ভারতের আসামে নাগরিক তালিকায় স্থান না পাওয়া এক ব্যক্তির মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার পরিবার। চার দিন ধরে এ নিয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিদেশি ঘোষিত হয়ে তেজপুরের ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকা অবস্থায় গত রবিবার দুলাল চন্দ্র পাল (৬৫) নামের ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। দুলালের পরিবার তাকে ভারতীয় নাগরিক ঘোষণার আগ পর্যন্ত মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, তাকে ভারতীয় বলে স্বীকার না করা হলে তার মরদেহ যেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আসাম সরকারের ঘোষিত চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ বাসিন্দা। আগামী নভেম্বর থেকে তারা ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত আপিল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। দুলালের পরিবারের দাবি, এর আগেই ২০১৭ সালে একতরফা বিচারের মাধ্যমে দুলাল চন্দ্র পালকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়। ওই সময়ে মানসিকভাবে অস্থির থাকার পরও তার বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করা হয়। অসুস্থতায় ভুগে গত রবিবার গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় সোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা দুলালের। এরপর তাকে ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা করতে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ধরনায় বসে ওই এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ। এরইমধ্যে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আসাম সরকার।
দুলালের বড় ছেলে আশীষ বলেন, ‘রাজ্য যেহেতু তাকে বিদেশি ঘোষণা করেছে, সেহেতু তাদের উচিত তার মরদেহ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া। আমরা কেবল তখনই তার মরদেহ নেব, যখন সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে তাকে ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।’
গত চারদিন ধরে বেশ কয়েকবার প্রতিনিধি দল পাঠিয়েও মরদেহ গ্রহণে পরিবার ও গ্রামবাসীকে রাজি করাতে পারেনি আসামের রাজ্য সরকার। সোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন, ‘তাকে বিদেশি ঘোষণা করেছে একটা ট্রাইব্যুনাল। ফলে তাদের দাবি নিয়ে কথা বলা প্রশাসনের এখতিয়ারের বাইরে। ট্রাইব্যুনালের রায়কে যদি তারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে চান, আমরা তাকে আইনিভাবে সাহায্য করতে পারি। আমরা বিষয়টি সামনে আনার চেষ্টা করছি।’
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন দুলাল চন্দ্র পালের ডায়াবেটিস এবং সাইক্রাটিকের চিকিৎসা চলছিল। ১১ অক্টোবর তেজপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করেন, সেদিনই ডিনেটশন সেন্টারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রবিবার গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যুর পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে বেশ কিছু নথি নিয়ে আসেন কর্মকর্তারা। এসব নথিতে তাকে ‘বিদেশি ঘোষিত’ বলে উল্লেখ করা হয়। ফাঁকা রাখা হয় তার আবাসিক ঠিকানার কলাম। এনিয়েই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে তার পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীরা।
দুলালের ছেলে বলেন, ভালোভাবেই ঠিকানা জানার পরেও তারা খালি রেখেছে। আমাদের ধারণা পরে তারা এতে বাংলাদেশের কোনও ঠিকানা বসিয়ে দেবে। ফলে তিনি যদি বাংলাদেশি হন, তাহলে মরদেহ আমাদের কাছে এনেছেন কেন? তার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।
আসামের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অচলাবস্থা নিরসনে আরও দুই-একটি দিন অপেক্ষা করে পরিবারের সম্মতি ছাড়া কীভাবে মৃতদেহ সৎকার করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।