X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আসামে ‘রাষ্ট্রহীন’দের হাতেই নির্মিত হচ্ছে তাদের আটক কেন্দ্র!

বিদেশ ডেস্ক
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:২৪আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:০৪

আসামে কথিত ‘অবৈধ অভিবাসী’দের জন্য নির্মাণাধীন একটি আটক কেন্দ্রের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের একটা বড় অংশই বাদ পড়েছেন এনআরসি তালিকা থেকে। এই শ্রমিকেরা জানেন, নিজেদের জন্যই তারা আটক কেন্দ্র বানাচ্ছেন। তবুও তাদের উপায় নেই। জীবিকার স্বার্থে এই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর এক অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আসামে নির্মাণাধীন অভিবাসী আটক কেন্দ্র

৩১ আগস্ট (শনিবার) স্থানীয় সময় সকাল দশটায় অনলাইনে ও এনআরসি সেবাকেন্দ্রে প্রকাশিত হয় আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। সে সময় এক বিবৃতিতে এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানায়, চূড়ান্ত তালিকায় মোট আবেদনকারীদের মধ্যে ৩ কোটি ৩০ লাখের মধ্যে নাগরিক হিসেবে স্থান পেয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। বাদ পড়া বাসিন্দারা ১২০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ পাবেন। তবে এই আপিলে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তারা সেখানকার অবৈধ অভিবাসী বলে বিবেচিত হবেন। তখন তাদের প্রাথমিক জায়গা হবে আটককেন্দ্রে।  এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যেই এ ডিটেনশন ক্যাম্প বা আটক কেন্দ্রগুলো বানানো হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসামের গোয়ালপাড়া শহরের কাছে নদী তীরবর্তী দুর্গম এক এলাকায় ভারতে প্রথমবারের মতো গণআটক কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘন জঙ্গল কেটে প্রায় সাতটি ফুটবল মাঠের সমান জমি প্রস্তুত করে 'অবৈধ অধিবাসীদের' জন্য  ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে। আটক কেন্দ্র নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন এনআরসি থেকে বাদ পড়া অনেকেই। তারা বলছেন,  অর্থের জন্য বাধ্য হয়েই তারা এ ক্যাম্প বানাতে শ্রম দিচ্ছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসামের এ ডিটেনশন ক্যাম্পের আশপাশে স্কুল, হাসপাতাল, বিনোদনের স্থান, নিরাপত্তারক্ষীদের বাসভবনের পাশাপাশি উঁচু সীমানা দেয়াল এবং ওয়াচ টাওয়ার থাকবে।   ক্যাম্পগুলো নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে এবং ক্যাম্পগুলোর লেআউট পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছে রয়টার্স। ক্যাম্প নির্মাণে জড়িত শ্রমিকদের অনেকেই জানান, আসামে অবৈধ অধিবাসী চিহ্নিত করতে গত সপ্তাহে যে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাদের নাম নেই। তারা জানেন, ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে শেষ পর্যন্ত তাদেরও স্থান হতে পারে। তবুও কাজ না করে উপায় নেই তাদের।

শেফালী হাজং

শ্রমিকদের একজন শেফালি হাজং। নির্মাণস্থলের কাছাকাছি একটি গ্রাম তার আবাস। হাড্ডি-চর্মসার এ আদিবাসী নারীরও নাম ওঠেনি চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতে। আরও প্রায় ২০ লাখ মানুষের মতোই তাকে এখন জন্মসনদ কিংবা জমির মালিকানা সনদের মত নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে; ব্যর্থ হলে নিজের হাতে বানানো ক্যাম্পগুলোর মতো কোনও একটি ক্যাম্পে বন্দি হতে পারেন তিনি।

ভারত সরকারের দাবি, আসামে প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে আসা লাখ লাখ অবৈধ অধিবাসী বসবাস করছে। তবে ঢাকার দাবি অনুযায়ী, ভারতে কোনও বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী নেই। ভারত কাউকে অবৈধ অধিবাসী ঘোষণা করলে তাকে বাংলাদেশে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ঢাকা। এমন পরিস্থিতির কারণে চিন্তিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন আদিবাসী হাজং গোত্রের শেফালি। "কিন্তু আমার তো পেট চালাতে হবে," কংক্রিট মিক্সচারে পাথর ঢালতে ঢালতে স্থানীয় অহমীয়া উচ্চারণে বলেন এ নারী। অন্যান্য শ্রমিকদের মতো তিনিও ক্যাম্প বানানোর কাজে প্রতিদিন প্রায় চার ডলারের কাছাকাছি আয় করেন; তুলনামূলক দরিদ্র এলাকা হওয়ায় এ আয়কেই যথেষ্ট মনে করছেন অধিকাংশ শ্রমিক।

সঠিক জন্ম তারিখ না জানা শেফালির ধারণা তার বয়স ২৬ এর কাছাকাছি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জিতে কেন নাম নেই তাও বলতে পারছেন না তিনি। "আমাদের কোনো জন্মসনদ নেই," বলেছেন শেফালির মা মালতি হাজং। তিনি নিজেও ক্যাম্পটির নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।

/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা