X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে মুসলিম বন্দিশিবিরের প্রশংসায় সৌদি আরবসহ ৩৭ দেশ

বিদেশ ডেস্ক
১৩ জুলাই ২০১৯, ০৫:০৩আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৮:৩৯

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে দেশটির আচরণের প্রশংসা করেছে সৌদি আরবসহ ৩৭টি দেশ। জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে তারা। এমন সময়ে এ চিঠি সামনে এলো যখন ১০ লাখেরও বেশি উইঘুর মুসলিমকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা এবং মুসলিম শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়েছে বেইজিং। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

চীনে মুসলিম বন্দিশিবিরের প্রশংসায় সৌদি আরবসহ ৩৭ দেশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে সৌদি আরব ও রাশিয়াসহ ৩৫টি দেশ চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ওই চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে রয়টার্স।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা নিপীড়নের নিন্দা জানায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানসহ ২২টি দেশ। এসব দেশের রাষ্ট্রদূতরা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পাঠানো লিখিত বার্তায় চীনের উইঘুর নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তবে চীনের উইঘুর নীতির প্রতি সমর্থন জানানো দেশগুলোর চিঠিতে জিনজিয়াংয়ে বেইজিংয়ের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ‘চীনের অসামান্য অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চীন জিনজিয়াংয়ে সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী নানা ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের একটি হচ্ছে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন (উইঘুর বন্দিশিবিরকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে দাবি করে চীন)।

চিঠিতে দাবি করা হয়, জিনজিয়াংয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। সব নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত তিন বছরে সেখানে কোনও সন্ত্রাসী হামলা ঘটেনি। ফলে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।

সৌদি আরব ছাড়াও চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, বেলারুশ, বার্মা, ফিলিপাইন, সিরিয়া, পাকিস্তান, ওমান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন। এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এটিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন। চীনের পক্ষ থেকে এই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। চীনে মুসলিম বন্দিশিবিরের প্রশংসায় সৌদি আরবসহ ৩৭ দেশ

এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চীন সফরকালে দেশটিতে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের পক্ষে আওয়াজ তোলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২২ ফেব্রুয়ারি বেইজিং সফরকালে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চীনের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দুই দেশের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। উল্লেখ্য, উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে ‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা’র বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে বেইজিং।

চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুং-এর শাসনামলে দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনজনিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ২০১০ সালে সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির গোপন নথির সূত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন, মাও সে তুং-এর শাসনামলে অন্তত চার কোটি মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের কারণে প্রাণ হারিয়েছে। ২০১৮ সালের আগস্টে জেনেভায় চীনের ওপর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির দুই দিনের বিশেষ সভায় উঠে আসে চীনে উইঘুরদের বন্দিশিবিরে আটকে রাখার বিষয়টি। সভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে উইঘুর মুসলিমদের গণহারে আটকের অভিযোগ তোলা হয় চীনের বিরুদ্ধে।

উইঘুর মুসলিম কারা?

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মত স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার ওপর এখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে যে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ব্যাপক হারে আটকের শিকার হচ্ছে।

চীনকে কেন অভিযুক্ত করা হচ্ছে?

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উইঘুর মুসলিমদের গণহারে ধরে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে নেওয়া হচ্ছে। এরপর সেসব শিবিরে তাদের জোর করে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে বাধ্য করা হচ্ছে।

নির্বাসিত উইঘুর মুসলিমদের সংগঠন ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই উইঘুরদের আটক করা হচ্ছে। তাদের জোর করে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে স্লোগান দিতে বলা হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড উইঘুর কংগ্রেস জানিয়েছে, বন্দিদের ঠিকমত খাবার দেওয়া হয় না এবং নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। অধিকাংশ বন্দিকে দীর্ঘদিন আটকে রাখলেও তাদের অভিযুক্ত করা হয় না এবং কোনও আইনি সহায়তা নিতেও দেওয়া হয় না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈশ্বরে বিশ্বাস না করা চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বিদেশি ধর্মীয় প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এখন ‘সিনিসাইজ রিলিজিওন’ নামে এক প্রচারণা শুরু করেছে যাতে বলা হচ্ছে ‘ধর্মকে যতটা পারো চীনের মতো করে নাও।’ ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে উইঘুরদের ঘরে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হান সম্প্রদায়ের ‘গুপ্তচরদের।’ চীনের সরকারি এসব কর্মচারীরা উইঘুর পরিবারের সঙ্গে থাকেন, যাতে তাদেরকে ‘চীনা সংস্কৃতি’র সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে এবং প্রয়োজনে সরকারকে উইঘুরদের ‘অগ্রহণযোগ্য’ জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেন। আল জাজিরা জানিয়েছে, হান সম্প্রদায়ের ১০ লাখেরও বেশি সরকারি চাকরিজীবীকে উইঘুরদের পরিবারের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা উইঘুর পরিবারের ‘সদস্য’ হয়ে পরিবারগুলোর ওপর নজরদারি করছে। এর বাইরে সরাসরি বন্দিশিবিরে রয়েছেন আরও বিপুল সংখ্যক উইঘুর মুসলিম। সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

/এমপি/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা