দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি নিয়ে অবস্থান বদল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, এসব বসতি এখন আর আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে বিবেচনা করবে না তার দেশ। তিনি দাবি করেন, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের। পম্পেওর এই অবস্থানকে তাৎক্ষনিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন এক ইসরায়েলি মন্ত্রী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে নেয় ইসরায়েল। দখলিকৃত এসব ভূমিতে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করে চলেছে তারা। তবে এই দখলদারিত্বকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্বীকৃতি দেয়নি। আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বসতি স্থাপনকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৭৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের প্রশাসনও এসব বেসামরিক বসতিকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে ঘোষণা করে। পরে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এই মতের সঙ্গে অসম্মতি প্রকাশ করেন। মন্তব্য করেন, এসব বসতি পুরোপুরি অবৈধ বলে মনে করেন না তিনি। এরপরেও গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিকে সরাসরি ‘অবৈধ’ (illegal) না বলে ‘বেআইনি’ (illegitimate) বলে উল্লেখ করে আসছে। এই ইস্যুতে জাতিসংঘে ইসরায়েলকে সুরক্ষাও দিয়ে আসছে তারা। তবে ২০১৬ সালের শেষের দিকে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকে তৎকালীন বারাক ওবামা প্রশাসন।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন এই বিতর্কের সব দিক খতিয়ে দেখে প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বেসামরিক বসতি স্থাপনকে আর আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে বিবেচনা করা হবে না।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের অন্যতম প্রধান ইস্যু ইহুদি বসতি। এগুলোকে শান্তির পথে বাধা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ১৯৬৭ সালে দখল নেওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ১৪০টি বসতি নির্মাণ করেছে ইসরায়েল। এসব বসতিতে প্রায় পাঁচ লাখ ইহুদি বসবাস করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসব বসতিকে অবৈধ বলে বিবেচনা করলেও ইসরায়েল তা মানে না।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলের ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরায়েলের জন নিরাপত্তা বিষয়কমন্ত্রী গিলাড এরদান এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমেরিকান প্রশাসনের এই সাহসী সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই’। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাহেব একরাত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করবে।