X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কে এই জোশুয়া ওং?

বিদেশ ডেস্ক
১৮ জুন ২০১৯, ১৩:১৭আপডেট : ১৮ জুন ২০১৯, ২৩:০৪

জোশুয়া ওং হংকংয়ের ২২ বছর বয়সী এক ছাত্র। তিনি হংকংয়ের উত্তাল বিক্ষোভের একজন কেন্দ্রীয় আন্দোলনকারী। সোমবার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। কারামুক্ত হওয়ার পর জানান, বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন বিক্ষোভে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। এই বিলে অপরাধীদের চীনের কাছে প্রত্যর্পণের বিধান রয়েছে। এই বিলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হংকংয়ের রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ মানুষ। উত্তাল গণবিক্ষোভের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন অঞ্চলটির চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যাম। বিক্ষোভের তীব্রতায় বিতর্কিত বিলটি স্থগিত করে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। তবে এখনই রাজপথ ছাড়তে রাজি নন হংকংয়ের বাসিন্দারা। তারা অঞ্চলটির চীনপন্থী শাসকের পদত্যাগ চান। হংকংয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কে এই জোশুয়া ওং?

২০১৪ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন যা আমব্রেলা মুভমেন্ট হিসেবে পরিচিত হয় সেই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন জোশুয়া ওং। সেই আন্দোলনে দাবি ছিল, চীনের চাপিয়ে দেওয়া নেতার বদলে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে হংকং-এর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। জোশুয়া ওং এবং অন্যান্য ছাত্র নেতারা সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। তখন ৭৯ দিন ধরে হাজার হাজার মানুষ হংকং-এর কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক সড়কে ক্যাম্প গেঁড়ে বসে এবং শহরটি স্থবির হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের অনেককে পরে ‘বেআইনি সমাবেশের’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে ওং-কে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে দুইটি আলাদা কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সাজার মেয়াদ কমিয়ে দিলে গত ১৭ জুন তিনি মুক্তি পান। সোমবার কারাগার ছাড়ার পরই হংকং-এর চীনপন্থী শাসক ক্যারি ল্যামের পদত্যাগের দাবি তুলে জোশুয়া ওং বলেন, ক্যারি ল্যামকে সরে যেতে হবে। সে হংকং-এর নেতা হওয়ার উপযুক্ত নয়।

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কথিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ঢেউ ২০১৪ সালের আন্দোলনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। জোশুয়া ওং বলেন, জোরালো কণ্ঠে আমাদের অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরার জন্য এটাই উপযুক্ত সময়। হংকংয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কে এই জোশুয়া ওং?

তার মতে, এই বিলের মাধ্যমে বেইজিং হংকং-এর বাসিন্দাদের মৌলিক মানবিকারকে পদদলিত করার চেষ্টা করেছে। তার ভাষায়, আমি নাগরিক অবাধ্যতা এবং যে কোনও ধরনের সরাসরি অ্যাকশন সমর্থন করি। কারণ এই প্রত্যর্পণ আইনের সংশোধন আমাদের মৌলিক মানবিক অধিকারকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

যখন নাগরিকরা নির্দিষ্ট কিছু আইন মানতে অস্বীকৃতি জানান তখন সে পরিস্থিতিতে বোঝানো হয় সিভিল ডিজওবিডিয়েন্ট হিসেবে।

বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে জোশুয়া ওং বলেন, আমাদের দাবি এই আইনের সাময়িক স্থগিতাদেশের পরিবর্তে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার: আদৌ কোনও প্রত্যর্পণ আইন নয়। তিনি বলেন, আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে নাগরিক আইন অমান্য করা এবং সরাসরি অ্যাকশনের মধ্য দিয়ে পুরো দুনিয়াকে বোঝানো যে, হংকং এর মানুষ মুখ বুজে থাকবে না। কর্তৃপক্ষের ধরপাকড় অভিযান এই বিক্ষোভকারীদের থামিয়ে রাখতে পারবে না।

জোশুয়া ওং বলেন, পুলিশ যখন হংকং-এ টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে ছোড়ে কিংবা কোন আন্দোলনকারীকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করে তখন তা একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়। আর তা হচ্ছে শাসকগোষ্ঠী সমগ্র একটি নাগরিক প্রজন্মকে সাধারণ বাসিন্দা থেকে বিদ্রোহী হিসেবে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদেরকে দাঙ্গাবাজ হিসেবে অভিহিত করায় তীব্র সমালোচনা করেছেন জোশুয়া ওং। তিনি বলেন, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেছে। এমনকি ক্যারি ল্যাম গণবিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা তাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। গত কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ ছিল আইনের প্রতি নাগরিক অবাধ্যতা, দাঙ্গা নয়। হংকংয়ে বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কে এই জোশুয়া ওং?

হংকং-এর সামনে এখন কী?

আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জোশুয়া ওং আরও মানুষের সমাগমের মাধ্যমে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হংকং-এর চীনপন্থী শাসকের ওপর চাপ বাড়াবেন। বিবিসি-কে তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে আমরা মূল্য দিচ্ছি পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাসের মোকাবিলা করে, এমনকি রক্ত দিয়ে। আমার বিশ্বাস এখনও পর্যন্ত যে সমাবেশ হয়েছে তা সবচেয়ে বিশাল বলা যাবে না। ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ রাজপথে নেমে আসবেন। হংকং-এর জন্য চূড়ান্ত সমাধান হচ্ছে, এখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নেতা নির্বাচনের অধিকার তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এই গণতান্ত্রিক দাবিতেই আমরা লড়াই করছি। আয়োজকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি বিক্ষোভকারী। এই আন্দোলন ২০১৪ সালের আমব্রেলা মুভমেন্টকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠে।

হংকং ও চীনের সম্পর্ক

১৯৯৭ সালে চীনের কাছে সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ১৮৪১ সাল থেকে ব্রিটিশ কলোনি ছিল হংকং। বর্তমানে ‘এক দেশ দুই পদ্ধতি’ নীতির অধীনে এটি চীনের অংশ। অঞ্চলটির বেশিরভাগ মানুষ জাতিগতভাবে চীনা বংশোদ্ভূত। চীনের মূল ভূখণ্ডে নেই; এমন স্বাধীনতা হংকং এর জনগণ এখনও উপভোগ করছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই স্বাধীনতা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, প্রত্যর্পণ বিলটি পাশ হলে হংকং পরিণত হবে আরেকটি আবদ্ধ চীনা নগরে। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
সর্বশেষ খবর
মা হারালেন বেবী নাজনীন
মা হারালেন বেবী নাজনীন
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৬১ হাজারের বেশি আবেদনএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা
দুই বাসের রেষারেষিতে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত
দুই বাসের রেষারেষিতে ট্রাফিক কনস্টেবল আহত
কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে: ভূমিমন্ত্রী
কৃষি জমি রক্ষায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে: ভূমিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট