X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যেভাবে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত হয়

বিদেশ ডেস্ক
১১ মার্চ ২০১৬, ১৭:৫৩আপডেট : ১১ মার্চ ২০১৬, ১৭:৫৫
image

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যেভাবে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত হয় সম্প্রতি সাইবার ডাকাতির শিকার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিলিপাইনের জুয়ার টেবিল ঘুরে যে হংকংয়ে চলে গেছে তার নেপথ্যে রয়েছে ক্যাসিনো সংক্রান্ত আইন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, ফিলিপাইনে ক্যাসিনো বৈধ হওয়ায় এবং মুদ্রাপাচার আইন ক্যাসিনোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়ায়, ডাকাতির বেশিরভাগ অর্থই এ পথে বিদেশে পাচার হয়েছে। আর তা রূপান্তরিত হয়েছে জুয়ার কয়েনে। তবে বাংলাদেশের পাচার হওয়া অর্থ কিভাবে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত হচ্ছে?
ফিলিপাইনের ক্যাসিনো পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট এন্ড গ্যামিং কর্পোরেশন (পিএজিসিওআর) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সেখানে অন্তত ২৩টি বৈধ ক্যাসিনো রয়েছে। এর বেশিরভাগই পিএজিসিওআর কর্তৃক পরিচালিত। অন্যান্য বৈধ ক্যাসিনোগুলোও ওই সংস্থাটি থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত। আরও তিনটি ক্যাসিনো নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এসব ক্যাসিনোতে বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে যে কোনও অর্থ দিয়ে জুয়া খেলা যায়। আর এজন্য আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমেই সার্ভিস চার্জ সহ নগদ অর্থ জমা দিতে দিয়ে সমপরিমাণের কয়েন বা চিপস কিনে নিতে হবে। ফিলিপাইনের বেশিরভাগ ক্যাসিনোতেই ফিলিপিনো মুদ্রা পেসো ব্যবহার করা হয়। একেক রঙের ও ধরণের কয়েনের জন্য একেক রকম মূল্যমান নির্ধারিত থাকে। সাধারণত সর্বনিম্ন বিশ ডলারের সমমানের কয়েন থেকে শুরু করে এক হাজার ডলার সমমানের কয়েন পাওয়া যায় এসব ক্যাসিনোতে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে দশ হাজার বা এক লাখ ডলারের বিশেষ কয়েনও দিয়ে থাকে এসব ক্যাসিনো।

ওই কয়েনগুলো নির্ধারিত সার্ভিস চার্জ দিয়ে ভাঙিয়ে নেওয়া যায়। আবার কেউ তা রেখে দিয়ে পরবর্তী সময়েও চার্জ সহ ভাঙিয়ে নিতে পারেন। আর আন্তর্জাতিকভাবে সম্পর্কিত ক্যাসিনোগুলোর ক্ষেত্রে এক ক্যাসিনোর কয়েন অপর ক্যাসিনোতেও ভাঙানো যায়। অর্থাৎ, এই কয়েকও এক ধরনের ব্যাংক চেকের মতোই। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যেভাবে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত হয়

ফিলিপাইনের তিনটি বৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে পাচার হয়েছে। সোলেয়ার রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো, সিটি অব ড্রিমস এবং মাইডাস ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা হয়েছে অর্থ দিয়ে। জুয়ার আসরে এই অর্থগুলোকে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত করে বাজি ধরা হয়। চিপসের বিভিন্ন মূল্যমান থাকলেও এসব ক্যাসিনোতে মিলিয়ন বা লাখ ডলারের চিপসও অসম্ভব নয়। আর ওই বাজির কয়েন হাতবদল হয়ে তা চলে যায় অন্য কারো হাতে। আর পরবর্তীতে সেই চিপসগুলোকে নগদ অর্থে রূপান্তরিত করে ট্যাক্স পরিশোধ করার মাধ্যমে বৈধ করা হয়।

উল্লেখ্য, ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী ক্যাসিনোতে জুয়ায় জেতা অর্থ থেকে নির্ধারিত ট্যাক্স দিলে তা বৈধ আয় বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয়, দেশটিতে ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় পড়ে না। তাই পাচার করা অর্থও ক্যাসিনোতে প্রবেশের মধ্য দিয়ে বৈধতা পেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যেভাবে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত হয়

উল্লেখ্য, হ্যাকারদের একটি গ্রুপ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোড ব্যবহার করেই এই অর্থ চুরি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম এবং সুইফট কোড কন্ট্রোলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৩০টি পেমেন্ট অ্যাডভাইজ পাঠায় ফিলিপাইনের স্থানীয় ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের জন্য। এর মধ্যে ৪টি অ্যাডভাইজ অনার করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। যার মাধ্যমে মোট ৮১ মিলিয়ন ডলার সফলভাবে পাচার করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা।

ফিপিপাইনের সংবাদপত্র ইনকোয়েরার জানিয়েছে, হ্যাকিং-এর মাধ্যমে এই অর্থ পাচারের ঘটনায় ছয়জনকে নজরদারিতে রেখে তদন্ত করছে দেশটির মুদ্রাপাচারবিরোধী সংস্থা, অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমসিএল)। ওই সন্দেহভাজনরা হলেন- মাইকেল ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার, আলফ্রেড ভারগারা, এনরিকো ভাসকুইজ, উইলিয়ার সোগো এবং কিম অং।

সাইবার ডাকাতির ৮১ মিলিয়ন ডলারের বেশিরভাগই ফিলিপাইনের স্থানীয় মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরিত করা হয় ফিলরেম নামক একটি ফরেন এক্সচেঞ্জ ফার্মের মাধ্যমে। গো কোম্পানি ওই অর্থ ওয়েইকাং জু-এর একাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত কিম সিন অং ওই অর্থ ক্যাসিনোতে প্রবেশ করান।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যেভাবে জুয়ার কয়েনে রূপান্তরিত হয়

ধারণা করা হচ্ছে, ক্যাসিনো ঘুরে ওই অর্থ বৈধতা পাওয়ার পর তা পুনরায় ডলার বা অন্য কোন বিদেশি মুদ্রায় রূপান্তর করে ফিলিপাইনের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তা হংকংয়ের একটি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ওই অর্থ বিদ্রেশি মুদ্রায়  ফিলিপাইনের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

তবে যদি কেউ মিলিয়ন ডলারের ক্যাসিনোর বাজির চিপস নিজের কাছে রেখে দেয় অথবা এই চিপস ফিলিপাইনের বাইরে সরিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে এটি ব্যাংক চেকের মতোই থেকে যাবে, যা পরবর্তীতে ক্যাসিনোর সার্ভিস চার্জ দিয়ে ভাঙিয়ে নেওয়া যাবে। আর এ ক্ষেত্রে কোনও আইনী ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব নয়। অন্তত ফিলিপাইনের মুদ্রাপাচার আইন সেই কথাই বলে। সূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, ইনকোয়ারার, ওয়ার্ল্ড ক্যাসিনো ডাইরেক্টরি।  

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
শিরোপার দৌড়ে বড় ধাক্কার পর ক্ষমা চাইলেন ক্লপ
শিরোপার দৌড়ে বড় ধাক্কার পর ক্ষমা চাইলেন ক্লপ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম