মিয়ানমারের রাখাইনে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হেনরিয়েটা ফোর বলেন, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দিকনির্দেশনা আনান কমিশনের সুপারিশে রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এখবর জানিয়েছে।
কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করে আসলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না মিয়ানমার। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সাত লাখেরও বেশি মানুষ। গত বছরের আগস্টে ইউনিসেফের মুখপাত্র সিমোন ইনগ্রাম সতর্ক করেছিলেন, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির এবং মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব রোহিঙ্গা শিশু দিশাহীন প্রজন্মে রূপান্তরিত হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছিলেন তিনি।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এক সম্মেলনে হেনরিয়েটা বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তাহীন ও আশাহীনভাবে বসবাস করছে। আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে অনেকের শিক্ষা ও চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে এবং অনেক শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে।’
ইউনিসেফ প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, তারা যেনো এই মুহূর্তেই শিশুদের বাস্তবতা চিন্তা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরে আসার পরিবেশও তৈরি হবে।
২০১৬ সালে রাখাইনের সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। কিন্তু কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব এখনও আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৭ সালে কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়া একদিন পরই আরসা হামলা চালায়। এরপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা চালায় যাকে জাতিসংঘ জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যার উদ্দেশ্য বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে মিয়ানমার এই দাবি অস্বীকার করে।
২০১৮ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমারের এক মন্ত্রী পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকের জানিয়ছিলেন যে, তারা আনান কমিশনের দেওয়া আটটি সুপারিশকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করছে এবং অবিলম্বে পূরণ করতে পারছে না। এরমধ্যে ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইন রয়েছে। এই আইনের ফলেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়, তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ে। আনান কমিশন এই আইন সংস্কার করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, সরকার যেন রাখাইনে বসবাসকারীদের মাঝে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত এবং মুসলিম গ্রামগুলোতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়ে সহযোগিতা করে। এছাড়া সরকারকে আহ্বান জানানো হয়ে যেন শিশুদের মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত ও শিক্ষার শাখা বাড়িতে আরও বিস্তৃত করা হয়।
গত আগস্টে ইউনিসেফ সতর্ক করেছিল, কক্সবাজারে আশ্রয় শিবিরে থাকা ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশু দিশাহীন প্রজন্মে রূপান্তরিত হতে পারে। বন্যা ও অসুস্থতার কারণে শিক্ষার আলো থেকে দূরে চলে যেতে পারে তারা। ফোর বলেন, ‘আমরা তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও সম্মানসূচক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানাই। তারা যেনো তাদের অধিকার ও সম্মান ফিরে পায়। তাহলেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে।