X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা আজ

বিদেশ ডেস্ক
২৮ জুলাই ২০১৯, ১৪:৩৬আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৯, ১৪:৫৭

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল আজ (রবিবার) দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। প্রথম দিনের আলোচনায় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও রোহিঙ্গারা এতে রাজি হয়নি। জাতিগত স্বীকৃতি ছাড়া তারা মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ। বাংলাদেশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই প্রেক্ষাপটে আজ আবারও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।  রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা আজ

জাতিগত নিধন ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দীর্ঘদিন পার হলেও এর আওতায় কোনও শরণার্থী নিজ দেশে ফিরে যায়নি। মানবাধিকার গ্রুপগুলো দাবি করে আসছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাসের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে শনিবার পররাষ্ট্র সচিব উ মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে।

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম এএফপিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল কয়েক ঘণ্টা ধরে রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, দুই পক্ষই এটাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে আর  আগামীকালও (রবিবার) আলোচনা চলবে।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ আলোচনাকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তারা মিয়ানমারের কাছে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। তবে আমরা বলেছি মিয়ানমার যতক্ষণ আমাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না ততক্ষণ আমরা ফেরত যাবো না।’

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের Citizen, Associate এবং Naturalized পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের Associate আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের Naturalized বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার জন্য রাজি করানোর আলোচনায় বসেছে দেশটির কর্মকর্তারা। গত বছরের অক্টোবরে প্রথম দফার আলোচনায় মিয়ানমারে ফেরার প্রস্তাব অস্বীকার করে রোহিঙ্গা নেতারা।

বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছে কোনও রোহিঙ্গাকে জোর করে ফেরত পাঠাবে না তারা। এদিকে রাখাইনে তাদের ফেরাতে এবং নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমারের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ। জাতিসংঘ অভিযোগ তুলেছে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার অগ্রগতি খুবই ধীর গতিতে এগুচ্ছে।

মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে বেইজিং-এ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার পর কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে আসলেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে বেইজিং।

এর আগে চলতি মাসে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য ২৫০টি বাড়ি নির্মাণের পর বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরতদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ভারত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছে বলে খবর দেয় দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সংবাদমাধ্যমটি জানায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জুলাইয়ের শেষের দিকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসতে পারেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব। কূটনৈতিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ঢাকার ওপর চাপ কমানোর অংশ হিসেবে ভারত প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। এদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ সাল থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরও প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

 

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
সর্বশেষ খবর
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
ভান মুন নোয়াম বমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
কারিগরির সনদ জালিয়াতি: সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ডিবি কার্যালয়ে
পরোয়ানা জারির ৬ বছর পর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার
পরোয়ানা জারির ৬ বছর পর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার
পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার-অনিন্দিতার জামিন চেয়ে আবেদন
পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার-অনিন্দিতার জামিন চেয়ে আবেদন
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ