X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ. আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যান্ডেলার দল

বিদেশ ডেস্ক
০৮ মে ২০১৯, ২১:২৫আপডেট : ০৮ মে ২০১৯, ২২:৪১

বর্ণবাদী যুগপর্ব অবসানের ২৫ বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ষষ্ঠ গণতান্ত্রিক জাতীয় নির্বাচন। বিগত ৫টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এই ২৫ বছর দেশ শাসন করেছে বর্ণবাদবিরোধী লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। অর্ধশতাব্দী কালজুড়ে দলটির নেতৃত্ব ছিল নেলসন ম্যান্ডেলার হাতে। কৃষ্ণাঙ্গরা দেশের শাসনক্ষমতায় তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়ায় খুশি হলেও এবারের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এএনসি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, নির্বাচনের মূল ইস্যু হয়ে উঠেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ভঙ্গুর অর্থনীতি, বেকারত্ব ও ভূমি সংস্কারের প্রশ্ন। দ. আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যান্ডেলার দল

১৯৫২ সালে ম্যান্ডেলার হাত ধরে শুরু হয় এএনসির বর্ণবাদবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের, প্রণীত হয় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি ‘মুক্তি সনদ’র। ১৯৬২ সালে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িত থাকাকালে গ্রেফতার হয়ে টানা ২৭টি বছর বর্ণবাদী সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার পর বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে ম্যান্ডেলার ফলপ্রসূ শান্তি আলোচনার সুবাদে ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কৃষ্ণাঙ্গ ম্যান্ডেলা।

ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চাননি ম্যান্ডেলা, এএনসি’র পক্ষে এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। এরপরও ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৯ ও ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয় পেয়ে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকতে সমর্থ হয় তার দল। তবে বর্ণবাদী যুগপর্বের অবসান হলেও বিগত ২৫ বছরে সে দেশে গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে খুব সন্তোষজনক বলার সুযোগ নেই। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থেকে মুক্তি মেলেনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। এর সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে দলটির নেতৃস্থানীয়দের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। সবমিলে এএনসির সমর্থন কমে আসায় এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তার শাসন ক্ষমতায় ফেরার প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (ডিএ) ও ইকোনোমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ) নামের রাজনৈতিক দল দুইটি এএনসির ক্ষমতায় ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিবিসির-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৭ শতাংশ বেকারত্বের দেশটিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত জটিলতার জবাব দিতে প্রস্তুত দেশের তরুণ প্রজন্ম। দ. আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যান্ডেলার দল

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাতটা (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা) থেকে রাত নয়টা (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ১টা) পযন্ত পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দেবে দেশের নাগরিকেরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে, সময় শেষ হওয়ার পরও তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। ব্যালট পেপারে থাকা দলগুলোর মধ্য থেকে একটি দল বেছে নেবেন ভোটাররা। প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলগুলো ৪০০ সদস্যকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য মনোনীত করবে। ওই আইন প্রণেতারা পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।

যারা এখনও সুদীর্ঘ বর্ণবাদী শাসনের অভিঘাত আর ক্ষতচিহ্ন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, তাদের কারও কারও কাছে কৃষ্ণাঙ্গদের শাসন ক্ষমতায় থাকাটাই আনন্দের। জোহানেসবার্গের সোয়েটোতে ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন ৯০ বছরের ইসাও জোয়ায়েন। বর্ণবাদী নিষ্পেষণের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা জোয়ায়েন বিবিসিকে বলেন, কালো মানুষেরা এখন আমাদের দেশ চালাচ্ছে আমি সেটাই উদযাপন করছি। তবে সবার বাস্তবতা জোয়ায়েনের মতো নয়। নির্মাণকর্মী থাবো মাখেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি এএনসির সদস্য ছিলাম কিন্তু এবার আমি তাদের ভোট দেবো না। তাদের নাড়া খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। যেভাবে তারা দেশ চালিয়েছে, রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহার করেছে, তারা নৈতিকতা হারিয়েছে’।   দ. আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যান্ডেলার দল

এক তরুণ ভোটার বলেন তার ভবিষ্যত চাকুরির চিন্তা তার মাথায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যে চাকরি চাই তা পাওয়া নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী হতে পারছি না’।

ভোটারদের অনীহা নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সর্বোচ্চ দুই কোটি ৬০ লাখেরও বেশি নিবন্ধিত ভোটার থাকলেও স্থানীয় জরিপকারীদের মতে ৩০ বছরের কম বয়সী আরও প্রায় ৬০ লাখ মানুষ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়নি।

১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সালের আগ পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গদের অগ্রাধিকারভিত্তিক আইন ছিল দ. আফ্রিকায়। বর্ণবাদী যুগের অবসান হলেও এখন পর্যন্ত দেশটিতে ভূমির মালিকানা বিতর্কিত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরাই এখনও দেশটিতে তুলনামূলক বেশি জমির মালিক। মালিকানার এই অবস্থানের পরিবর্তনের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ইএফএফ। জোহানেসবার্গ থেকে বিবিসি’র সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিং বলেছেন দলটির অবস্থানের কারণে ভূমির মালিকানা পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে এএনসি। দ্রুত কালোদের হাতে ভুমির মালিকানা তুলে দিতে গিয়ে ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হয়েছে শাসক দলটি। মূল বিরোধী দল ডিএ বলছে তারা এমন প্রক্রিয়ার ভূমি সংস্কারে বিশ্বাস করে না যেখানে একজনের কাছ থেকে ভূমি নিয়ে অন্য জনের হাতে দিয়ে দেওয়ার দরকার রয়েছে। এর পরিবর্তে দলটি বাজেটে ভূমি সংস্কার এবং অব্যবহৃত সরকারি ভূমি ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দ. আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন, চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যান্ডেলার দল

নির্বাচনে অন্য ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে পানি, আবাসন এবং বিদ্যুতের মতো মৌলিক সেবাগুলোর করুণ অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ এবং সহিংস অপরাধ নিয়ে ক্ষোভ। মতামত জরিপের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৫০ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেতে পারে এএনসি আর ডিএ পেতে পারে ২০ শতাংশ ভোট। মতামত জরিপের এই ফল সত্য হলে এএনসির সমর্থন বেশ কমে যাবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

বিদ্যমান বৈষম্য ছাড়াও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার এএনসি জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ইস্যুতে কঠোর মনোভাবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বছর ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। কোনও কোনও ভোটার এখনও দলটিকে সহায়তা করে যাচ্ছেন কারণ তিনি তার পূর্বসূরি জ্যাকব জুমার অধীনে হওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রেখেছেন। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়া জুমা কোনও ধরণের অপরাধের করার কথা অস্বীকার করেছেন।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
আটলান্টিক মহাসাগরে পাওয়া ৯ মরদেহের পরিচয় নিয়ে যা বললো ব্রাজিল
সর্বশেষ খবর
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
নির্দেশের পরও হল ত্যাগ করছেন না চুয়েট শিক্ষার্থীরা, বাসে আগুন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা