ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৫৭ আরোহীর মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিধ্বস্ত হওয়ার সময় বিমানটিতে অবস্থান করছিলো বিশ্বের অন্তত ৩৫টি দেশে নাগরিক। শোকে আচ্ছন্ন মানুষরা ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন পোস্ট দিচ্ছেন। স্বজনহারাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রবিবার (১০ মার্চ) সকাল পৌনে নয়টার দিকে ১৫৭ জন আরোহী নিয়ে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। আদ্দিস আবাবার ৬২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বিশোফটু শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয় এটি। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটের দিকে আদ্দিস আবাবার বোলে বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেছিল ফ্লাইট ইটি ৩০২। এর কয়েক মিনিট পরই (৮ টা ৪৪ মিনিট) নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানটির সব আরোহীই মারা গেছে। তবে বিমান বিধ্বস্তের কারণ এখনও জানা যায়নি।
বিধ্বস্ত বিমানের আরোহীদের মধ্যে অন্তত ৩৫টি দেশের নাগরিকরা ছিলেন। নিহতদের ৯ জন ইথিওপিয়ার নাগরিক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক টুইটার পোস্টে নিহতদের স্বজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার ইথিওপিয়ায় একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোক জানিয়ে যাচ্ছেন। হুসেইন জে. এল আমিন নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘ইথিওপিয়ার জনগণ এবং ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের বন্ধু ও স্বজনদের প্রতি শোক প্রকাশ করছি। সত্যিকার অর্থে কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি।’
১৯৯৬ সালে ইথিওপিয়ার স্বনামধন্য ফটো সাংবাদিক মো আমিন ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। রবিবার (১০ মার্চ) তার ছেলে সেলিম আমিনও নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেন। তবে এয়ারলাইন্সটির নিরাপত্তা রেকর্ডের প্রশংসা করেন তিনি।
My sincere condolences to all those who may have lost loved ones aboard #ET302 flying to #Kenya. I remember when I lost my father on #ET961 but that was no fault of the amazing @flyethiopian. ET is one of the safest and most efficient carriers in the world @PMEthiopia. pic.twitter.com/HVuuL2RN2g
— Salim Amin (@salimcamerapix) March 10, 2019
রবিবার সেলিম লিখেছেন, ‘ইটি৩০২ ফ্লাইটে করে কেনিয়া যাওয়ার পথে যারা জীবন হারিয়েছেন তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। ইটি৯৬১ ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় বাবাকে হারানোর কথা আমার মনে আছে। তবে তা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের ত্রুটি নয়।’ তিনি জানান, বাবা মো আমিনকে বহনকারী বিমানটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল এবং পরবর্তীতে তা সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
ইটি৩০২ ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারানো আরোহীদের একটা বড় অংশ কেনিয়ার নাগরিক। এ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩২ জন নাগরিককে হারিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে কেনিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব হুসেইন সোয়ালেহও রয়েছেন। মিসরে একটি আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলায় ম্যাচ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর নিজ দেশে ফিরছিলেন তিনি। কেনিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নিক মোয়েন্ডার টুইটারে লেখা হয়েছে: ‘ফুটবলের জন্য দুঃখের দিন।’
সোমবার (১১ মার্চ) কেনিয়ার নাইরোবিতে জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন, বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও আছেন। গুতেরেস বলেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। নিহতদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইথিওপিয়ায় আজ সকালে বিমান বিধ্বস্ত প্রাণহানির খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘের কর্মীরাসহ নিহতদের সবার পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি।’
Deeply saddened by the news this morning of the plane crash in Ethiopia, claiming the lives of all on board. My heartfelt condolences to the families and loved ones of all the victims — including our own @UN staff — who perished in this tragedy.
— António Guterres (@antonioguterres) March 10, 2019
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর পরিচালক ডেভিড বিজলিও জানিয়েছেন, তার সংস্থার কয়েকজন কর্মী ওই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হানিয়েছে। সহকর্মী নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি।
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কানাডার ১৮ জন নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় টুইটারে শোক জানিয়েছেন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি লিখেছেন: ‘আজ সকালে ইথিওপিয়া থেকে ভয়াবহ খবর পেয়েছি। নিহত কানাডীয়সহ ফ্লাইট ইটি৩০২ এ থাকা সকল আরোহী ও তাদের পরিবার-বন্ধু-প্রিয়জনদের জন্য শোক জানাচ্ছি।’
বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের মধ্যে আটজন ইতালীয় নাগরিক। ফ্রান্স সরকার জানিয়েছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আট ফরাসি নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া নিহতদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাত, জার্মানির পাঁচ ও সোমালিয়ার এক নাগরিক রয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইথিওপীয় বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়া জার্মানি ও সোমালিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়েছে।