ভেনেজুয়েলার ‘স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট’ জুয়ান গুইদোর স্বীকৃতি প্রশ্নে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ফ্রান্স-জার্মানিসহ শক্তিশালী দেশগুলো সরাসরি তার স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলো স্বীকৃতির পরিবর্তে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর শঙ্কা, স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হওয়ার এই নজির বিশ্বজুড়ে অন্যান্য বিরোধী নেতাকেও একই পথে উদ্বুদ্ধ করবে।
গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি নিজেকে ভেনেজুয়েলার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন দেশটির বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদো। বিরোধী নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো’র দ্বিতীয় মেয়াদ ‘অবৈধ' ঘোষিত হওয়ার পরই এই পদক্ষেপ নেন তিনি। এর কয়েক মিনিটের মাথায় তাকে ‘স্বীকৃতি’ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টও গুইদোকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রস্তাব পাস করে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখন পর্যন্ত তার বিষয়ে পরিস্কার কোনও অবস্থান নেয়নি।
গত শনিবার মাদুরোকে আট দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সময় সীমা বেঁধে দেয় ইউরোপের কয়েকটি দেশ। ইইউ-এর কূটনীতিক বলেছেন, সময়সীমা শেষ হওয়ায় আগামী সোমবারই গুইদোকে সরাসরি সমর্থনের ঘোষণা দিতে পারে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেন। তবে এরইমধ্যে ওই সময়সীমাকে অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মাদুরো।
এ সপ্তাহে রোমানিয়ার বুচারেস্ট শহরে বৈঠকে মিলিত হন ইইউ-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ওই বৈঠকে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে, নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণাকারী গুইদো সারা বিশ্বের বিরোধী নেতাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে ইঠতে পারেন।
ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলো তাই গুইদো সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে খানিকটা কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। সমর্থনের ব্যাপারে সম্মত হলেও ‘স্বীকার’ বা ‘স্বীকৃতি’ শব্দগুলো এড়িয়ে যেতে চায় তারা। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের জন্য তৈরি করা দুটি নথি হাতে পাওয়ার কথা জানিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে গুইদোর ভূমিকায় ‘সমর্থন স্বীকার করবেন’ তারা। এক ইইউ কূটনীতিক বলেন, এই ডি-ফ্যাক্টো প্রকৃতির স্বীকৃতিতে অনেক দেশই অন্তবর্তী ভূমিকার ওপর জোর দেবে।
তা সত্ত্বেও নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত গুইদোকে সমর্থন করার বিষয়ে সম্মত হন ইইউ-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। কোনও যৌথ বিবৃতির পরিবর্তে ২৮টি দেশের সরকার আলাদা আলাদাভাবে গুইদোকে সমর্থনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। ইউরোপের কূটনীতিকরা বলছেন ভেনেজুয়েলার সংবিধানের ভিত্তিতে ক্ষমতা পরিবর্তনে সমর্থন করাতে ইইউ সরকারগুলো বেশি স্বস্তি পাচ্ছে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অপব্যবহার করলে বা অনুপস্থিত কিংবা অক্ষম হলে কংগ্রেসের প্রধান ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে।