কানাডার কুইবেকে মুসল্লিদের গুলি চালিয়ে হত্যার দায়ে কানাডীয় নাগরিক আলেক্সান্দ্রে বিসোনেত্তেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার রায় দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালে কানাডায় সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রহিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের মসজিদে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্তকে তাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে কানাডার কুইবেক অঙ্গরাজ্যের এক মসজিদে সদ্য নামাজ শেষ করা মুসল্লিরা যখন বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন ২৯ বছর বয়সী বিসোনেত্তে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে প্রাণ হারান ছয় জন। বাদী পক্ষের আইনজীবীরা ছয়টি হত্যাকাণ্ডের দায়ে তার ১৫০ বছরের কারাদণ্ডের আবেদন করেছিলেন, যাতে ১৫০ বছর সাজা খাটার আগে অভিযুক্ত প্যারোলে মুক্তি পেতে না পারে।
কিন্তু বিচারক ফ্র্যাঙ্কয়েস হুয়োট বলেছেন, এই দাবি যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি বিসোনেত্তেকে ৪০ বছর পর প্যারোলে মুক্তির সুযোগ অনুমোদন করেন। তখন অভিযুক্তের বয়স হবে প্রায় ৭০ বছর।
ওই সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারক তার রায়ে বলেছেন, এটি সন্ত্রাসী হামলা নয়। বরং অভিবাসীদের কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রদেশে দেখতে না চাওয়ার বর্ণবাদী মানসিকতার কারণে অভিযুক্ত হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তার আগে থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীনতা ছিল। আত্মহত্যা করতে চাওয়া ওই ব্যক্তি নারীবাদীদের ওপরও হামলা চালাতে চেয়েছিল।
বিচারক আরও মন্তব্য করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ১৫০ বছর কারাদণ্ডের সাজা দেওয়াকে নিষ্ঠুর বা অযথার্থ মনে করবে না। কিন্তু মনে রাখা দরকার, শাস্তি প্রদান প্রতিশোধমূলক হতে পারে না।’ এক পর্যায়ে তিনি বন্দিদের সংশোধনের বিষয়ে পদক্ষেপ জোরালো করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। ২০১৭ সালে কারাগারে কাজ করা এক সমাজকর্মীর কাছে বিসোনেত্তে মন্তব্য করেছিল, আরও বেশি লোক মারতে না পারায় তার দুঃখ হয়েছে।
‘স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার’ তথ্য মতে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কানাডায় মুসলমানবিদ্বেষী হামলার সংখ্যা ২৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালে সামগ্রিকভাবেই বিদ্বেষমূলক হামলার সংখ্যা বাড়তে দেখা গেছে। মুসলমানরা ছাড়াও এসব হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী হয়েছে ইহুদি, কৃষ্ণাঙ্গসহ অন্যান্যরা।