X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত, বাজার থেকে বেবি পাউডার তুলে নিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন

বিদেশ ডেস্ক
১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৩৯আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪২

পরীক্ষায় আবারও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর উপাদান অ্যাজবেস্টসের উপস্থিতির প্রমাণ মেলার পর প্রসাধনী সামগ্রীর বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন  যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে প্রায় ৩৩ হাজার বোতল বেবি পাউডার প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর ওই কোম্পানির শেয়ার নেমে গেছে ৬ শতাংশের বেশি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত, বাজার থেকে বেবি পাউডার তুলে নিচ্ছে জনসন অ্যান্ড জনসন

বেবি পাউডারসহ জনসনের ট্যালকম পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদনের উপস্থিতির অভিযোগ তুলে হাজার হাজার ক্রেতা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করেছেন। গত বছর সেই মামলাগুলোর কয়েকটির রায়ে জনসন অ্যান্ড জনসনকে কোটি কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তবে নিজেদের ট্যালকম পণ্যে ক্ষতিকর উপদান থাকার আশঙ্কায় এই প্রথম তারা বাজার থেকে পণ্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিল।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে আনলাইন থেকে কেনা এক বোতল বেবি পাউডার পরীক্ষা করে সেটিতে অ্যাজবেস্টস পাওয়া গেছে। এরপর দেশটির বৃহৎ এ ওষুধ কোম্পানি বাজার থেকে তাদের প্রধান পণ্য বেবি পাউডার তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।  শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বাজার থেকে তাদের এই পণ্য তুলে নেওয়ার কথা জানায় জনসন অ্যান্ড জনসন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পক্ষ থেকেও এই প্রথম বেবি পাউডারে দূষিত উপাদান থাকার কথা জানানো হলো।

ট্যালকম পাউডার তৈরির প্রধান উপাদান ট্যালক একটি খনিজ পদার্থ। মাটিতে অ্যাসবেস্টসের কাছাকাছি অবস্থান থেকে এটি সংগ্রহ করা হয়। জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাদের ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবেস্টসের দূষণ রয়েছে, যা ক্যানসার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। তবে জনসন অ্যান্ড জনসন তাদের পণ্যে অ্যাসবেস্টস থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। কোম্পানিটির দাবি, তাদের পণ্য ব্যবহারে ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা নেই; তারা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ওই পাউডার তৈরি করছে।

বাজার থেকে পণ্য প্রত্যাহার করলেও কোম্পানির চিকিৎসা নিরাপত্তা সংস্থার ‘উইমেন্স হেলথ’ বিভাগের প্রধান ডা. সুসান নিকোলসন দাবি করেছেন, 'আমাদের ট্যালকম পণ্যে অ্যাজবেস্টসের উপস্থিতি পাওয়া খুবই বিরল। এছাড়া পরীক্ষার যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তাতেও গড়বড় আছে'। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনসন আরও দাবি করেছে, একমাস আগেও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যামিনিস্ট্রেশন তাদের ট্যালকম পণ্য পরীক্ষা করে অ্যাজবেস্টস না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল।

অন্যদিকে এফডিএ’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ বছরের শুরু থেকে তারা ট্যালকম পণ্য পরীক্ষা করা শুরু করে। ওই পরীক্ষার সময় একটি লটের বেবি পাউডারে অ্যাজবেস্টস পাওয়া গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় আরেকটি লটের পাউডারে দূষিত এ উপাদান পাওয়া যায়নি। তবে তাদের পরীক্ষার ফলাফল সঠিক জানিয়ে এফডিএফ কর্তৃপক্ষ ভোক্তাদের জনসনের বেবি পাউডার ব্যবহার বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। জনসন কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এফডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে পরীক্ষায় কী ধরনের অ্যাজবেস্টস পাওয়া গেছে এবং দুই পরীক্ষার ফলাফল দুই রকম কেন হলো তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

২০১৮ সালে পণ্যে ক্যানসার ঝুঁকির কারণে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা করে মার্কিন আদালত। তাদের পণ্য ব্যবহারের কারণে ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগকারী ২২ নারীকে ৪৭০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের একটি আদালত। জনসনের বেবি পাউডার ও কয়েকটি সামগ্রী ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকির বিষয় সম্পর্কে সতর্ক না করায় এই জরিমানা করা হয়। ওই ২২ নারীকে প্রাথমিকভাবে ৫৫ কোটি (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৪ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদেরকে দিতে হবে আরও ৪১০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৪,৪৭১ কোটি টাকা)।

এরআগে ২০১৭ সালেও একই ধরনের অভিযোগকারী এক নারীকে চারশ ১৭ মিলিয়ন (৪১ কোটি ৭০ লাখ) ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনকে নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত। একই বছর মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের এক জুরি বোর্ড জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত এক নারীকে ১১০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে জনসন অ্যান্ড জনসনকে নির্দেশ দেয়।  ২০১২ সালে ভার্জিনিয়ার ৬২ বছরের নারী লইস স্লেম্প জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে ধরা পড়ে। এরপর তিনি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বেবি পাউডার ও গোসলের বিভিন্ন প্রসাধন ব্যবহারে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কথা গোপন করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। তার আগেও একই ধরনের বেশ কয়েকটি মামলায় জরিমানার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। এর মধ্যে তিনটি মামলায় ৭২,৭০ ও ৫৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হয় জনসন অ্যান্ড জনসনকে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একই ধরনের আরও অন্তত ৯ হাজার অভিযোগ বিচারাধীন রয়েছে।

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করলো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বশেষ খবর
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়