ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর দেহভস্মের কিছু অংশ চুরি হয়েছে। পুলিশ বলছে, বুধবার এই নেতার ১৫০তম জন্মদিন পালনের দিনে উত্তর প্রদেশের বাপু ভবন মেমোরিয়াল সেন্টার থেকে তার দেহভস্ম চুরি হয়। এছাড়া ওই ভবনে থাকা গান্ধীর পোস্টারের ওপরে সবুজ কালি দিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতক’ লিখে দিয়েছে অজ্ঞাত দুস্কৃতিকারীরা। গান্ধী নিজেকে ধর্মপ্রাণ হিন্দু দাবি করলেও তার হিন্দু-মুসলিম ঐক্যপ্রচেষ্টার কারণে অনেক উগ্রবাদী হিন্দু তাকে বিশ্বাসঘাতক অভিহিত করে থাকে।
১৯৪৮ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদী নথুরাম গডসের ছোড়া গুলিতে নিহত হন অহিংসা আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া মহাত্মা গান্ধী। মৃত্যুর পর তাকে দাহ করা হলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী তার দেহভস্ম নদীতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়নি। খ্যাতির কারণে তা আলাদা করে ভারতের বিভিন্ন স্থানের মেমোরিয়াল সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে বাপু ভবনও একটি। মধ্য প্রদেশের রিয়া জেলায় অবস্থিত এই সেন্টারে মহাত্মা গান্ধীর নানা ব্যবহার্য সামগ্রীর পাশাপাশি তার পোস্টারও রক্ষিত আছে।
বাপু ভবনের তত্ত্বাবধায়ক মঙ্গলদীপ তিওয়ারি জানান, বুধবার মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে খুব সকালে দরজা খোলা হয়। ভারতীয় ওয়েবসাইট দ্য ওয়ারকে তিনি বলেন, রাত এগারোটার দিকে আমি ফিরে আসার সময় গান্ধীর দেহভস্ম হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারি আর তার পোস্টারে রঙ মাখানো দেখতে পাই। এই ঘটনাকে লজ্জাজনক আখ্যা দেন তিনি।
মহাত্মা গান্ধীর দেহভস্ম চুরির ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা গুরমিত সিং। দ্য ওয়ারকে তিনি বলেন, এই পাগলামি অবশ্যই থামাতে হবে। তিনি পুলিশকে বাপু ভবনের অভ্যন্তরের সিসিটিভি পরীক্ষা করে দেখার আহ্বান জানান।
রিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, দেহভস্ম চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছেন তারা। পুলিশ বলছে, এই ঘটনাকে জাতীয় ঐক্য নষ্টের চেষ্টা ও সম্ভাব্য শান্তি হরণকারী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মহাত্মা গান্ধী। তার এই আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়েছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। বেশির ভাগ ভারতীয় নাগরিক এখনও তাকে জাতির পিতা হিসেবে সম্মান করে। তবে কট্টরপন্থী কোনও কোনও হিন্দু মনে করে মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে এবং ভারত ভাগে ভূমিকা রেখে হিন্দুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিনি। ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে এক উগ্র হিন্দুত্ববাদীর হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী।