মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি তাদের প্রকাশিত প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের তালিকায় তরুণদের মধ্যে (অনুর্ধ্ব চল্লিশ বছরের চিন্তাবিদ) শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আলোচিত ছিলেন তিনি। বিশ্বজুড়ে যেখানে উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটছে, জাসিন্ডা জনপন্থী নীতি ও পরিকল্পনা, উদার ও বর্ণবাদবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি, শরণার্থী ও পরিবেশবান্ধব অবস্থানের মধ্য দিয়ে নিজেকে আলোচনায় এনেছেন। এর সঙ্গে ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান তাকে অনন্য করে তুলেছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন ৩৭ বছর বয়সী জাসিন্ডা।
২০১৭ সালের নির্বাচনে জাসিন্ডার দল লেবার পার্টি নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও কোনও দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ছোট দল ফার্স্ট পার্টির নেতা উইনস্টন পিটার্সের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের ডাক দেওয়া মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহ্বান উপেক্ষা করেন জাসিন্ডা। তিনি বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরাও মাদক নিয়ে মোকাবিলা করতে চাই। তবে আমরা এক স্বাস্থ্যসম্মনত উপায়েই এর মোকাবিলা করবো।’ এছাড়া ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়াকেও সমর্থন করেননি তিনি। তিনি জানান, নিউজিল্যান্ড বিশ্বাস করে এই চুক্তি থেকে ভালো কিছু অর্জন সম্ভব।
নিউ জিল্যান্ডে সবসময়ই কর্তৃত্ববাদী, প্রগতিবিরোধী ও পুরুষ নেতা দেখেছে জনগণ। জাসিন্ডা আসায় একজন উদারবাদী, প্রগতিশীল নারী নেতাকে পায় তারা। এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে তার ভাষণের পর আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ‘ট্রাম্প-বিপরীত’ ভাবমূর্তি তৈরি হয় তার। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে উদারতা ও সংহতিতে বিশ্বাসী তিনি।
দেশটিতে বাস্তুহারা ও শিশু দারিদ্য মোকাবিলায় জাসিন্ডার অঙ্গীকারের পর বিগত বছরগুলো থেকে অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে সেখানে। বিশ্বের অন্যান্য ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা যেখানো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বিরুপ আচরণ করেন সেখানে জাসিন্ডা উদারতাকেই সরকারি নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সামাজিকভাবে সবাইকে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্রতায় বসবাস করা শিশুর হার ৪১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে পারিবারিক কর প্যাকেজ ব্যবস্থা চালু করেন জাসিন্ডা। এছাড়া নতুন একটি শিশু দারিদ্র দূরীকরণ আইনও তৈরি করেন। বৈদেশিক নীতিতেও তার এই উদার অবস্থান স্পষ্ট ছিলো। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও নাউরোতে অবস্থান করা ১৫০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বর্তমান প্রজন্মের জলবায়ু পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ব্যবস্থাও নিয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব নেওয়া পাঁচ মাসের মাথায় নতুন করে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।