X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও থেমে নেই লিবীয়দের জীবন

বিদেশ ডেস্ক
০৩ জুলাই ২০১৯, ১৭:২১আপডেট : ০৩ জুলাই ২০১৯, ১৭:২২

ভয়াবহ যুদ্ধের একদিন পরও থমথমে অবস্থা কাটেনি লিবিয়ার গারয়িন শহরের। শহরটির রাস্তার পাশে এখনও ভস্ম হয়ে যাওয়া গাড়ি পড়ে আছে। তবুও থেমে নেই সেখানকার জীবন। এই বিভীষিকার মাঝেও জীবিকার আশায় কয়েকটি দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। আগের রাতেই ড্রোন থেকে ফেলা বোমার মাঝেই ফসল তোলার চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। 

যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও থেমে নেই লিবীয়দের জীবন

জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেল-সমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ঐ ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত।

গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় চুক্তির সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়।  তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে।  পশ্চিমাঞ্চলে জিনএনএ’র কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ’র দখলে। গত এপ্রিল থেকে এ বাহিনী লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ওই বাহিনী।

ত্রিপোলির পশ্চিমাঞ্চলীয় বাহিনীর সেনারা জানান, গত সপ্তাহে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি ঘিরে চলা যুদ্ধে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসতে পারতো। তিন মাস আগে হামলা চালানো পূবাঞ্চলীয় বাহিনীর সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। সোমবার ত্রিপোলির বিমানবন্দরসহ একাধিক স্থানে হামলার হুমকি দেয় তারা।

বুধবার জেনারেল খলিফা হাফতার নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কাছ থেকে ঘারইয়ান শহর পুনরুদ্ধান করে জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার। গর্ভানমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ)র সেনারা জানান তারা ঘারিয়ানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে।  সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধে ৯ জন সেনা নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দুইপক্ষের জন্যই এই লড়াই শুধু একটি শহরের লড়াই নয়, এটি লিবিয়ার ভবিষ্যতের জন্য লড়াই। পশ্চিমাবাহিনী জিতে গেলে লিবিয়া বিভক্তই থাকবে এবং ধীরে ধীরে কূটনীতি ও নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় আসতে পারে। আর পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনীর জয়ে লিবিয়ায় রচিত হতে পারে নতুন যুগ। 

ত্রিপোলির কেন্দ্রের একটি বাজারের দোকান মালিকরা জানান, শহরে এখন আগের চেয়ে জনসংখ্যা বেশি। কিন্তু যুদ্ধের পর থেকে দারিদ্র্য আর শঙ্কাও বেড়ে গেছে। যুদ্ধের তিন মাসেই প্রাণ হারিয়েছে ৬৫০ জন আর ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ৯৪ হাজার মানুষ। ক্ষমতা কার কাছে যাওয়া উচিত তা নিয়ে দ্বিধায় এই ব্যবসায়ীরাও। তবে তাদের সবারই আশা এই আট বছরের যুদ্ধ, জাতীয় বিভেদ ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন বন্ধ হবে।

আব্দুল্লাহ নামে এক জুতার দোকান ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ভীত। কিন্তু যুদ্ধ আমাদের হাতে নেই। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। কিন্তু এখন কি চাই, তা আমরা জানি না।

প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। চলতি বছরের এপ্রিল হাফতার ত্রিপোলি দখলের ঘোষণা দিল যুদ্ধ শুরু হয়। তাদের জবাব দিতে থাকে জিএনএ সরকার। এখন পর্যন্ত কোনও পক্ষের মধ্যেই হার মানার কোনও লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না।  গত সপ্তাহে জিএনএ’র দখলে নেওয়া ঘারইয়ান শহরটি এপ্রিলেও হাফতারের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিলো। সেখান থেকে ত্রিপোলিতে হামলা চালাতো তারা।

ত্রিপোলির ওই বাজারের কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, একজন নেতার হাতে দেশ থাকলেই ভালো। ২০১১ সালে গাদ্দাফির উৎখাতের আগে জীবন অনেক সহজ ছিলো। মোহাম্মদ বলেন, আগে সবকিছু স্থিতিশীল ও নিরাপদ ছিলো। তবে তিনি কোনও নির্দিষ্ট নেতার কথা উল্লেখ করেননি।

ঘারইয়ানের আরেক বাসিন্দা সাদ্দাম আব্দুল ঘানি ঘাজোই বলেন, তিনি গাদ্দাফির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লড়াই করেছেন। এই লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি। হাফতারের বাহিনী যখন শহরে আসে তখন তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঘর ছেড়েছিলাম কারণ আমি আমার শহরকে স্বাধীন করতে চাই। হাফতার না যাওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো।

লিবীয়দের বেশিরভাগের সমর্থন এখন জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার (জিএনএ) এবং হাফতার বাহিনী (এলএনএ)র মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থন খুব সরল প্রক্রিয়া নয়। লিবীয় জনগণের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক আনুগত্য রয়েছে। স্থানীয় নেতারাই অনেক সময় মূল সরকারি নেতাদের চেয়ে বেশি মানুষের নেতৃত্ব দেয়।

ত্রিপোলির বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। তুরস্ক, ইতালি ও ব্রিটেন জিএনএ’কে সমর্থন দিচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে জিএনএ’র সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু এপ্রিলে হাফতারের দখলের এক সপ্তাহ পরেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপার ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন। এরপর আবার পররাষ্ট্র দফতর ত্রিপোলি সরকারের প্রতি সমর্থনের ব্যাপারটি পুনর্ব্যক্ত করে।

জিএনএন সেনা ইসাম আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি লিবিয়ায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানে হাফতারের সঙ্গে একযোগে লড়াই করেছেন। কিন্তু কমকর্তাদের দেওয়া জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা যখন তার ভালো লাগেনি তখন তিনি ওই গ্রুপ ছেড়ে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে আমাদের লিবিয়াকে পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছি। আমরা ভাবতাম তিনি লিবিয়ার জন্য নতুন বাহিনী গড়ে তুলছেন। পরে বুঝতে পারি তিনি আসলে নিজের জন্যই নতুন বাহিনী গড়ে তুলেছেন।

 

 

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
নাইজেরিয়ায় বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার, পালালো শতাধিক বন্দি
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
সর্বশেষ খবর
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা