X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্ককে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের হামলাকারী: এরদোয়ান

বিদেশ ডেস্ক
১৭ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৪আপডেট : ১৭ মার্চ ২০১৯, ২১:১৪

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্ককে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের দুই মসজিদে হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক। তুরস্কের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে হুমকিও দিয়েছে। শনিবার এক নির্বাচনি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে নিউ জিল্যান্ডের ওই হামলাকারীর তীব্র মুসলিমবিদ্বেষী ইশতেহারের ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন করেন। মসজিদে হামলার অস্পষ্ট করে দেওয়া ফুটেজও দেখান তিনি।

তুরস্ককে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের হামলাকারী: এরদোয়ান রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, ওই হামলাকারী সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, ইউরোপে তুর্কিদের কোনও ঠাঁই নেই। ইতোপূর্বে দুই দফায় সে তুরস্ক সফর করেছে। তার ওই সফর নিয়ে তদন্তকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তুর্কিতে কাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হবে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা ক্রস (খ্রিস্টান ধর্ম) ও ক্রিসেন্টের (ইসলাম) মধ্যে ফের একটি সংঘাত চাই না।

তিনি বলেন, নিউ জিল্যান্ডের ওই হামলাকারী বলেছে, সে ইউরোপের মাটি থেকে তুর্কি মুসলমানদের উৎখাত করতে চায়।

এরদোয়ান বলেন, ‘আমাদের ৪৯ জন ভাই-বোনকে শহীদ করা এই দুষ্ট লোক বলেছে, আমরা শুধু আনাতোলিয়ায় (তুরস্কের এশিয়া অংশ) থাকতে পারবো। আমার ইউরোপীয় অংশে যেতে পারবো না। এ নিয়ে চিন্তা করার তুমি কে?’

এর আগে শুক্রবার এরদোয়ান বলেন, এই বন্দুকধারী আমাদের দেশ, আমাদের জাতি এবং আমাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ার উচিত ইসলামবিদ্বেষের উত্থান রোধে ব্যবস্থা নেওয়া।

এরদোয়ান বলেন, ‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে অক্লান্ত শত্রুতা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। এই মুসলমানদের যে ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করা হতো, ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সীমান্ত ছাড়িয়ে তা গণহত্যায় রূপ নিয়েছে। এই হামলা প্রমাণ করেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। ইসলামভীতি কেমন বিকৃত ও খুনি মানসিকতার জন্ম দেয়, তা এর আগেও আমরা দেখেছি। দুনিয়াজুড়ে এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। এখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমাদের আরও বিপর্যয়ের খবর শুনতে হবে।’

মসজিদে হামলার আগে অনলাইনে ১৬ হাজার ৫০০ শব্দের একটি ইশতেহারে নৃশংস এ হামলার পেছনে নিজের বক্তব্য তুলে ধরে হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারান্ট। সেখানে মোটা দাগে উঠে আসে মুসলিমবিদ্বেষ, অভিবাসী বিদ্বেষ ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের মতো বিষয়গুলো। মুসলমানদের উসমানীয় খিলাফতের (বর্তমান তুরস্ক) বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের বিজয়ের কথাও উল্লেখ করেছে সে। বর্তমান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের মৃত্যুও কামনা করে হামলাকারী।

কথিত ইশতেহারে নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের এই নৃশংস খুনি দাবি করেছে, শ্বেতাঙ্গরা গণহত্যার শিকার এবং সে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘শ্বেতাঙ্গ পরিচয়ের নতুন প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে মুসলমানদের জন্য একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরিরও আহ্বান জানিয়েছে সে।

কথিত ইশতেহারে হামলাকারী নিজের সম্পর্কে বলেছে, ‘আমার ভাষার উৎস ইউরোপীয়। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ইউরোপীয়। আমার দার্শনিক অবস্থান ইউরোপীয়। আমার পরিচয়, আমি ইউরোপীয়। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমার রক্ত ইউরোপীয়।’ লেখক তার পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, সে একটি শ্রমজীবী শ্রেণির নিম্ন আয়ের পরিবারে বেড়ে উঠেছে। তার ভাষ্য, ‘আমি একটা সাধারণ পরিবার থেকে আসা সাধারণ এক শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, যে তার নিজ গোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বাবা-মা স্কটিশ-আইরিশ-ইংলিশ বংশোদ্ভূত। আমার একটা সাধারণ শৈশব কেটেছে, যেখানে বলার মতো কোনও ঘটনা নেই।’ তার দাবি, সে একজন ‘অন্তর্মুখী’ মানুষ, একজন ‘নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদী’ এবং ‘ফ্যাসিস্ট।’

ট্যারান্ট লিখেছে, এই হামলার পরিকল্পনা দুই বছর আগের। নিউ জিল্যান্ড হামলার স্থান হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল না। তিন মাস আগে হামলার জন্য নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চকে বেছে নেওয়া হয়। ‘আমি নিউ জিল্যান্ডে এসেছিলাম সাময়িক সময়ের জন্য, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ নিতে। কিন্তু এখানে এসে আমি আবিষ্কার করি, বিশ্বের অন্য যেকোনও ভালো টার্গেটের চেয়ে এটি কোনও অংশে কম নয়।’

এই অস্ট্রেলীয় খুনির ভাষায়, ‘আমি বার্তা দিতে চেয়েছিলাম যে দুনিয়ার কোনও স্থানই নিরাপদ নয়। আমি সংশ্লিষ্ট অস্ত্রটি এই কারণেই বেছে নিয়েছিলাম যেন ঘটনাটি ব্যাপক প্রচার পায়, মানুষের আলোচনায় ও সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পায়।’ ট্যারান্টের ব্যবহৃত অস্ত্রটি ছিল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বশেষ খবর
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
লোকসভা নির্বাচন: রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কট করলেন গ্রামবাসী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!