্বাধিক পঠিত
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া