X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
কানহাইয়াকে জেরা পুলিশের

কখনও পাকিস্তানে গিয়েছেন?

বিদেশ ডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৩:৪৮আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৩:৫০

জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি কানহাইয়া কুমারকে দীর্ঘ জেরা করেছে ভারতের পুলিশ। পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে তদন্তকারীদের নানা অদ্ভুত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। একটা প্রশ্ন ছিল এমন-আপনি কখনও জম্মু-কাশ্মীর বা পাকিস্তান গিয়েছেন? যদি গিয়ে থাকেন, তা হলে কেন?

পুলিশের সব প্রশ্নের জবাব অবশ্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দিয়েছেন কানহাইয়া কুমার। পুলিশের সওয়াল, আর কানহাইয়ার জবাব। বিষয়টি সামনে এনেছে জেএনইউ-এর বিতর্কিত অধ্যায়ের অনেক অজানা তথ্য। ওই জেরার চুম্বক অংশটি নিচে তুলে ধরা হলো।

কখনও পাকিস্তানে গিয়েছেন?

পুলিশ: উমর খালিদ, আশুতোষ, অপরাজিতা রাজা, অনন্ত প্রকাশ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য— আপনার মতো এরাও অভিযুক্ত। এদের গ্রেফতার করতে কিভাবে সাহায্য করবেন?

কানহাইয়া: এদের বেশিভাগই জেএনইউ-এর শিক্ষার্থী। তবে আমার সংগঠনের সদস্য একমাত্র অপরাজিতা। তাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। উমর, আশুতোষ আর প্রকাশ হলেন জেএনইউ-এর ছাত্র। তারা ক্যাম্পাসেই থাকেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তাদের সম্পর্কে জানা নেই। বাকি যাদের নাম বলেছেন, তাদের আমি চিনি না। কখনও দেখিনি।

পুলিশ: এই অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে আপনি কি আমাদের সঙ্গে আসবেন? যদি না আসেন, তা হলে কেন?

কানহাইয়া: তারা জেএনইউ-এর শিক্ষার্থী। একেকজন একেকটি হোস্টেলে থাকেন। এছাড়া তারা কখন কোথায় থাকেন আমার জানা নেই।

পুলিশ: এদের সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যাবে কী করে?

কানহাইয়া: উমর, অপরাজিতা, আশুতোষ, অনন্তরা জেএনইউ-এর শিক্ষার্থী। আমার মনে হয়, ক্যাম্পাসেই তাদের পাওয়া যাবে।

পুলিশ: আপনি কখনও জম্মু-কাশ্মীর বা পাকিস্তান গিয়েছেন? যদি গিয়ে থাকেন, তা হলে কেন?

কানহাইয়া: ২০১১ বা ২০১২ সালে একবার শ্রীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম একটি সেমিনারে যোগ দিতে। পাকিস্তান কখনও যাইনি।

পুলিশ: আপনি কোন রাজনৈতিক দলে আছেন? সে দলে আপনার পদ কি?

কানহাইয়া: অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস’ ফেডারেশন। আমি ইউনিট সেক্রেটারি ছিলাম এবং রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলাম। এখন আমি জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি।

পুলিশ: ওই রাজনৈতিক সংগঠনে আপনার সহকর্মী বা বন্ধু কারা?

কানহাইয়া: বিশ্বজিত কুমার, ভল্লি উল্লাহ কাদরি, অপরাজিতা রাজা, অরুণ।

পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জেএনইউ ক্যাম্পাসে ক কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন আপনারা?

কানহাইয়া: সেদিন আমি বা আমার সংগঠন কোনও কর্মসূচির আয়োজন করেনি। আমি এ রকম কর্মসূচি সমর্থনও করি না।

পুলিশ: সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নামে যে পোস্টার আপনি দেখিয়েছেন, তাতে উমর, অনির্বাণদের নাম রয়েছে। তারা কি জেএনইউ’র শিক্ষার্থী না অন্য কিছু?

কানহাইয়া: এদের কেউ আমার সংগঠনের নন। তবে তারা জেএনইউ-এর শিক্ষার্থী।

পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, উমর খালিদ, অপরাজিতা রাজা, আশুতোষ, অনন্ত, অনির্বানদের সঙ্গে আপনিও একই মিছিলে হাঁটছেন। এদের মধ্যে কয়জন আপনার দলের সঙ্গে যুক্ত?

কানহাইয়া: শুধু অপরাজিতা রাজা আমার সংগঠন এআইএসএফ-এর সদস্য।

পুলিশ: যে শিক্ষার্থীরা দেশবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাদের থামানোর জন্য আপনি কোনও রকম চেষ্টা কি করেছিলেন?

কানহাইয়া: আমি তখন সেখানে ছিলাম না। সবরমতীতে যে কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছিল, আমি তার অংশ ছিলাম না। কিন্তু সবরমতী ধাবা থেকে গঙ্গা ধাবা পর্যন্ত রাস্তায় ছাত্রদের মধ্যে যা সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তা থামতে ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে আমাকে সেখানে যেতে হয়েছিল। আমি নিরাপত্তারক্ষীদের বলেছিলাম মারামারি থামাতে। ছাত্রদের বলেছিলাম, নিজেদের মধ্যে মারামারি না করতে। কিন্তু আমি যতক্ষণ সেখানে ছিলাম, ততক্ষণ কোনও দেশবিরোধী স্লোগান ওঠেনি।

পুলিশ: ছাত্র সংসদের সভাপতি হিসেবে পুলিশকে আপনি কি আগে থেকে কিছু জানিয়েছিলেন, যাতে সংঘর্ষ ঠেকানো সম্ভব হয়?

কানহাইয়া: আমি যখন পৌঁছেছিলাম, তখন সবরমতী ধাবা এবং গঙ্গা ধাবাতে পুলিশ ছিল।

পুলিশ: জেএনইউ কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তারক্ষীদের কি আপনি বলেছিলেন, দেশবিরোধী কার্যকলাপ রুখতে?

কানহাইয়া: এ রকম কোনও ঘটনার কথা আমি জানতাম না।

পুলিশ: এটা কি সত্যি যে আফজল গুরু এবং মকবুল ভাটের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে পোস্টার লাগানো হয়েছিল?

কানহাইয়া: হ্যাঁ।

পুলিশ: খালিদ, অনির্বাণদের কারা সমর্থন করছেন?

কানহাইয়া: তারা জেএনইউ-এর ছাত্র জানি। কিন্তু তাদের বিষয়ে আর কিছু জানা নেই।

পুলিশ: এ রকম কার্যকলাপ কি জেএনইউ ক্যাম্পাসে চলতে দেওয়া উচিত?

কানহাইয়া: না।

পুলিশ: এই ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের জন্য অর্থ জোগাচ্ছেন কারা?

কানহাইয়া: আমি জানি না।

পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির ভিডিও ফুটেজ বলছে, আপনি সেদিনের বেআইনি কার্যকলাপে অংশ নিয়েছিলেন। আপনার এ ব্যাপারে কী বলার আছে?

কানহাইয়া: ৯ ফেব্রুয়ারি দিনের বেলা আমি ঘুমোচ্ছিলাম। বিকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠি। ফ্রেশ হওয়ার পর হোস্টেল থেকে বেরিয়েছিলাম চা খাওয়ার জন্য। হোস্টেলের বাইরে কয়েকজন ছাত্র বলছিলেন, সবরমতী হোস্টেলে এক দল শিক্ষার্থী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছেন। হোস্টেলের বাইরে এবিভিপি রাস্তা অবরোধ করে রাখে। তাদের কাছেই শুনি, এবিভিপির রাস্তা অবরোধ দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। এদে যে কোনও সময় হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

একটা পরোটা হাতে নিয়ে আমি আরও কিছু ছাত্রকে নিয়ে বাইকে করে সবরমতী হোস্টেলের দিকে রওনা দেই। সেখানে গিয়ে দেখি, পুলিশ পিসিআর ভ্যান এসেছে, প্রচুর পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। একদিকে এবিভিপি কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমি সেখানেই থামি। দেখি আরেক দল শিক্ষার্থী একটা প্রতিবাদ মিছিল বের করেছে।

দুই পক্ষই পরস্পরকে গালমন্দ করা শুরু করে। তারপরই প্রাবল মারামারি শুরু হয়। সংঘর্ষ থামাতে আমি হস্তক্ষেপ করি। দুই পক্ষের মাঝে মানববন্ধন তৈরি করে গোলামাল থামানোর চেষ্টা করি। উভয় পক্ষকেই আমি থামানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এবিভিপি’র বিরোধী পক্ষ গঙ্গা ধাবার দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে শুরু করে। এবিভিপি’ও তাদের বাধা দিতে থাকে। গোলমাল চলতে চলতেই দুই পক্ষ গঙ্গা ধাবায় পৌঁছে যায়। সেখানে তখন বিশাল পুলিশ বাহিনী রয়েছে।

পুলিশ হস্তক্ষেপ করার পর মারামারি থামে। তার পরও দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। আমি দু’পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করি। আমি ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দেই এবং পুরো ঘটনার নিন্দা করি। আমার ভাষণ শেষ হওয়ার পর দু’পক্ষই ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচির যে সব পোস্টার লাগানো হয়েছিল ক্যাম্পাসে, সেসব আপনি খুলে ফেললেন না কেন?

কানহাইয়া: আমাকে কেউ কিছু বলেনি, আমি জানতামও না অনুষ্ঠানটার ব্যাপারে।

পুলিশ: বিশ্বাবিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং যৌক্তিকতার পরিসর থাকা নিঃসন্দেহে মৌলিক অধিকার। কিন্তু দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং দেশবিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের অপব্যবহার। আপনি মানেন সে কথা?

কানহাইয়া: হ্যাঁ, আমি এ কথা মানি। সূত্র: আনন্দবাজার।

/এমপি/

সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা