X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেএনইউ ছাত্রনেতা গ্রেফতারে বিতর্ক: ‘জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে আনছে বিজেপি’

বিদেশ ডেস্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৮:৪২আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৮:৪৬

জেএনইউ ছাত্রনেতা গ্রেফতারে বিতর্ক: ‘জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে আনছে বিজেপি’ ‘দেশদ্রোহিতা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে’র মামলায় জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতার নিয়ে ভারতজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ‘দোষীদের’ বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। অন্য দিকে বাম সংগঠনগুলো অভিযোগ করে বলেছে, দেশে জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে আনছে বিজেপি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিতর্ক এড়াতে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছেন।
ভারতের পার্লামেন্টে হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় কানহাইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে এআইএসএফ নেতা ও ছাত্রসংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতার করে সাদা পোশাকের পুলিশ। পুরো ক্যাম্পাস ও হলে প্রবেশ করেও ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। বিজেপি পন্থী ছাত্রসংগঠন এবিভিপি ও বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরির অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। এতে জন্ম দিয়েছে আরও বিতর্কের।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদকীয়তেও কানহাইয়ার গ্রেফতারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, জেএনইউ-তে ২০-২৫ জনের শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভের ঘটনায় যেভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন তা অপ্রত্যাশিত। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে বক্তব্য ও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে দুই মন্ত্রী বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন। মন্ত্রীদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, সেদিকে তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

ছাত্র গ্রেফতারের ঘটনায় মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে বলেও সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

ক্যাম্পাসে পুলিশের প্রবেশ ও ছাত্রনেতা গ্রেফতারের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় মিছিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া এ ঘটনার নিন্দা করে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, ওই অনুষ্ঠানকে ‘দেশবিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে এবিভিপি। ফলে অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করা হয়। এরপরও অনুষ্ঠান পালন করায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অনুমতি প্রত্যাহারের পরেও অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ম-শৃঙ্খলার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন বিষয়। এর সঙ্গে দেশদ্রোহের কোনও সম্পর্ক নেই।

পুলিশের দাবি, ‘দেশবিরোধী’ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠায় তাদের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন বিজেপির ছাত্রসংগঠন ছাড়া সবগুলো ছাত্রসংগঠনের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশকে ব্যবহার করে জেএনইউ ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছে বিজেপি। এঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে মানবসম্পদ উন্নয়মন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি আলাদা মাত্রা পেয়েছে।

গণতন্ত্রে বিক্ষোভ করার অধিকার রয়েছে জানিয়ে ছাত্রনেতাকে গ্রেফতারের ঘটনাকে ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে কংগ্রেস। দলের নেতা কপিল সিবাল জানান, দেশদ্রোহের মতো গুরুতর অভিযোগ আনার আগে সরকারের সতর্কভাবে বিচার করা উচিত।

প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও। শুক্রবার বিকেলেই সিপিআই নেতা ডি রাজা, পল্লব সেনগুপ্তরা জেএনইউ ক্যাম্পাসে যান। সিপিআই নেতারা উপাচার্যের কাছে প্রতিবাদ জানান। এ সময় তারা প্রশ্ন করেন, পুলিশ কী করে ক্যাম্পাসে ঢুকল? কী করে হলগুলোতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে?

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ও জেএনইউ সাবেক শিক্ষার্থী সীতারাম ইয়েচুরি জানান, জেএনইউতে যা ঘটেছে তা তো জরুরি অবস্থার পরে আর কখনও হয়নি।

সিপিআই নেতারা শনিবার এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আইনি ও রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন সিপিআইসহ বাম নেতারা। সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্ত জানান, এটা নিয়ে যতদূর যেতে হয় ততদূর তারা যাবেন।

গ্রেফতার হওয়া ছাত্রনেতা আদালতে বলেছেন, ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়নি।  তিনি ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ায় এবিভিপি সমর্থকদের সঙ্গে আয়োজকদের বাকবিতণ্ডা হয়। তখন ঝামেলা থামাতে তিনি ঘটনাস্থলে যান। এই দাবির সপক্ষেও ভিডিও ফুটেজ দেখান তিনি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজালের সমর্থনে বিক্ষোভ হওয়ায় শনিবার ক্ষোভ জানান সাবেক সেনা সদস্যরা। এ ধরনের ঘটনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাবর একটি চিঠি দেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চললে নিজেদের ডিগ্রি ফেরত দেবেন বলে হুমকি দেন সেনা সদস্যরা।

কানহাইয়াকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের কেন সন্ত্রাসীদের মতো করে ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা। এদিকে ইন্ডিয়া গেটের কাছে পাল্টা বিক্ষোভ করেন এবিভিপি নেতারা।

এর আগে ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রবেশ করে ছাত্র পেটানোর ঘটনায় ‘হোক কলরব’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার।

/এএ/

সম্পর্কিত
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বশেষ খবর
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ