X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিম বঙ্গে লোকসভা নির্বাচন: আংশিক সফল নির্বাচন কমিশনের কৌশল

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:০৩আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:০৬

ভারতের সাধারণ নির্বাচনের প্রথম দিনে পশ্চিম বঙ্গের দুইটি লোকসভা আসনের (কুচবিহার ও আলিপুরদুয়ার) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ভোটগ্রহণে কলকাতার বিখ্যাত স্মৃতিস্থম্ভের মতো একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ২০১৮ সালের কলঙ্কিত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো একপাক্ষিক হবে না এবারের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) পুলিশের নিস্কৃয়তার সুযোগে সব বিরোধীদের তাড়িয়ে দিয়ে রেকর্ড জয় পায়। প্রায় ৩৪ শতাংশ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় তৃণমূল প্রার্থীরা, বিরোধী প্রার্থীরা কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে পর্যন্ত উপস্থিত হতে পারেনি।

১১ এপ্রিল শুরু হয়েছে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ

তবে ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শেষে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় পক্ষের নেতাদের খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (সিইসি) নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। প্রথম দফা ভোটগ্রহণ শেষে এটা স্পষ্ট যে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), ন্যাশনাল কংগ্রেস (আইএনসি) ও বামফ্রন্টের (এলএফ) মতো বড় বিরোধী দলগুলো অনেক বেশি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাবে। এসব দলগুলো তাদের সমর্থকদের ভোট দিতে উৎসাহ দেওয়ার সুযোগ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে পশ্চিম বঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে এখনই অভিনন্দন জানানো অকালপক্ক সিদ্ধান্ত হবে। এটাকে নির্বাচন কমিশনের আংশিক সফলতা বলা যায়। বিচ্ছিন্ন ঘটনা যে একেবারেই ঘটেনি তা নয়। ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় নির্বাচন কমিশনে প্রায় ৪৪০টি অভিযোগ জমা হয়। অন্য ১৯টি রাজ্যের তুলনায় পশ্চিম বঙ্গে এটা সন্দেহজনক রেকর্ড। অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে ছিল এজেন্ট ও ভোটারদের বাধা দেওয়া, আগ্রাসী মোটরসাইকেল আরোহীদের চলাচল, অবৈধ জমায়েত, ভোটগ্রহণ মেশিন ঠিকমতো কাজ না করা ইত্যাদি। এর বেশিরভাগ অভিযোগই ছিল ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ৪০০টির মতো ঘটনাস্থলেই নিস্পত্তি করা যেত। একটি জায়গায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীকে রাজ্যের পুলিশ সদস্যদের ভোটগ্রহণ বুথ থেকে বের করে দিতে দেখা গেছে। ভারতের অন্য কোথাও এমন ঘটনা দেখা যায়নি।

গুরুত্বপূর্ণ হলো যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সেই সব বুথ থেকেই অভিযোগ এসেছে যেখানে রাজ্য পুলিশ পাহারায় ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো আধা সামরিক বাহিনী যেসব কেন্দ্রের পাহারায় ছিল সেসব বুথ থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি। বিরোধী দলগুলো দুঃখ করতে পারে যে কেন্দ্রীয় সরকার কেবলমাত্র ৪০ শতাংশ বুথে আধা সামরিক বাহিনী পাঠাতে পেরেছে। প্রাথমিকভাবে দিল্লি ৬৫ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী পাঠাতে সম্মত হয়। পরে উত্তেজনা অব্যাহত বাড়ায় এই সংখ্যা ৮৩-তে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। যাই হোক আগের তুলনায় পশ্চিম বঙ্গের এবারের ভোটগ্রহণ অনেক বেশি সমস্যামুক্ত হলেও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বা নির্ভুল নির্বাচন থেকে অনেক দূরে ছিল।

সব মিলিয়ে ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে প্রথম দিনে ৯১টি আসনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৩ মে ফলাফল ঘোষিত হবে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অংশে নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। অন্ধ্র প্রদেশে নির্বাচনি সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে দুই জন। উত্তর প্রদেশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।

তবে কুচবিহার ও আলিপুরদুয়ার পর্যবেক্ষকদের মনোযোগ বেশি কেড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয় দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের ৪২টি আসনের সবকটিতেই যেন জয় নিশ্চিত করা হয়। উত্তর বঙ্গের মন্ত্রী রবিন্দ্রনাথ ঘোষ ভোটের দিন ভোরের দিকেই বিজয় নিশ্চিতে বেরিয়ে পড়েন। দুটি আসনেই গত কয়েক বছরে বড় ধরণের উপস্থিতি জানান দিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশিরভাগ জেলাতেই বিরোধী দলের কর্মীদের শারিরীকভাবে আঘাত করা হলেও, এবারের লোকসভা নির্বাচনের দিনে ভোট দিতে ভোটারদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ (সিআরপি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর তৎপরতায় তৃণমূলের মোটরসাইকেল আরোহীরা তাদের গতিবিধি আগের তুলনায় সীমিত করতে বাধ্য হয়। বিজেপির নির্বাচনি এজেন্টরা আগের তুলনায় অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পেরেছে। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কোনও কোনও স্থানে তাদের কাজে হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালিয়েছে। তবে প্যারা মিলিটারি বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থায়। সিসিটিভি, গোপন ক্যামেরা, এবং মোবাইল ফোনে দিল্লি ও কলকাতার কর্মকর্তাদের সময়ে সময়ে পর্যবেক্ষণ বড় কোনও দুর্ঘটনা এড়াতে সাহায্য করেছে।

বড় দাগে অর্জন: রাজ্য পুলিশের পাহারায় থাকা বুথগুলো বাদে তৃনমূল কর্মীরা তাদের পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার সুযোগ বেশি পায়নি। ভোটগ্রহণের সময় বাড়ার সাথে সাথে হতাশা বাড়তে থাকে ভোটগ্রহণ তদারকিতে বের হওয়া তৃণমূলের মন্ত্রীর রবিন্দ্রনাথ ঘোষের। প্রথমেই তিনি বিএসএফ কর্মীদের একহাত নেন। বলেন সীমান্ত ছেড়ে এসে ভোটারদের হয়রানি করছে তারা। কিছুক্ষণ পরে ভোটগ্রহণ মেশিন কাজ করছে না অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনকে একহাত নেন। তবে এসব মেশিন বিকল হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তা ঠিক করে ফেলে একটি স্পেশাল টিম।

অন্যদিকে রবিন্দ্রনাথ ঘোষকে দেখা যায় মোটরসাইকেল আরোহীদের বেশি সংখ্যায় একসাথে না ঘোরার পরামর্শ দিতে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘোরাঘুরির পরামর্শ দেন তিনি। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, এসব আরোহীরা কোন দলের? ঘোষ তাড়াতাড়ি উত্তর দেন, আমিও তাদের কাছে এটাই জানতে চাইছিলাম। কিন্তু ঘোষ জানতেন না তার আগের নির্দেশনার রেকর্ড করা হয়ে গেছে।

নয়টার দিকে কুচবিহারে ফোনকলের যে ঘটনা সামনে এসেছে তাতে তৃণমূল নেতৃত্ব খুশি হতে পারেনি। দলের প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যয় সেখানকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মত প্রকাশ করতে গিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে তৃণমূলের অভ্যন্তরেই অনেক নেতা খুশি হতে পারেননি। কেবলমাত্র দুটি আসনেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে আর তাতেই যে পরিমাণ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তাতে সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

/জেজে/
সম্পর্কিত
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান