X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাগদাদির ‘মৃত্যু’র পরও বিপজ্জনক আইএস

বিদেশ ডেস্ক
২৮ অক্টোবর ২০১৯, ২০:২২আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৪৫

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মতো ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল-বাগদাদি নিহত হলেও গোষ্ঠীটি ও তাদের মতাদর্শ এখনও বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক সময় সিরিয়া ও ইরাকের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী জঙ্গি গোষ্ঠীটির নেতা যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময় আইএস যোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধ করলেও সম্প্রতি তারা ‘হিট অ্যান্ড রান’ ও আত্মঘাতী হামলার কৌশল গ্রহণ করেছে। এপ্রিলে শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে হামলার দায় গোষ্ঠীটি স্বীকার করেছে। এসব ঘটনায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সবক’টি হামলায় আইএসের জড়িত থাকার বিষয়টি নিঃসন্দেহ নয়। কিন্তু, যদি এই সংযোগ আভিযানিক না হয়ে মতাদর্শিক হয়ও তবু বিভিন্ন দেশে তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা হচ্ছে।

বাগদাদির ‘মৃত্যু’র পরও বিপজ্জনক আইএস

 

ইরাক

যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বাহিনীর কাছে পরাজয়ের পর আইএস নিজেদের পুরনো গেরিলা পদ্ধতিতে ফিরে যায়। পরাজয়ের দুই বছর পরও ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী জিহাদি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে।

দিয়ালা, সালাহউদ্দিন, আনবার, কিরকুক ও নিনেভাহ প্রদেশে স্লিপার সেলগুলো পুনরায় সংগঠিত হয়েছে। এসব অঞ্চলে নিয়মিত হামলা চালিয়েছে। এমনকি অপহরণ ও বোমা হামলার মধ্য দিয়ে বাগদাদের সরকারকে বিপর্যস্ত করতে চেয়েছে।

এসব স্লিপার সেল বেশিরভাগ গ্রামীণ অঞ্চলে সক্রিয়। তারা সেখানে ফসলে আগুন দেয় ও স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে চাঁদা গ্রহণ করে। ফেব্রুয়ারিতে, দুই ব্যক্তি নিহত ও ২৪ আহত হয়েছিলেন মসুলে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে। একসময় মসুল ছিল আইএসের রাজধানী।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানুয়ারিতে দাবি করে, সিরিয়ার চেয়ে ইরাকে দ্রুত পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে আইএস। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ইরাকে এখনও গোষ্ঠীটির প্রায় দুই হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে।

সিরিয়া

বড় ধরনের সামরিক পরাজয়ের পর আইএস ছায়ায় হারিয়ে যায়। আত্মঘাতী বোমা ও ফাঁদ পেতে হামলা চালাচ্ছে গোষ্ঠীটি। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর ও নগরে গত বছর বোমা হামলা চালায় তারা। এসব হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীও লক্ষ্যবস্তু ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে আইএসকে উৎখাত করে সিরীয় কুর্দি বাহিনী। তারা মনে করে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে আইএসের স্লিপার সেল সক্রিয় হচ্ছে। তাদের হাতে বন্দি থাকা আইএস যোদ্ধাদের নিয়েও তার সতর্কতার কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই মাসের শুরুতে সিরিয়া থেকে দেশটির সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর তুর্কি অভিযান শুরু হলে কুর্দিরা এই আশঙ্কার কথা জানায়।

তুরস্ক জানিয়েছে, তারা অভিযান এলাকা থেকে কুর্দিদের হাতে আইএস বন্দিদের মধ্যে ২০০ জনকে আটক করেছে। এদের তুর্কি বাহিনী ও তাদের মিত্র সিরীয় বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, আইএস বন্দিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় কিছু মরু এলাকার এখনও কিছু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আইএস যোদ্ধাদের।

মিসর

গত কয়েক বছরে মিসরে বড় কোনও হামলা হয়নি। কিন্তু ছোট ছোট হামলার ঘটনা ও সামরিক অভিযান ইঙ্গিত দেয় দেশটির সিনাই উপদ্বীপে আইএস সংগঠিত হচ্ছে। সিনাইয়ে আইএস সংশ্লিষ্ট যোদ্ধাদের পরাজিত করতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভিযান শুরুর পর কয়েকশ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে মিসর। ২০১৫ সালে মিসরীয় অবকাশ কেন্দ্র শারম আল-শেখ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মুহূর্ত পর একটি যাত্রীবাহী বিমান বিস্ফোরিত হয়। এতে নিহত হন ২২৪ জন। হামলাটির দায় স্বীকার করেছিল আইএস।

সৌদি আরব

এক দশক আগে আল-কায়েদাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার পর আইএস জঙ্গিরা দেশটিতে একাধিক ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে। সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনী ও শিয়া মুসলিমদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে সৌদি আরব যোগ দেওয়ার পর দেশটিতে হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন বাগদাদি। ভাষণে তিনি সৌদি শাসকদের সমালোচনাও করেছিলেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির পরিচালক কামরান বোখারি এই বছরের শুরুতে বলেছিলেন, সৌদি আরবে আইএস এখনও সক্রিয় রয়েছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে অবগত।

ইয়েমেন

২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস জঙ্গিরা তাদের ইয়েমেনে উপস্থিতির জানান দেয়। ওই সময় সৌদি সমর্থিত আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদির সরকার ও ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। তবে দেশটিতে আল-কায়েদার স্থানীয় শাখার প্রতিরোধের মুখে পড়ে তারা। এমনকি আল-বায়দা প্রদেশের দক্ষিণে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই দুই জঙ্গি গোষ্ঠী আবার লড়ছে শিয়া মতাবলম্বী হুথিদের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে পুরনো ও গভীর আদিবাসী যোগসূত্র থাকার কারণে এখনও বড় হুমকি আইএস।

নাইজেরিয়া

ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০৯ সাল থেকেই নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালাচ্ছে বোকো হারেম। তাদের হাতে প্রায় ৩০ হাজার নিহত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে ২০ লাখ মানুষ। ২০১৬ সালে গোষ্ঠীটি বিভক্ত হয় এবং একটি অংশ আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।

আইএস পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশ গত বছর থেকে সামরিক ঘাঁটিতে হামলায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। তবে এই গোষ্ঠীর প্রতি আইএসের সমর্থন স্পষ্ট নয়। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই সম্পর্ক হয়তো শুধুই নামে। এতে সরাসরি অর্থের জোগান ও সহায়তা প্রদান হয়তো নেই।

আফগানিস্তান

২০১৪ সালের শেষ দিকে আত্মপ্রকাশ করে ইসলামিক স্টেট ইন খোরাসান (আইএস-কে)। আধুনিক আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার অনেকটা এলাকাজুড়ে ঐতিহাসিক খোরাসান থেকেই এই নামকরণ। পূর্বাঞ্চলীয় নাঙ্গারহার প্রদেশে এদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাগদাদির প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে তারা। কাবুলে একাধিক বেসামরিক স্থাপনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে গোষ্ঠীটি। গ্রামীণ এলাকায় আফগান তালেবানের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষেও জড়িয়ে আছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ধারণা, দেশটিতে আইএস যোদ্ধার সংখ্যা ২ হাজারের কম। তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এখনও খুব বেশি জানা যায়নি। আফগান কর্মকর্তারা হামলার দায় স্বীকারের সত্যতা নিয়ে সন্দিহান।

শ্রীলঙ্কা

৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে ইস্টার সানডেতে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। হামলাকারীদের মধ্যে বাগদাদির প্রতি ৮ জন আনুগত্য প্রকাশ করে। যদিও শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা আইএসের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানীয় ইসলামি গোষ্ঠীকে দায়ী করছেন।

ইন্দোনেশিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং দেশটিতে আধুনিক ইসলাম ধর্ম পালন করেন মোসলমানরা। কিন্তু সেখানেও ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েক হাজার ইন্দোনেশীয় আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং পাঁচ শতাধিক সিরিয়ায় গিয়ে গোষ্ঠীটিতে যোগ দিয়েছে।

ফিলিপাইন

দেশটির আশঙ্কা ইরাক ও সিরিয়া থেকে পালানো আইএস যোদ্ধারা মিন্দানাও মুসলিম অঞ্চলের পাহাড়ি ও গ্রামীণ এলাকায় আস্তানা গড়তে পারে। এলাকাগুলোতে আইনের শাসন কম, জাতিগত দ্বন্দ্ব এবং ইসলামি বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান রয়েছে। অঞ্চলটির অনেক ইসলামি গোষ্ঠী আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে কোনও শাখা থাকার কথা জানায়নি আইএস।

 

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
বায়ার্নের নজরে থাকা নাগেলসমানের সঙ্গে জার্মানির নতুন চুক্তি
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
নড়াইলে ‘সুলতান মেলা’ উপলক্ষে আর্ট ক্যাম্প
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!