X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
মন্তব্য প্রতিবেদন

পার্লামেন্ট স্থগিতের পর কোন পথে ব্রিটেনের রাজনীতি?

মুনজের আহমদ চৌধুরী
২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৩৮আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৪০

কয়েক সপ্তাহের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১৪ অক্টোবর ব্রিটেনের রানি ভাষণ দেওয়ার আগ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে পার্লামেন্ট। একই দিন সংসদ স্থগিত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন রানি এলিজাবেথ। বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের গণতন্ত্র হত্যার শামিল। নিজের প্রতিশ্রুত চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পার্লামেন্টের বাধা ছাড়াই বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করেন তারা। পার্লামেন্ট স্থগিতের পর কোন পথে ব্রিটেনের রাজনীতি?

ব্রিটিশ এমপিরা যখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে ব্যস্ত তখন আচমকা পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বরিস। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার নতুন সরকার ব্রিটেনের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নয়নখাতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চায়। সেজন্য দরকার নতুন আইন। আর ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে পার্লামেন্টে বিতর্কের যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। সুতরাং ব্রেক্সিটের সঙ্গে পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার কোনও সম্পর্ক নেই।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্থগিত করে রাখার ঘটনাকে রাজনৈতিক ‘আতশবাজি’র ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

বিরোধী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, বরিস জনসন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন। তিনি নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যের ভোটে নির্বাচিত। বরিস গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ নন বলে অভিযোগ করে করবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কারণে ব্রিটিশ জনগণ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চাকুরিতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। করবিন অভিযোগ করেন, রাজনীতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুসরণ করছেন বরিস। আগামী মঙ্গলবার লেবার পার্টির বৈঠকের কথা উল্লেখ করে করবিন আশ্বস্ত করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবেন।

জনগণ ও আইন প্রণেতাদের মতামত উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট স্থগিত করা হয়েছে অভিযোগ করে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির শীর্ষ নেতা নিকোলা স্টারজন বলেছেন, এর মাধ্যমে আসলে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ত্বরান্বিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে একনায়কতন্ত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আইন প্রণেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বরিসের প্রচেষ্টা রুখতে না পারলে ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাবে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার জন ব্রোকাও তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সংসদ স্থগিত করার অর্থ হলো গণতন্ত্রকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া।

বুধবার সকালে রানির সঙ্গে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এরপরই সংসদ স্থগিতের ঘোষণা আসে। ঘোষণার পরপরই ডলারের বিপরীতে পড়িতে দিকে থাকা পাউন্ডের মূল্যমান আরও একদফা নামতে শুরু করে।

পুরো ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এটাকে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিহিত করেছে। ইইউ বলেছে, কোনও সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করতে চায় না তারা।

পার্লামেন্ট স্থগিতের নেপথ্যে

দুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল লেবার পার্টিসহ বিরোধী দলের বহু আইন প্রণেতা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের বিরোধী বহু সরকার দলীয় আইনপ্রণেতাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া অধিবেশনে বরিসের চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকানোর উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলেন তারা। আর তা বুঝতে পেরেই পার্লামেন্ট স্থগিতের নাটকীয় ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সবমিলে এখন ক্রমশই জটিল পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। চুক্তিবিহীন হলেও আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে চান জনসন। আর বিরোধী ও সরকারি দলে বরিসরিবোধীদের লক্ষ্য ১৪ অক্টোবর পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর পর যে অল্প সময় হাতে থাকবে ওই সময়েই ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব আনা। এর মাধ্যমে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট আটকে দেওয়া।

ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটেনের রাজনীতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে আগাম নির্বাচনের প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হয়েছে। ব্রেক্সিট সময়সীমা বরিস জনসন যা করেছেন তাকে ‘পলিটিক্যাল ক্যু’ বলা যায়। এখন বিরোধী দল ও চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বিরোধীরা মিলে ‘পাল্টা ক্যু’ করতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

উগ্র জাতীয়তাবাদের চ্যালেঞ্জ

নিজ দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিতেও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন জনসন। তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন ব্রেক্সিট পার্টির নাইজেল ফারাজ। আরেকটা নির্বাচন হলে টিকে থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে হিসাব কষতে হচ্ছে তাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এমনকি ভারতেও যে প্রবল উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান, ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শ্বেতাঙ্গ ইংরেজ শ্রেণির বড় অংশটি আচমকাই প্রবল উগ্রপন্থায় ঝুঁকে গেছে। ইইউ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে চরম বর্ণবাদী ডানপন্থী দল ব্রেক্সিট পার্টির অভাবণীয় ও আকস্মিক উত্থানের বিষয়টি দেখা গেছে। ডানপন্থীদের প্রবল উত্থানে লেবার পার্টিও বিস্মিত।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবেন জনসন?

ব্রিটেনের সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায় প্রতি পরিবারেরই একজন এদেশে বসবাস করেন যারা আইনের খাতায় ‘অবৈধ’। প্রতি মুহূর্তে গ্রেফতার আর ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি রাখার পর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কায় থাকেন তারা। ‘অবৈধ’ভাবে বসবাস করা ওই স্বজনকে নিয়ে আতঙ্কে থাকেন তাদের ভাই-বোন,পরিবার; যারা এদেশে বৈধভাবে বসবাস করছেন।

নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশই ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে সমর্থন করেন। কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি, ভারতীয় বংশোদ্ভূত এসব মানুষ বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে নাখোশ হয়েছিলেন। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের কোনও বিকল্প দেখছেন না এসব নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষেরা।

প্রধানমন্ত্রী হয়েই বরিস জনসন পার্লামেন্টে বলেছিলেন, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ব্রিটেনে বসবাসত পাঁচ লাখ মানুষকে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ দেবেন। নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বিশ্বাস রাখতে চায়। তাদের প্রত্যাশা, ব্রেক্সিট নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতিতে জনসনের এই বক্তব্য শুধুই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি না।

চ্যালেঞ্জ আর নাটকীয়তা দিয়েই নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েছেন বরিস জনসন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে কোনও সমঝোতা বা চুক্তির আগ্রহই নেই তার। চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মরিয়া তিনি। রানির ভাষণে হয়তো নতুন আইনের রুপরেখা থাকতে পারে।

তার আগ পর্যন্ত প্রায়ই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে চলবে বিক্ষোভ।

/জেজে/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক