X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চমকে দিলেন মোদি, পাশে চাইলেন তৃণমূলসহ সব দলকে

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৩৯আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০২

ভারতীয় রাজনীতিতে চমকের শেষ বলে কিছু নেই। কল্পনা করুন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সব মানুষকে নির্বাচনি প্রচারণায় বিরোধিতার বদলের সহযোগিতার দৃঢ় বার্তা দিচ্ছেন, এমনকি তার সমালোচনাকারী পশ্চিমবঙ্গে মূখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই তালিকায় রয়েছেন!

চমকে দিলেন মোদি, পাশে চাইলেন তৃণমূলসহ সব দলকে

এই অকল্পনীয় ঘটনাই ঘটে গেছে! গত সপ্তাহে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) শীর্ষ মুখ মোদি তা করেছেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে মায়াবতী বা মমতার মতো নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে তার কোনও সমস্যা নাই।

তাৎপর্যপূর্ণ হলো তিনি বিরোধী শিবিরে এই বার্তা দিয়েছেন একেবারে সোজাসাপ্টাভাবে। সাধারণত সংবাদমাধ্যমে বিরল ছাড় দেওয়া এড়িয়ে চলেন তিনি। কিন্তু বিজেপি বিশ্বস্ত এই নেতা এবার জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের নিজের মত তুলে ধরলেন। তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হাইপ্রোফাইল (যিনি চ্যানেলটির মালিকও) ব্যক্তিটিও মোদির বক্তব্যে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন। যেমনটা হয়েছেন দর্শকরাও।

হতবাক সাক্ষাৎকার গ্রহীতা পুনরায় যাচাই করে নিলেন তিনি যা শুনছেন তা সত্যিই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কিনা! মোদি পুনরায় একই বক্তব্য দিলেন। সাক্ষাৎকার গ্রহীতা এবার অতিশয়োক্তি ও উচ্চ ডেসিবলে পরবর্তী প্রশ্ন প্রায় স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। কীভাবে মোদি ও বিজেপি এমনকি মমতার সঙ্গে কাজ করার চিন্তা করতে পারে যখন তিনি তার ও বিজেপির বিরুদ্ধে নিয়মিত বিষোদগার করে চলেছেন? প্রশ্নটি শেষ হতে না হতেই মোদি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচনি প্রচারণার সময় মানুষ অনেক কথা বলে। দলগুলো একে অন্যের বিরোধিতা করে। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে নেতারা নিশ্চিতভাবেই ঐক্যবদ্ধ হবেন।

কলকাতা ও দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন পরবর্তী বিজেপির মিত্রদের বেছে নিতে প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। এই নেত্রীই এর আগে বিজেপি পরিচালিত সরকারের মিত্র বা সমর্থক ছিলেন কেন্দ্রে ও উত্তর প্রদেশে মন্ত্রী হিসেবে। মমতার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক উষ্ণ ছিল। তেহেলকা কেলেঙ্কারির পর তিনি পদত্যাগ করেছিলেন কিন্তু বিজেপি বিজেপি তাকে অনুরোধ করেছিলো কেন্দ্রের মন্ত্রীত্ব না ছাড়ার জন্য। ওই কেলেঙ্কারিতে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি বাঙ্গারু লক্ষ্মণ ঘুষ নিচ্ছেন।

আবার উভয় দলই ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে বড় সুবিধা করে দিয়েছেন। উত্তর প্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনপূর্ব জোট বা আসন ভাগাভাগি করতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়ে। এমনকি মরিয়া কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে পিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রকে নির্বাচনি প্রচারণায় নিয়ে আসলেও সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) জোটের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না বলে ধারণা করছে। মুসলিম ও দলিতদের মধ্যে দৃঢ় ভিত্তি থাকা জোটটি অন্যান্য সম্প্রদায়ের সমর্থন নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।

স্পষ্টতই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আশঙ্কা করছে বিজেপি। কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হবে। আসন ভাগাভাগির মধ্যদিয়ে সমন্বিত বিরোধিতায় বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত হতো। কিন্তু এতে করে ভারতজুড়ে আবারও কংগ্রেসের উত্থান হতো। কিন্তু তৃণমূল ও বিএসপির মতো দলগুলো উত্তরপ্রদেশ ও বঙ্গতে নিজেদের আবদ্ধ রাখছে।
তবে এই পরিস্থিতি মমতা ও মায়াবতী উভয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিরোধী। উভয়েই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের জন্য আগ্রহী। বিজেপির বদলে কংগ্রেসকে সহযোগিতা কারও অগ্রাধিকারে নেই। মমতা বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হলেও মায়াবতী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে। লোকসভায় ২২ শতাংশ ভোট পেলেও ২০১৪ সালে কোনও আসন পায়নি তার দল। উভয়েই বর্তমান পরিস্থিতিকে দল ও নিজের ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারক বলে মনে করেন।
 এটা থেকে বিজেপির খুব ভালো ফায়দা হচ্ছে। যতক্ষণ কংগ্রেস পার্শ্বচরিত্র হিসেবে থাকছে বিএসপি বা তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে বিজেপির কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না। কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে সহযোগিতার জন্য বড় ধরনের আর্থিক ছাড় ও মন্ত্রীত্ব দেওয়ার কৌশলে এই কাজ হতে পারে। কারণ কংগ্রেসই একমাত্র দল যে জাতীয়ভাবে বিজেপিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।
প্রশ্ন ওঠছে, বিএসপি বা তৃণমূল কি ইতিবাচকভাবে নেবে? এখন পর্যন্ত মোদির অনুভূতির বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিজেপিকে তাদের সমর্থন দেওয়ার সম্ভাব্যতাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিএসপি নেতা মায়াবতী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অনেক আক্রমণাত্মক। এবারের প্রচারণায় কংগ্রেসের সাথে আসন ভাগাভাগির প্রস্তাব বারবার নাকচ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিজেপির কম সমালোচনা করছেন। আর মমতার ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে বিজেপির সঙ্গে তার কাজ করতে সমস্যা নাই। যদি দলটির নেতৃত্বে থাকেন রাজনাথ সিং, অরুণ জেটলি, নিতিন গড়কারি বা সুষমা স্বরাজ। বিজেপি নেতা আদভানি বা প্রয়াত অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রতি রয়েছে মমতার অঢেল শ্রদ্ধা। তিনি বিজেপির বিরোধিতা করেন না। তিনি ঘৃণা করেন নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদিকে।
এক বিশ্লেষক মনে কয়ে দেন যে, মোদির অনুভূতির বিষয়ে যদি উভয় দলও স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও (যদিও এখন পর্যন্ত করেনি) অনেক বিশ্লেষক তাদের প্রতিক্রিয়ার আক্ষরিক অর্থ খুঁজবেন। বিশেষ কোনও ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের পূর্বানুমিত প্রাথমিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, অস্বীকার ইতিবাচকতায় রূপ নেয়।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ