X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুযোগ চান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

অদিতি খান্না, যুক্তরাজ্য
২৭ জুন ২০১৯, ১৬:১৯আপডেট : ২৭ জুন ২০১৯, ১৮:১৪

যুক্তরাজ্যে ভিসা সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় (টিওইআইসি) প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত বহু বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেখানে বসবাসের অনুমতি চেয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদকে একটি চিঠি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দেওয়া ওই চিঠিতে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য ব্রিটেনে থাকার অনুমতি চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

নিজেদের নির্দোষ প্রমাণে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুযোগ চান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ২০১৪ সালে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ব্রিটিশ কলেজগুলোতে টেস্ট অব ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন (টিওইআইসি) পরীক্ষায় প্রতারণার কিছু চিত্র উঠে আসে। এ ঘটনায় তদন্তে নামে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা ৩৩ হাজার ৭২৫টি পরীক্ষার ফল অবৈধ বা অকার্যকর ঘোষণা করে। এছাড়া ২২ হাজার ৬৯৪টি পরীক্ষার ফল প্রশ্নবিদ্ধ বলে সিদ্ধান্ত দেয়। যাদের ফল প্রশ্নবিদ্ধ ছিল তাদের রিভিউ’র সুযোগ দেওয়া হলেও অন্যদের কোর্স বাতিল করতে বলা হয়। এমনকি অনেককে স্বদেশে ফেরতও পাঠানো হয়। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরব হয়ে ওঠে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা ব্রিটিশ সংগঠন মাইগ্রেন্ট ভয়েস। তাদের তৎপরতার জেরে গত মাসে এ ইস্যুতে তদন্ত শুরু করে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অডিট অফিস।

চিঠিতে লেখা ছিল, ‘২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের মতো হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ভিসা সুবিধা কেড়ে নেয়, আমাদের অধিকার কেড়ে নেয়। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমরা ইরেজি পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছি। আমরা নির্দোষ, কিন্তু সেটা প্রমাণের কোনও সুযোগ সরকার আমাদের দেয়নি। পাঁচ বছর ধরে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছি আমরা।’

চিঠিতে সাজিদ জাভিদকে উদ্দেশ করে আরও বলা হয়, ‘আপনি এমন একটি দফতরের নেতৃত্ব দেন, যারা আমাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিয়েছে। তারা আমাদের প্রতারক বলছে, সারা জীবন আমাদের এই অপমান সহ্য করতে হবে। অথচ তাদের যুক্তির পক্ষে কোনও প্রমাণই দেখায়নি তারা।’

গত মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অর্থায়নে পরিচালিত যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অডিট অফিসের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টিওইআইসি প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত বহু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের কাজে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতর। সে কারণে ভুল করে অনেক নিরপরাধ শিক্ষার্থীর ভিসাও বাতিল হয়েছে।

সাজিদ জাভিদ আগেই বলেছিলেন, তিনি এই কেলেঙ্কারি সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি ও আলামত খতিয়ে দেখছেন। এ বিষয়ে হাউস অব কমন্সে ভাষণও দেবেন তিনি।

মাইগ্রেন্ট ভয়েসের পরিচালক নাজেক রামাদান বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাই যেন তিনি শিক্ষার্থীদের কথা শুনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। আর এই ঘোষণায় দেরি করাও উচিত হবে না। তিনি বলেন, এই শিক্ষার্থীরা প্রতিটি দিন উদ্বেগের সঙ্গে কাটায়। তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। অনেকে আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র দফতর যে আচরণ করছে তাতে ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা হাস্যরসে পরিণত হয়েছে।

২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থার জালিয়াতি মনোযোগ আকর্ষণ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক ডকুমেন্টারি। এই জালিয়াতিতে ইংরেজি ভাষা পরীক্ষায় ব্যাপক জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কথা উঠে আসে। জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র দফতর শিক্ষার্থী ভিসা প্রত্যাহার করে নেয়। তবে উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে জনগণ এবং পার্লামেন্টে গভীর তদন্তের আওতায় আসে।’

২০১৯ সালের মার্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, টিওইআইসি পরীক্ষা নেওয়া ১১ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর তারা ব্রিটেন ছেড়ে চলে গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনের পর ২০১৪ সালের এপ্রিলে স্বেচ্ছায় ব্রিটেন ছেড়ে যায় প্রায় সাত হাজার ২০০ জন, জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় হাজার ৫০০ জনকে আর প্রায় ৪০০ জনকে আবার যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তবে ন্যাশনাল অডিট অফিসের প্রতিবেদন বলছে, এই সংখ্যা ঠিক নাও হতে পারে।

হাউস অব কমন্সের পাবলিক অ্যাকাউন্ট বিষয়ক কমিটির প্রধান মেগ হিলার বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নির্দোষদের খুঁজে বের করার কোনও চেষ্টাই করেনি স্বরাষ্ট্র দফতর। এমনও হতে পারে তারা নিরপরাধ অনেককে যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা প্রতারণা করেছেন এবং যারা করেনি তাদের সঙ্গে আচরণ ঠিক আছে কিনা তা বের করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত স্বরাষ্ট্র দফতরের।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতারণায় আশ্রয় নেওয়া সবাই প্রাইভেট কলেজের শিক্ষার্থী। এটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তবে পরবর্তী ঘোষণার কোনও সময়সীমা জানানো হয়নি।

/এমএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
সর্বশেষ খবর
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা