যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রকল্পের আওতায় মাত্র ১৮ হাজার অভিবাসীকে দেশটিতে থাকতে দেওয়ার অনুমতির ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বনিম্ন। মার্কিন সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা ইরাকি ও নিপীড়নের শিকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এই ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
গত কয়েক মাসে ব্যাপক হারে বেড়েছে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ। জলে ভেসে আসা এল সালভেদরের এক অভিবাসী ও তার মেয়ের পানিতে ভেসে আসা নিথর মরদেহের ছবি ভাবিয়ে তোলে সবাইকে। সবার চোখের সামনে যেন ভেসে উঠেছে সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির নিথর দেহ। চলতি সপ্তাহেই শিশুসহ আরও তিনজন অভিবাসন প্রত্যাশী প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকেই দায়ী করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে গিয়ে নিহত হয় ২৮৩ অভিবাসী প্রত্যাশী মানুষ। যার মধ্যে আছে নারী ও শিশুও।
এছাড়া স্থানীয় ও রাজ্য সরকারগুলো যেন তাদের এলাকা থেকে শরণার্থীদের পুনর্বাসন করতে পারে সেই সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই আদেশে শরণার্থীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনও এলাকায় থাকতে পারবেন। এতে করে মার্কিন সমাজ ও কর্মীশক্তিতে তারা খুব সহজে যোগ দিতে পারবেন।
অভিবাসী সংখ্যা কমানোকে ট্রাম্প তার প্রশাসনের অন্যতম মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্পপ প্রশাসন শরণার্থী সংখ্যা ৫০ হাজারে নামিয়ে এনেছিল। পরের বছরগুলোতে যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ৩০ হাজার। আর এবার সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়ালো ১৮ হাজারে। এর আগে ২০০২ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর এই সংখ্যা সর্বনিম্ন ২৭ হাজার করা হয়েছিলো।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আসা অভিবাসীরা তাদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পররাষ্ট্র দফতর জানায়, প্রচলিত মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে।
এই ঘোষণার সমালোচনা করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রধান ডেভিড মিলব্যান্ড বলেন, আজ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই দুঃখজনক দিন। এই সিদ্ধান্তে আবার প্রমাণিত হয় যে দেশটির নেতৃত্ব বিশ্বে ঝুঁকিতে থাকা মানুষগুলোর কথা ভাবেন না।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের অভিবাসী অধিকার প্রকল্পের পরিচালক ওমর জাদওয়াত বলেন, নিপীড়ন, গণহত্যা থেকে সুরক্ষার আশ্রয়প্রাথী মানুষদের সহায়তা করার আমাদের যে জাতীয় অঙ্গীকার সরকার সেটা বাতিল করতই আগ্রহী।
২০১৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভোটের আগে একটি ছাড়া ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সবাই শরণার্থী সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে সমর্থন জানালেও কেবল যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির বিষয়ে একমত পোষণ করেনি৷ যুক্তরাষ্ট্র কেবল অভিবাসন চুক্তিই প্রত্যাখ্যান করেনি, শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক চুক্তিও অনুমোদন করেনি দেশটি৷ এই প্রস্তাবিত চুক্তি ‘মার্কিন অভিবাসন ও শরণার্থীনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়' বলে মনে করে ট্রাম্প প্রশাসন৷