X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
চোখের বদলে চোখ নেওয়ার হুমকি

সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে: আরাকান আর্মি

বিদেশ ডেস্ক
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৮আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:০২
image

আরাকান আর্মির সহ-প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং গত বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাখাইনের বেসামরিক নাগরিকদের উদ্দেশে প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় মন্তব্য করেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে চলা সংঘাত উত্তর রাখাইন থেকে আরও বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সেনাবল বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করে হয়েছে আরাকান আর্মির এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাধারণ আরাকানিদের নিপীড়ন করলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে যথাযথ জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভিডিওবার্তায়। তার ভাষায়, আরাকান আর্মি ‘চোখের বদলে চোখ’ নেবে। ভিডিওবার্তায় তিনি আরাকান আর্মির ‘উদ্দেশ্য’ পুনর্ব্যক্ত করেছেন: রাখাইনে আরাকান আর্মি ছাড়া আর কোনও সেনাবাহিনী থাকবে না। সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে: আরাকান আর্মি
বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাসি, হয়রানি এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতের সূত্রে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হচ্ছে রাখাইনের বেসামরিক বৌদ্ধ অধিবাসীদের। বার্তা সংস্থা এএফপি ২৫ জানুয়ারিতে হওয়া সংঘর্ষের পর তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল, যে বৌদ্ধরা মাত্র ১৮ মাস আগেই রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে, বৌদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আজ তাদেরকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘরছাড়া হতে হচ্ছে।
আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অংয়ের ভিডিওবার্তাটি ধারণ করা হয়েছে আরাকান আর্মির ঘাঁটি কাচিন প্রদেশের লাইজাতে। তিনি দাবি করেছেন, তাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) শত শত সেনা সদস্য হারিয়েছে। সম্মানহানির ভয়ে তারা হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধে না পেরে এখন তারা আরাকানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দেবে। তারা রাখাইনে সেনাবল বৃদ্ধি করেছে। ফলে সংঘাত উত্তর রাখাইন পেরিয়ে আরও বেশি এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানিদের ক্ষতি করলে আরাকান আর্মি ‘চোখের দলে চোখ’ নীতি অনুসরণ করবে।
আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং সংঘাত প্রবণ এলাকাগুলোর যেসব বাসিন্দারা বাইরের এলাকায় গেছেন বিভিন্ন কাজে তাদেরকে ঘরে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আরাকান আর্মির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং বলেছেন, ‘যারা বাড়িঘর ছেড়ে দূরে থাকছেন তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য বাড়ি ফিরুন। জীবনের চেয়ে বড় আর কোনও কিছুই নয়। বেঁচে থাকলে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু অর্থ দিয়ে জীবন কিনতে পাওয়া যায় না।’
ভিডিওবার্তায় তিনি সংঘাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে চলাফেরা করার বিষয়ে সাধারণ নাগরিকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তার ভাষ্য, নারী ও বৃদ্ধদের একা একা থাকা উচিত নয়; আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা উচিত। তিনি সাধারণ আরাকানিদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহনে না চড়ারও পরামর্শ দেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহনে কোনও সাধারণ নাগরিক থাকা অবস্থায় আরাকান আর্মি হামলা চালালে মারা পড়তে পারেন তারা। আর এমন ঘটনা ঘটলে মিয়ানমার আর্মি পরবর্তীতে দাবি করবে, আরাকান আর্মি সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করে।
ভবিষ্যতেও আরাকান আর্মির পক্ষ থেকে সাধারণ নাগরিকদের প্রতি বার্তা পাঠানো হবে উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নি তুন অং বলেছেন, আরাকানিদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপপ্রচারমূলক বার্তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাতমাদাও ষড়যন্ত্র করে বিভ্রান্তিকর অনেক গুজব ছড়ায়।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও সংখ্যাগুরু বামারদের চেয়ে নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে ভিন্ন রাখাইনের আরাকানিরা। নিজেদের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকে সামনে আনতে চাওয়া মিয়ানমারের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত আরাকান আর্মি। আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি তুলে প্রায় এক দশক আগে শুরু হয় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আরাকনি গ্রামবাসীদের হতে হয়েছে বাস্তুচ্যুত। সম্প্রতি রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী উ নি পু আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযানের অনুমতি দিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জন্য সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নতুন ঘটনা নয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ লাখে। এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে।

/এএমএ/
সম্পর্কিত
সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদনের পথে থাইল্যান্ড
মস্কোয় কনসার্টে হামলা: প্রশ্নের মুখে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা
সুপেয় পানির অপচয়, বেঙ্গালুরুতে ২২ পরিবারকে জরিমানা
সর্বশেষ খবর
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
‘আ.লীগকে বর্জন করলেই অন্য পণ্য বর্জনের প্রয়োজন হয় না’
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
বিজিএপিএমইএ’র নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা, শাহরিয়ার নতুন প্যানেল নেতা
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!