X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিবেদন

বিপন্ন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, বিশ্বকে হুমকিতে ফেলেছেন ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:০০আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩১
image

যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শোচনীয় অবস্থার কথা উঠে এলো খোদ মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিবেদনেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনের শাসন ক্ষুণ্ন করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও অভিবাসীদের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে দেশের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বেই জনতোষণবাদী ডানপন্থী রাজনীতির উত্থানকে গণতন্ত্রের বিপন্নতায় দায়ী করা হয়েছে। মার্কিন গণতন্ত্রের বিপন্নতা বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও বেশি করে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বিশ্বের ২৪টি দেশের কর্তৃপক্ষের হাতে বিদেশে থাকা রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

বিপন্ন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, বিশ্বকে হুমকিতে ফেলেছেন ট্রাম্প
‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একের পর এক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় ঝুঁকে পড়ছে এবং সে কারণে বিশ্বজুড়েই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী অতীতের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালেও বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনে ২০০৬ সাল থেকে ১১৬টি দেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অবনতি শনাক্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৬৩টি দেশের ক্ষেত্রে। গত ১২ মাসে ৬৮টি দেশে রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক অবনতির ১৩-তম বছর এটি।  

ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের শোচনীয় অবস্থার কথাও জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইনের শাসন ও তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ করেন। তার সরকার অভিবাসন প্রত্যাশীদের অধিকারে ওপর ‘অন্যায় কড়াকড়ি’ আরোপ করে রেখেছে। অভিবাসন নীতিমালাগুলো ‘ভয়াবহ কঠোর ও বিপজ্জনক’ হয়ে পড়েছে।

‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানকে নির্বাচনি প্রচারণার অস্ত্র করেছিলেন ট্রাম্প। তার এই মহান আমেরিকা দিয়ে তিনি সেই কলম্বাসের আবিষ্কৃত আমেরিকাকে বুঝিয়ে থাকেন; যা শ্বেতাঙ্গ আাধিপত্যেরই নামান্তর। কালজয়ী প্রয়াত মার্কিন ইতিহাসবিদ হাওয়ার্ড জিন তার ‘পিপলস হিস্টরি অব আমেরিকা’য় লিখেছিলেন কিভাবে আদিবাসীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে এই কথিত আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য কায়েম করা হয়েছিল আর তার নাম দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা আবিষ্কার। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ ধোয়া তুলে সেই শ্বেতাঙ্গ মার্কিনিদের আধিপত্যের রাজনীতিকে সামনে আনেন তিনি। এর বিপরীতে স্থাপন করেন বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে। মেক্সিকোর সীমান্ত নয় কেবল, মানুষের মনের মধ্যেও বিভক্তির বিষ ছড়িয়েছেন তিনি।

ফ্রিডম হাউসের প্রেসিডেন্ট মাইকেল জে অ্যাবরামোউইচ মন্তব্য করেছেন, ‘আমেরিকান গণতন্ত্র তেমন শক্তিশালী কোনও প্রক্রিয়া নয়, বিশেষত প্রেসিডেন্ট নিজে যখন এর মূলনীতির প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখান না।’ এই পরিস্থিতিকেই ‘সবথেকে ভয়াবহ বিপদ’র কারণ মনে করছেন তিনি। তার মতে, গণতন্ত্রবিরোধী প্রপঞ্চ আর ক্ষমতা চর্চার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রবণতা বর্জন স্বাধীনতার পথে সত্যিকারের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অ্যাবরামোউইচ মনে করেন, মার্কিন গণতন্ত্রের বিপন্নতার প্রভাব কেবল তার নিজ ভূখণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ‘যুক্তরাষ্ট্রে কী ঘটছে অন্যান্য দেশগুলো তা দেখে এবং মার্কিন নেতার আচার-আচরণকে অনুসরণ করে। মার্কিন গণতন্ত্রের চলমান বিপন্নতা বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবনতিকে ত্বরান্বিত করবে।’ আশঙ্কা প্রকাশ করেন জে অ্যাবরামোউইচ।

প্রতীকী ছবি

শরণার্থীদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক জনতোষণবাদী রাজনীতির হাতিয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শরণার্থীদের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়িয়েও দরিদ্র শ্বেতাঙ্গা আমেরিকানদের মন জয় করেছিলেন। সমর্থ হয়েছিলেন ক্ষমতায় আসতে। যুক্তরাজ্যের বিগত নির্বাচনেও কনজারভেটিভ নেতা থেরেসা মে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছেন প্রচারণারকালে। ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই জনতোষণবাদী নীতির উত্থানের ভয়াবহতা। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘বিকেন্দ্রিভূত ক্ষমতা’র মতো সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান জোরদার করেছে উগ্র ডানপন্থী জনতোষণবাদীরা (পপুলিস্ট ফোর্স)। তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও শরণার্থীদের আইনগত সুরক্ষার বিরোধিতা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপেও নেতৃত্ব নির্বাচনে জনগণের ‘আস্থার সংকট’ শনাক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে গত বছর হাঙ্গেরির স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে দেশটি ‘মুক্ত’ থেকে ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারে নেমে এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো নিয়ে ফ্রিডম হাউস এ যাবত যতগুলো মূল্যায়ন করেছে তার মধ্যে হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্টর অরবানের হাত ধরে নাগরিক স্বাধীনতার ‘সবচেয়ে নাটকীয় রকমের অবনতি’ হয়েছে।

রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান ও সৌদি আরবসহ অন্তত ২৪টি দেশের সরকার কর্তৃক বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা উঠে এসেছে ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে। তারা বিদেশে অবস্থানরত নিজ দেশের ভিন্নমতাবলম্বীদের ফেরত চাওয়া, অথবা অপহরণ কিংবা হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আরও বেশি সংখ্যক কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাশক্তি এখন বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করছে কিংবা তাদের নেতাদেরকে কারাবন্দি করছে, শর্ত ও সীমাবদ্ধতা আরোপ করে তাদের ছাড়া হচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত যেসব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করছে তাদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।’

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রজব তায়্যিব এরদোয়ান গত বছর নতুন মেয়াদে পুননির্বাচিত হয়েছেন। আর চীনে কোনও ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না হতে পারার সীমাবদ্ধতা দূর করে শি জিনপিং কে অনির্দিষ্ট মেয়াদের শাসন ক্ষমতা দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেস। প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য আমেরিকান দেশ নিকারাগুয়াতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর ধরপাকড়কে কেন্দ্র করে দেশটির অবস্থানের অবনতি হয়েছে এবং এটি ‘মুক্ত নয়’ দেশের পর্যায়ে নেমে এসেছে। ভেনেজুয়েলাতে ‘প্রচণ্ডরকমের ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ব্রাজিলে নবনির্বাচিত জেইর বলোসনারো সামরিক একনায়কতন্ত্রের জন্য তার আকুলতার কথা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, দেশত্যাগীদের আক্রমণ করতে সরকারদের মধ্যে নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

বিশ্বজুড়ে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানোর প্রবণতাও বেড়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের ভূখণ্ডে থাকা জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মিশ্রণ নষ্ট করে দিতে চাইছেন। মুক্ত মতের ওপর আক্রমণ করতে তারা ইন্টারনেট সেন্সরশিপ ও নজরদারিকে নতুন হাতিয়ারে পরিণত করেছে।  ফ্রিডম হাউসের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সারাহ রেপুচ্চি বলেন, ‘যদি বিশ্বের একটা বড় অংশ এভাবে একনায়কতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে মুক্ত সমাজের অংশটি নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন, অনেক বেশি বিপজ্জনক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করবে।’ 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সর্বশেষ খবর
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
জনগণ এনডিএ জোটকে একচেটিয়া ভোট দিয়েছে: মোদি
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
অতিরিক্ত মদপানে লেগুনাচালকের মৃত্যু
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
পূজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাসচাপায় বাবা-ছেলে নিহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া