পশ্চিমা বিশ্বে হামলার জন্য নিজেদেরকে ক্রমাগত প্রস্তুত করে চলেছে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক সুন্নিপন্থী সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইউরোপজুড়ে হামলা চালানোর জন্য অত্যাধুনিক সব অস্ত্র তৈরি করছে তারা। এসব অস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চালকবিহীন গাড়িবোমা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের দাবি, ইউরোপজুড়ে রক্তক্ষয়ী হামলার জন্য এসব অস্ত্র তৈরি করতে বিজ্ঞানি ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে আইএস।
সিরিয়ার রাক্কা শহরে আইএস গড়ে তুলেছে ‘জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয়’। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রিমোট কন্ট্রোলড বোমা তৈরির কাজ করছে। এসব বোমা সহজে বহনযোগ্য এবং ব্যাপক বিধ্বসী ক্ষমতাসম্পন্ন। আরেকটি ক্ষেত্রে আইএসগুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে। পশ্চিমা বিশ্বের অকেজো ও বাতিল হওয়া হওয়া মিসাইল মেরামত করছে তারা। যা দিয়ে তারা আকাশে উড্ডয়নরত সামরিক বিমান বা যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত করতে পারবে।
আইএসের এসব গবেষণা ও অগ্রগতির খবর জানা গেছে আট ঘণ্টার একটি ভিডিও চিত্র থেকে। এক আইএস যোদ্ধা ভিডিওটি স্কাই নিউজের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়,আইএসের সদস্যরা চালকবিহীন গাড়ি তৈরি করছে। এ গাড়িটিতে বিস্ফোরক যুক্ত করা হচ্ছে। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে গাড়িটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম।
জিহাদিদের দাবি,চালকের আসনে তারা থার্মোস্ট্যাটসের সঙ্গে মানিকুইন বসানো হয়েছে। যাতে করে যানটি মানুষের অবস্থান বুঝতে এবং ইউরোপের নিরাপত্তারক্ষীদের বোকা বানাতে পারে। ভিডিওটি বিভিন্ন দেশে আইএসের কর্মীদের কাছে পাচার করা হবে যাতে করে নিজেরাই গাড়িবোমা বানাতে পারে। চালকবিহীন এ গাড়িবোমা বানাতে সক্ষম হলে আইএস সদস্যদের আর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিজের সদস্যদের আর প্রাণ দিতে হবে।
ভিডিওতে দেখা যায়, আইএস বিজ্ঞানিরা নিজেদের তৈরি থার্মাল ব্যাটারি তৈরি করছে যা দিয়ে মাটি থেকে আকাশে মিসাইল নিক্ষেপ করা যাবে।
এই ব্যাটারি তৈরির ফলে পশ্চিমাদের আগের যুগের পরিত্যক্ত কয়েক হাজার মিসাইল আইএস ব্যবহার করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব মিসাইলে হিট-সিকিং ওয়ার হেড যুক্ত করার ফলে তা দিয়ে আকাশে সামরিক বিমান বা যাত্রীবিমানকে লক্ষ্য করে ছুড়া যাবে। এসব মিসাইল ৯৯ শতাংশ লক্ষ্যভেদী বলে প্রমাণিত। কয়েক দশক ধরে আইআরএ-র মতো সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে এ ধরনের মিসাইল ছিল। কিন্তু ওয়ারহেডের জন্য থার্মাল ব্যাটারি তৈরি করা অসম্ভব হওয়ায় এসব মিসাইল কেউ ব্যবহার করতে পারেনি।
তুরস্কের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে এক আইএস প্রশিক্ষক ভিডিওটিসহ ফ্রি সিরিয়ান আর্মির কাছে ধরা পড়েন। তুরস্কে আটক হওয়া এই প্রশিক্ষক জানান,গোপন এ প্রশিক্ষণটি রাক্কায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে হামলার জন্যই এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ইরাক কিংবা সিরিয়ায় হামলার জন্য এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।
ভিডিওটি দেখে ইউরোপের অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ আশ্চর্য হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের স্পেশাল ফোর্সের সদস্য ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপদেষ্টা মেজর ক্রিস হান্টার জানান,ফুটেজে আইএসের সামরিক বিজ্ঞানে অগ্রগতি দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন,দায়েশের (আইএস)এই ভিডিওটি এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য।
আইএসের প্রচারণা ভিডিওতে আমরা যা দেখেছি তাতে তারা অনেক বেশি যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এসব ভিডিওতে তাদের পদ্ধতি ও অগ্রগতি দেখে অনেকেই উৎসাহী হচ্ছে। তারা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এসব করছে।
ক্রিস হান্টার আরও বলেন, প্রশিক্ষণের ভিডিওতে দেখা গেছে তাদের গবেষণা ও উন্নতির ক্ষেত্র। তারা এখন কোন পর্যায়ে আছে সে সম্পর্কেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেয়েছি। সূত্র: ডেইলি মেইল।
/এএ/বিএ/