X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা শনিবার, উদ্বেগে ৪১ লাখ মানুষ

বিদেশ ডেস্ক
৩১ আগস্ট ২০১৯, ০১:১২আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০৩:৫০

আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বেগে রয়েছেন খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া রাজ্যের প্রায় ৪১ লাখ মানুষ। শনিবার স্থানীয় সময় সকাল দশটায় অনলাইনে এই তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে। অবশ্য সম্প্রতি ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে ঘোষণা করেছে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়লেও এখনই কাউকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হবে না। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিলের সুযোগ পাবেন তারা। তবে এতে রাজ্যের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ও মুসলিমদের তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা কাটছে না। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ঘিরে রাজ্য জুড়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। গুয়াহাটিসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা মোতায়েন করেছে আসাম সরকার। চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আসাম প্রশাসন

১৯৫১ সালের পর পরিচালিত প্রথম আদম শুমারির মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে নাগরিক তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের জুনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৩ কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখকে সংশোধিত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। রয়টার্স নিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে সে সময় জানিয়েছিল, রাজ্যের ৪০ লাখ, ৭ হাজার ৭০৭ মানুষ তালিকায় স্থান পায়নি। এদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী কিংবা মুসলমান ধর্মাবলম্বী। এ বছর জুনে তালিকায় আরেক দফা সংশোধনী আনা হয়। ২০১৮ সালে সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়াদের মধ্যে থেকে ১ লাখেরও বেশি মানুষকে বহিষ্কার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আসামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সবমিলে বাদ পড়া ৪১ লাখেরও বেশি মানুষ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিনটিকে ঘিরে উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালে আসামে সরকার গঠন করে। বিজেপি সরকার আসার পরেই বাংলাদেশি শরণার্থী উৎখাতে উদ্যোগী হয় আসাম সরকার। কে বাংলাদেশ থেকে এসেছে আর কে অসমের বাসিন্দা এই নিয়ে চলছে টানাপড়েন। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়, যার মধ্য দিয়ে নাগরিক তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
আসামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এখনও অনেকের শুনানি শেষ না হলেও শনিবার প্রকাশ করা হচ্ছে চূড়ান্ত তালিকা। এই তালিকা থেকে বাদ পড়লেও আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে বিদেশি ঘোষণা করা হবে না বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবে। সম্প্রতি এই আপিল করবার সময়সীমা ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। এজন্য ধাপে ধাপে মোট এক হাজার ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে বলে জানিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সচল একশো ট্রাইব্যুনালের পাশাপাশি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরও দুইশোটি ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যটির চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ সামনে রেখে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আসাম সরকার। রাজধানী গুয়াহাটিসহ অতীতে সহিংসতা ঘটেছে এমন স্পর্শকাতর এলাকায় চারজনের বেশি মানুষের একসঙ্গে জমায়েত নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক কুলাধান শৈকিয়া জানিয়েছেন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ সামনে রেখে রাজ্যে সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্সের (সিএপিএফ) অতিরিক্ত ৫১ কোম্পানি সেনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি জানান অতিরিক্ত এসব সেনা বর্তমানে রাজ্যে নিয়োজিত ১৬৭ কোম্পানি সিএপিএফ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চালানো হচ্ছে বলেও জানান এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে আসামে বাঙালি ভাষাভাষীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যার ফলে ‘বাঙালি বনাম অসমীয়’র মতো বিভাজনমূলক ধারণা আসামের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। অনেক বছর ধরেই আসামে ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই আন্দলোনের লক্ষ্য ছিল নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা অসমীয় নয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ‘বহিরাগত’ বলতে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী’ বোঝানো হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ‘বহিরাগতবিরোধী’ প্রচারণাকে ব্যবহার করেই ২০০৬ সালে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন হয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বহিরাগতদের’ কারণে আসামের পরিচয় ‘বিনষ্ট’ হওয়া রুখতে তারা জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করবে। আর হয়েছেও তাই। বাদ পড়াদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষী। রাজ্য সরকারের দাবি, বাদপড়া আবেদনকারীদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত তথ্যে ‘অসামঞ্জস্যতা’ পেয়েছেন তারা। তবে আসামের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের আশঙ্কা ১৯৮২ সালে মিয়ানমারে প্রণীত নাগরিকত্বের আইন যেভাবে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করেছে, আসামেও তাই ঘটতে যাচ্ছে।

ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল’ বা আইএমডিটি নামের অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত আগের যে আইনটি ছিল তাতে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে চালু থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব হালনাগাদ প্রকল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ঘর ছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত নতুন আইনে বলা হয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়, তাদের নিজেদেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে হবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সকল বাসিন্দাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে আছে।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ খবর
মুগদায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
মুগদায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮ নির্দেশনা
তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৮ নির্দেশনা
কাঁচা আম দিয়ে টক ডাল রান্না করবেন যেভাবে
কাঁচা আম দিয়ে টক ডাল রান্না করবেন যেভাবে
সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় দল
সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় দল
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা