X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আজাদি’র মানে কী

বিদেশ ডেস্ক
০৯ মার্চ ২০১৬, ১৫:২৭আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৬, ১৫:২৭
image

অদিতি ফাদনিস জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের পর যে শব্দটি একেবারেই সামনে চলে এসেছে তা হলো আজাদি বা স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতার জন্যই সবসময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে‘আজাদি'র মানে কী? ভারতের রাজনীতিবিষয়ক লেখক ও সম্পাদক অদিতি ফাদনিস বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে লেখা এক নিবন্ধে সেটাই ধরতে চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন যে, নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে ৫টি জিনিস শিখেছেন। নিজের শেখা সে বিষয়গুলোকে নিবন্ধে তুলে ধরেছেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্রুপদী উদারনীতি আর গণতন্ত্রের নৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং অ্যাকাডেমিক পরিমণ্ডলে নিজেকে জীবন্ত করে রেখেছে।

উল্লেখ্য, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকধারী অদিতি ১৯৮২-৮৩ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৩ সাল থেকে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। ভারতের রাজনীতি নিয়ে সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখার পাশাপাশি বইও রচনা করেন অদিতি। নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি যে নিবন্ধটি লিখেছেন তার ভাব-ভাষান্তর তুলে ধরা হল।

আমি যদিও নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিনি তারপরও আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আর, তাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছ থেকে অসাধারণ কিছু বিষয় আমি শিখতে পেরেছি। 

কান পেতে শোনা: কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ক্যাম্পাসে যেতে চান তবে তাকে বাসের (৬১২/৬১৫) শব্দ শোনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ক্ষণ নেই। বাসগুলো খেয়ালখুশিমতোনই আসা-যাওয়া করে। আর বাসে ওঠার পর তা এমন এক দুনিয়ায় নিয়ে যা দেখে কারও মনে হতে পারে যে এটি নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় নয়। সেখানে ধ্বনি আর শব্দ যেন এক বিন্দুতে এসে সম্মিলিত হয়। নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে একইসঙ্গে কোস্টা গ্যাভরাস, সিমন এন্ড গারফাঙ্কেল, লিওনার্দ কোহেন, কুমার গান্ধর্ভ, বিষ্ণু সাহাসরানামাম, টুকারামের কবিতা, পুরানদারাদাসার গান এবং হাভেলি সঙ্গীত চিনিয়েছে। অভিবাসীদের কষ্ট ও দুর্দশা নিয়ে নির্মিত গমন ছবিটি আমি নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখেছি। হীরাদেবী মিশরার গাওয়া ‘আজা সানভারিয়া তোহে গারভা লাগা লু’ গানটিতো একেবারেই ভোলার নয়।

নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ
বিশ্ববিদ্যালয়টি যে কেবল গান আর চলচ্চিত্রে মুখর থাকে তা নয়, এখানে বহুমতের সম্মিলন ঘটে থাকে। এখানে মার্ক্সবাদীরা কখনও কখনও ট্রটস্কিবাদীদের রোমান্টিক বিপ্লবী বলে থাকেন। আবার ট্রটস্কিবাদীরা মার্ক্সবাদীদের সংশোধনবাদী ডাকেন। এদিকে রাষ্ট্রবিরোধী মুক্তিপন্থীরা মার্ক্সবাদীদের ডাকেন ফ্যাসিবাদী হিসেবে আর সমাজতন্ত্রীরা মার্ক্সবাদীদের ডাকেন যোগসাজশকারী (বিশেষ করে মিত্রোখিন আর্কাইভের নথি প্রকাশের পর) হিসেবে। এসব ডিসকোর্স বোঝার জন্য আপনাকে আগে ইশারাগুলো বুঝে নিতে হবে। তারপরই কেবল জাতীয়তা, পরিচয় আর ব্যক্তিস্বাধীনতার বিতর্কে আপনি নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন, তুলতে পারবেন প্রশ্ন।

 

নিরন্তর অধ্যয়ন: আপনি যদি এসব নিরন্তর বিতর্কে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান, সেক্ষেত্রে প্রসঙ্গগুলো ধরে আপনার পড়াশোনা ও বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। রুশ ভাষাভাষী চীনা লেনিনবাদী ওয়াং মিং, যিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী একটি ইউনাটেড ফ্রন্টের উপদেষ্টা ছিলেন এবং মাও সে তুং এর আলোচিত শত্রু হয়ে উঠেছিলেন। তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তিনি ভালো মানুষ ছিলেন নাকি খারাপ মানুষ ছিলেন? যদি আপনি নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন তবে এ ব্যাপারে আপনার মতামতের পরিসর রয়েছে। তবে আপনাকে জানতে হবে যে এরিক ফ্রম, আরডি লাইং, মার্কজ, ইউরোকমিউনিস্ট এবং নয়া বামপন্থীরা কী বলছেন? এনটিআর রিয়েলি’র উত্থানের মানে কী? সতিদাহ প্রথার মানে কি নারীর জীবন বিলিয়ে দেওয়ার অধিকার?

কানহাইয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন
বাস স্ট্যান্ড, বইয়ের দোকান, গায়ারাসি লালের সবজি দোকান (সেসময়ে ক্যাম্পাসের একমাত্র দোকান যেখানে বেশি দামে সবজি কেনা ছাড়া উপায় থাকতো না...)অর্থাৎ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরেই বিতর্ক শোনা যেত।

 

ভাবনার পরিসর বিস্তৃত করা: কিন্তু শেষ পর্যন্ত আপনার নিজের জন্যই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি কি মিউনিরকায় ১৯৮৪ সালে উত্তেজিত জনতার অত্যাচারের শিকার হওয়া শিখ পরিবারগুলোকে ক্যাম্পাসের ভেতরে আশ্রয় দিতে যাচ্ছেন? নাকি এটি আপনার সমস্যা নয় ভেবে নির্লিপ্ত থাকতে চাইছেন? আপনি কি সরকার ও ধর্মের মাঝামাঝি অবস্থান করা কোনও বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়াতে চান না?

নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
যখন প্রগতিশীল বন্ধুরা বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে বাসে উঠতে না পেরে ক্যাব ডাকে এবং ক্যাব স্ট্যান্ড থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্বের জন্য ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন আপনার অবস্থান কী হবে? সবগুলো ক্ষেত্রেই আপনাকে আপনার অবস্থান নিতে হবে। সময়ের সাথে সাথে এসব ঘটনা ম্লান হয়ে যাবে। কিন্তু আপনাকে সবসময় তা নিয়ে ভাবতে হবে।

ক্ষমতাশক্তির প্রতি অবিশ্বাস: সম্প্রতি অরুণ সুরি বলেছেন, ‘কখনও সরকারকে বিশ্বাস করতে নেই।’ নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে তা খুব ভালোভাবে বোঝানোর ক্ষমতা রাখে।

অকাতরে দিয়ে যাওয়া: নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ইট-পাথরের একটি স্তূপ মাত্র নয়; এখানকার প্রতিটি মাটির টুকরো, প্রতিটির জঙ্গলের গুল্ম, প্রতিটি দীর্ঘ ও চক্রাকার রাস্তার আলাদা আলাদা গল্প আছে। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় চমৎকার কারণ বিনিময়ে কিছু না চেয়ে সে সবকিছু আপনার জন্য বিলিয়ে দিতে পারে। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
ভাষান্তর: ফাহমিদা উর্ণি

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকাণ্ড চায় না বাংলাদেশ
কেক কেটে আর কাচ্চি বিরিয়ানিতে বন্ধুত্বের উদযাপন দিল্লি ও ঢাকার
শ্রীলঙ্কায় গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর তৈরি করবে চীন
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো যুবকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো যুবকের
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি