X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাপের কামড়ে কেন এতো মানুষের মৃত্যু?

বিদেশ ডেস্ক
২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৫আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:০৯

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয় সাপের কামড়ে। চিকিৎসার অভাব এবং ভুল ওষুধ গ্রহণের ফলে এসব মৃত্যু হচ্ছে। যদিও এসব মৃত্যুর অনেকগুলোই ঠেকানো যেত। বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সাপের কামড়কে বিবেচনা করা হয় না। কিন্তু বিশ্বের কিছু অঞ্চলে এখনও তা প্রাত্যাহিক ঝুঁকি এবং তা প্রাণসংহারী বা জীবন বদলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে সাপের কামড়ে মৃত্যুর কারণ তুলে ধরা হয়েছে।

সাপের কামড়ে কেন এতো মানুষের মৃত্যু?

বিষাক্ত সাপের কামড়ে প্রতি মাসে গড়ে ১১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা ২০১৪-১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা সংকটে মৃত্যুর চেয়ে বেশি। মৃত্যু ছাড়াও প্রতি বছর সাড়ে চার লাখ মানুষ সাপের কামড়ের ফলে অঙ্গচ্ছেদ বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়েন। অথচ এতো মানুষের মৃত্যু হলেও বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনও আলোচনাই হয় না। এটাকে মনে করা হচ্ছে সবচেয়ে অবহেলিত গ্রীষ্মকালীন রোগ হিসেবে।

সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছেন কারা?

বিশ্বের উন্নত অঞ্চল, যেমন- ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকায় প্রতি বছর খুব কম মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ এসব এলাকায় অনেক ধরনের বিষাক্ত প্রজাতির সাপ রয়েছে। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩২ হাজার এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তা দ্বিগুণ।

অনেক গ্রামীণ এলাকার জনগণ সাপের কামড়ের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তারা ক্ষেতে কাজ করা সময়, যাতায়াতের সময় বা এমনকি রাতে ঘরে ঘুমানোর সময়ও এই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে তরুণ কৃষকরা। তাদের পরে ঝুঁকির মুখে রয়েছে শিশুরা।

আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক শহরে জনসংখ্যার আধিক্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হলেও কিছু কিছু শহরে সাপের কামড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নেই। প্রশিক্ষণ, জরুরি পরিবহন ও সামর্থ্যের মধ্যে ওষুধের সরবরাহ স্বল্পতার কারণে দুঃখজনক পরিণতি নিয়ে আসছে।

সাপের কামড়ে কেন এতো মানুষের মৃত্যু?

ব্যয়বহুল ওষুধ

বিষাক্ত সাপের কামড়ে সাধারণত তিনটি ধরনের প্রাণ সংহারি লক্ষ্মণ দেখা দেয়, নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য রক্তপাত, অবশ ও পরিবর্তনের অযোগ্য টিস্যুর ধ্বংস। কামড়ের পর পরই রোগীদের সঠিক ওষুধ যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অ্যান্টিভেনম এই চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধ সাপের বিষ দিয়েই তৈরি করা হয়। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ের চিকিৎসায় বিভিন্ন সংস্করণ প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে অসংখ্য প্রজাতির বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোবরা, মাম্বাস, ক্রেইটস, ভাইপারস ও পিট ভাইপারস। একটি গোষ্ঠীর বিষের সঙ্গে আরেক গোষ্ঠীর বিষের পার্থক্য রয়েছে। এমনকি একই অঞ্চলের একই প্রজাতির সাপের বিষেও পার্থক্য থাকে। ফলে উপযুক্ত ও সঠিক অ্যান্টিভেনম শনাক্ত করা বেশিরভাগ সময় খুব কঠিন ও অনেক ব্যয় বহুল।

লাতিন আমেরিকায় অ্যান্টিভেনম প্রস্তুত করা হয় সরকারের ভর্তুকিতে।  আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। অঞ্চলটিতে ভালো অ্যান্টিভেনমের মূল্য প্রতি ভায়াল পড়ে ১৪০ থেকে ৩০০ ডলার। একজন রোগীর জীবন বাঁচাতে সাধারণত ৩টি ভায়াল প্রয়োজন। বছরে ৬০০ ডলার রোজগার করা স্থানীয় সোয়াজি কৃষকদের সামর্থ্যের বাইরে এই অ্যান্টিভেনম।

সাপের কামড়ে কেন এতো মানুষের মৃত্যু?

 ভুল অ্যান্টিভেনম

এই পরিস্থিতির কারণে গত এক দশকে দুর্বল বা অনুপযুক্ত ওষুধ বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে। বিশেষ করে আফ্রিকায়। এসব অ্যান্টিভেনমের প্রতি ভায়ালের দাম পড়ে ৩০ ডলার। মহাদেশটির অনেক হাসপাতালেই এসব ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় জানা গেছে, এসব ওষুধের অনেকগুলোই বিপজ্জনক মাত্রায় অকার্যকর।

ঘানা ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ছোট আকারের গবেষণায় দেখা গেছে, যখন এসব সস্তা দামের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে যখন সন্তান জন্মদানের হার ২ শতাংশ বাড়ছে অথবা ১০ শতাংশ কমে যাচ্ছে।

এছাড়া এসব ওষুধ যে এলাকায় বিক্রি করা হয় সেগুলো ভিন্ন অঞ্চলের সাপের বিষ থেকে তৈরি করা হচ্ছে। যেমন, ভারতীয় সাপের বিষ দিয়ে তৈরি অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হচ্ছে আফ্রিকায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে সঠিক বিষ দিয়ে তৈরি করা হলেও তাতে অ্যান্টিবডির পরিমাণ থাকছে অনেক কম। এতে করে ওষুধটি হয়ে যাচ্ছে দুর্বল। এতে করে রোগীকে সুস্থ করার জন্য তিনটি ভায়ালের পরিবর্তে ১০টি পর্যন্ত গ্রহণ করতে হচ্ছে। অনেক সময় তা ২০ থেকে ৩০ পর্যন্ত পৌঁছায়।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক