X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে হিমালয়ের বরফ, চরম পরিণতির ঝুঁকিতে ২০০ কোটি মানুষ

বিদেশ ডেস্ক
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:০০আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:১২
image

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২১ সাল নাগাদ হিমালয়ের হিমবাহগুলোর অন্তত এক তৃতীয়াংশ গলে যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও এ পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর সে চুক্তির বাস্তবায়ন না হলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। তখন হিমালয়ের হিমবাহগুলোর দুই তৃতীয়াংশ গলে যাবে। এতে প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে চরম পরিণতি বরণ করতে হবে। হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের অবস্থা মূল্যায়নের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিমড)-এর এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন গবেষকরা।

এভারেস্ট-কুম্ভ অঞ্চলে বরফ গলার ছবি

প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে এবং ক্রমান্বয়ে তা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে-গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিমড)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হারকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়, তারপরও ২১০০ সাল নাগাদ হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের ৩৬ শতাংশ হিমবাহ গলে যাবে। উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে গলে যাবে ৫০ শতাংশ হিমবাহ। আর যদি কার্বন নিঃসরণ না কমে, তবে ক্ষতির পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশে গিয়ে ঠেকতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিমড)-এর গবেষক ফিলিপাস ওয়েস্টার বলেন, ‘এটা এমন ধরনের জলবায়ু সংকট যার কথা আপনারা শোনেননি।’

আফগানিস্তান থেকে শুরু করে মিয়ানমার পর্যন্ত হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল অবস্থিত। এটিকে বিশ্বের ‘তৃতীয় মেরু’ হিসেবে ডাকা হয়। কারণ, আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার পর এ অঞ্চলটিই সবচেয়ে বেশি বরফে আচ্ছাদিত। হিমবাহগুলো হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলে বসবাসকারী ২৫ কোটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূণ্য পানি সংরক্ষণাগার হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া, পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য দেশের চূড়া থেকে প্রবাহিত হওয়া বড় বড় নদীগুলোর ওর ১৬৫ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। 

আইসিমড-এর গবেষক ফিলিপাস ওয়েস্টার বলেনওয়েস্টার জানান, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১৯৭০ এর দশক থেকে হিন্দু কুশ হিমালয় অঞ্চলের ১৫ শতাংশ বরফ উধাও হয়ে গেছে। হিন্দু কুশ হিমালয় অঞ্চলটি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উষ্ণতা বৃদ্ধিজনিত প্রভাব একেক জায়গায় একেক রকমের। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের অংশের কিছু হিমবাহের অবস্থা স্থিতিশীল। এমনকি এগুলোর কোনও কোনওটিতে বরফ জমছে। তবে ভবিষ্যতে উষ্ণতা বাড়লে এসব হিমবাহও গলতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন ওয়েস্টার। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা বিশ্বের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট যে পন্থা নির্ধারণ করেছি যদি তা বাস্তবায়িতও হয়, তবে তারপরও এক তৃতীয়াংশ হিমবাহ হারাব এবং সমস্যার মধ্যে পড়ব। এটাই এ গবেষণার মধ্য দিয়ে পাওয়া ভয়াবহ বিষয়।’

হিন্দুকুশ হিমালয় মাউন্টেন বেল্ট
ওয়েস্টার আক্ষেপ জানিয়ে আরও বলেন, আগের চেয়ে আরও জনবহুল হওয়ার পরও হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের হুমকিতে থাকা অন্য নিম্নাঞ্চলীয় দ্বীপ রাষ্ট্র ও আর্কটিক অঞ্চলের তুলনায় কম মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছে।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমা ওয়াধাম বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের হুমকিতে থাকা এ অঞ্চলটিকে প্রাধান্য দিয়ে যুগান্তকারী একটি কাজ হয়েছে।

হিমালয়কে ঘিরে থাকা আটটি রাষ্ট্রের অনুরোধে গবেষণাটি করা হয়েছে। ২০০রও বেশি বিজ্ঞানী পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ গবেষণায় নিযুক্ত ছিলেন। আরও ১২৫ জন বিশেষজ্ঞ গবেষকদের কাজ পর্যালোচনা করেছেন। ওয়েস্টার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলের বরফের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি অনিশ্চিত। তবে আমরা এখন ভালোভাবেই জানি যে এ ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তা জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে।’

হিমবাহ গলার কারণে ২০৫০ থেকে ২০৬০ সাল পর্যন্ত নদীর প্রবাহ বেড়ে যাবে। এতে হ্রদগুলোর উচ্চতা বেড়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হবে। তবে ২০৬০ এর দশক থেকে নদীর প্রবাহ কমতে শুরু করবে। সিন্ধু ও মধ্য এশিয়ান নদীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নদী প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে হাইড্রো ড্যামগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। অঞ্চলের বেশিরভাগ বিদ্যুৎই এখান থেকে উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়বে কৃষকদের ওপর। তারা শস্য উৎপাদন করতে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ পাবেন না।

বসন্তকালীন গলনে পরিবর্তন আসার কারণে এরইমধ্যে প্রাক-বর্ষা নদী প্রবাহ কমতে শুরু করেছে, আর এ সময়ে কৃষকরা তাদের শস্য রোপন করে থাকেন। গবেষক ওয়েস্টার জানান, বর্ষাকালেও অস্বঅবিকতা দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত বর্ষণ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগে ১০০ বছর পর পর যে রকমের বন্যা হতো তা এখন প্রতি ৫০ বছর পর পরই দেখা যাচ্ছে।’   

/এফইউ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক