X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যাঝুঁকি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ চায় এইচআরডব্লিউ

বিদেশ ডেস্ক
১৪ জুলাই ২০১৯, ১৪:২৭আপডেট : ১৪ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩০
image

বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের বন্যাঝুঁকির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ। বৃষ্টি ও ভূমিধসে রোহিঙ্গারা যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, বাংলাদেশের একার পক্ষে সেই চাপ সামলানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে সংস্থাটি। তাই অন্যান্য দেশের সরকারকেও বাংলাদেশের সহায়তায় এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছে তারা।

রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যাঝুঁকি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ চায় এইচআরডব্লিউ

শনিবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানায়, জুলাই মাস থেকেই কক্সবাজারে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রায় ৬ হাজার শরণার্থী আবাসন ছেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার বাড়ি। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে কক্সবাজারে ৪০০ ভুমিধস, ৬০ ঘূর্ণিঝড় ও ২৮ টি বন্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে আক্রান্ত হয়েছে ২২ হাজার মানুষ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটির শরণার্থী অধিকার বিষয়ক পরিচালক বিল ফ্রেলিক জানান, বৃষ্টি ও ভূমিধসে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে অন্যান্য সরকারের বাংলাদেশকে সহায়তা করতে হবে যেন তারা শরণার্থীদের প্রতি সাহায্য অব্যাহত রাখতে পারে।   

বিগত দুই বছরে ত্রাণ সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের আবাসন পরিস্থিতি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করেছে। ২০১৯ সালের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গঠিত যৌথ কমিটি মোট প্রতিশ্রুত অর্থের এক-তৃতীয়াংশ আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। কমিটি জানায়, ২০১৮ সালে নির্মিত বাড়িগুলো এই আবহাওয়া মোকাবিলায় যথেষ্ট ছিলো না। জুলাইয়ে প্রথম দিকে কুতুপালং-বালুখালি শিবিরের ১০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা সবাই পর্যাপ্ত সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, খাবার পানির সংকট ও স্বাস্থ্য সংকট শুরু হতে পারে।

তাদের মধ্যে একজন জানান, কয়েকটি বাড়ি ধসে পড়ার পর একজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। তিনি শরণার্থীদের কোনও অভিযোগ করতে নিষেধ করেছিলেন। ওই শরণার্থীদের পরে একটি স্কুলে আশ্রয় নিতে হয়। অন্যদিকে ইউনিসেফ জানিয়েছে, বন্যায় ৬০ হাজার শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫৫টি শিক্ষা কেন্দ্র। শরণার্থী শিবিরের বাড়িগুলো তার্পন, বাঁশ কিংবা অন্যান্য নাজুক পদার্থ দিয়ে তৈরি। এগুলো অস্থায়ী শিবির বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছিলো। একজন শরণার্থী বলেন, বৃষ্টির মৌসুমে এই অবকাঠামো যথেস্ট নয়।

গত বছর জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, রাখাইন এখনও রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ নয়। কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর উচিত বাংলাদেশকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার ব্যাপারে চাপ দেওয়া। বরং উখিয়ার উপজেলায় রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থা করা সম্ভব কি না সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেখানে আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের আবাসন সম্ভব। ফ্রেলিক বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব শরণার্থীদের সুরক্ষার ব্যাপারে শুধু বাংলাদেশেরই নয় সব সরকারেরই গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ নিজেদের জনগণকেই বৃষ্টির মৌসুমে সুরক্ষা দিতে হিমশিম খায়। তাই এত বিশাল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় অবশ্যই আন্তর্জাতিক দাতা দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরাপত্তা পরিষদে নিজের অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা
ফেরত যাবেন মিয়ানমারের ১৮০ সেনা, ফিরবেন ১৭০ বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোটগ্রহণ
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন