প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির 'দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব' ক্যাটাগরিতে অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের পরের স্থানটি দখল করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ৮ বছরের শাসনামলে 'সিরীয় সংকট' মোকাবিলায় ব্যর্থতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক মন্দা সামলানো, অস্ত্র সীমিতকরণে ভূমিকা, তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবদানের কারণে তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে তাকে।
বিগত এক দশকে চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি। ওই ব্যক্তিদের ১০টি বিষয়-শ্রেণীতে (ক্যাটাগরি) অন্তর্ভুক্ত করে বুধবার এ তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। এতে দৃঢ়চেতা ব্যক্তি নামের ক্যাটাগরিতে চতুর্থবারের মতো শীর্ষস্থান পেয়েছেন জার্মান প্রেসিডেন্ট অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রয়েছেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
ফরেন পলিসি মনে করে, ওবামা নতুন করে কূটনীতির ওপর জোর দেওয়ার কারণে ইরানের সঙ্গে ছয় শক্তিধর দেশের পারমাণবিক চুক্তি সম্ভব হয়েছে। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে এবং অস্ত্র সীমিত করা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ওবামা প্রশাসনের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তিনি এটিকে মূল বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছিলেন৷ নির্বাচনে জিতলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিবেশের ক্ষেত্রে আবার নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আট বছরের শাসন মেয়াদের শুরুতে খুব একটা সফল হননি ওবামা। একেবারে শেষের দিকে এসে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সম্মত হয় বিশ্বের ১৯৫টি দেশ।
ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালেই ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ওবামার জন্য এটি ছিল খুব বড় সাফল্য। রিপাবলিকানদের বিরোধিতা উপেক্ষা করেই চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ওবামা। মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় পরিসরে যুদ্ধ ঠেকাতে ইরান পারমাণবিক চুক্তি জরুরি বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
২০১০ সালে ওবামার শাসনকালেই রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তি (নিউক্লিয়ার আর্মস রিডাকশন ট্রিটি) স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল প্রাগে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
ওবামাকে তার প্রথম মেয়াদের পুরোটা সময় আর্থিক মন্দা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়েছে। ২০০৮ সালে ওই বৈশ্বিক মন্দা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন ব্যবসায় ধস নামার পর ওয়ালস্ট্রিটের ব্যাংক আর ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর এর ধাক্কা এসে লাগে। দেশটির বন্ধকি বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা ও আর্থিক খাতের শিথিল নিয়ন্ত্রণই মন্দার শুরুটা করেছিল। সে সময় ব্যাংকগুলো খুব সহজেই ঋণ দিচ্ছিল। মন্দা পরিস্থিতি সামলাতে বেশ উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওবামা। সেসময় কংগ্রেসে বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্যাকেজ পাস করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তাতে মন্দার প্রভাব কমানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হয়।