কানাডার কুইবেক প্রদেশ সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় পরিচয়সূচক জিনিস পরার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে শুধু কর্মঘণ্টার সময়। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এ বিষয়ে একটি আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই আইনের লক্ষ্য মুসলিম নারীদের বোরকা। ইহুদিরাও আইনটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, একই রকম আইন ২০০৪ সালে ফ্রান্সেও পাস হয়েছিল। সেখানে নেকাব, ক্রুশ চিহ্ন ও অন্যান্য ধর্মীয় পরিচয় বহনকারী জিনিসপত্র পরা নিষিদ্ধ হয়েছিল। কুইবেকের প্রস্তাবিত আইনে কোনও ধর্মের কথা আলাদা করে বলা হয়নি।
কানাডার কুইবেক প্রদেশে ক্ষমতায় রয়েছে ‘ডানপন্থী’ জোট ‘আভেনির কুইবেক’ (সিএকিউ)। অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও একটি ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিল তারা। আইনটি প্রস্তাবের পর কুইবেকের মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন, ‘এটি আমাদের মূল্যবোধকে উপস্থাপন করে এবং তা গুরুত্বপূর্ণ।’ কিন্তু উত্থাপিত আইনটি কার্যকর হলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের ‘মুখোমুখি’ দাঁড়াতে হবে তাদের। এ বছরেই কানাডায় কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে কুইবেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক স্থান হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যেই এই আইন পাসের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন।
কুইবেকে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষক, বিচারক, পুলিশ বাহিনীসহ কর্তৃত্ব রয়েছে এমন সরকারি চাকরিজীবীরা দায়িত্ব পালনকালে ধর্মীয় পরিচয়সূচক কোনও কিছু পরিধান করতে পারবেন না। তবে আইনে বর্তমানে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের এই বিধি থেকে রেহাই দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কুইবেকের সরকার একটি ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিতে বহুদিন ধরে চেষ্টা করছে। এ থেকেই সরকারি কর্মকর্তাদের ধর্মীয় পরিচয়সূচক জিনিসপত্র পরিধানে বিরত রাখার উদ্যোগ। দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, তারা চায় না সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা হিজাব বা ইহুদিদের ব্যবহার্য স্কালক্যাপ পরুক।
ইহুদিদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন বনাই ব্রিথ প্রস্তাবিত আইনটিকে ‘কুইবেকের বাসিন্দাদের মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। অন্যদিকে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস’ বলেছে, এই আইন পাস হলে তা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করবে এবং এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুসলিম নারীরা।
পাস হয়ে যাওয়ার পর আইনটি যাতে কোনও বাধার মুখে না পড়ে তা নিশ্চিতে কুইবেক প্রাদেশিক সরকার আইনের বিশেষ একটি ধারা ব্যবহার করছে, যার ব্যবহার খুবই বিরল। ওই ধারা অনুযায়ী, কুইবেক কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস অ্যান্ড ফ্রিডমে বর্ণিত বাধ্যবাধকতা পাঁচ বছরের জন্য উপেক্ষা করতে পারবে।
আগে একবার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ও ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিতে কুইবেকের সরকার নেকাবের মাধ্যমে পুরো মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করেছিল এমন সব ব্যক্তির জন্য যারা কোনও না কোনওভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন বা সরকারি সেবা গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে পাস করা আইনটি পরে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দেয় ২০১৮ সালের জুন মাসে। সেই আইনটির ভবিষ্যৎ এখনও অস্পষ্ট।