এক সময়ের রাজমিস্ত্রী এবং খণ্ডকালীন জেলে ৭১ বছর বয়সী জোয়াও পেরেইরা। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর কাছে একটি দ্বীপবর্তী গ্রামে বসবাস তার। ২০১১ সালে দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর সময় জোয়াও হঠাৎ করে দেখতে পান একটি পেঙ্গুইন মরণাপন্ন অবস্থায় সাগরতীরে পড়ে আছে। পেঙ্গুইনটির গোটা শরীর তেলে ঢাকা।
এমন অবস্থায় পেঙ্গুইনটিকে মাটি থেকে তুলে নিয়ে তার পালক থেকে তেল পরিষ্কার করে দেন জোয়াও। পেঙ্গুইনটির শারীরিক শক্তি ফিরিয়ে আনতে তাকে প্রতিদিন মাছ খাওয়াতে শুরু করেন তিনি। তার নাম দেন ডিনডিম।
এক সপ্তাহ পর পেঙ্গুইনটিকে আবারও সাগরে ছেড়ে দেন জোয়াও। কিন্তু পেঙ্গুইনটি তাকে ছেড়ে যায় না। এভাবে ১১ মাস ধরে জোয়াও-এর সঙ্গে থাকে ডিনডিম। তার নতুন পালক গজায়। তারপর একদিন সে চলে যায়।
এর কয়েক মাস পরের কথা। একদিন ডিনডিম আবারও ফিরে আসে সেই সমুদ্র সৈকতে। সাগরতীরে জোয়াওকে দেখে তার পিছু নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যায় ডিনডিম।
গত ৫ বছর ধরে ডিনডিম বছরের ৮ মাসই জোয়াওয়ের সঙ্গে কাটিয়ে আসছে। আর বাকি সময় সে আর্জেন্টিনা আর চিলির উপকূলে প্রজননকালীন সময় কাটিয়ে থাকে বলে ধারণা করা হয়। মনে করা হয়, প্রতিবছর ৫ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নিজের জীবন রক্ষাকারী মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে আসে ডিনডিম।
গ্লোবো টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জোয়াও বলেন, ‘আমি পেঙ্গুইনটিকে আমার নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসি। আমি বিশ্বাস করি পেঙ্গুইনটিও আমাকে ভালোবাসে। কেউ ওকে স্পর্শ করতে পারে না। কেউ যদি তা করতে চায় তবে ডিনডিম তাদের ঠোকর মারে। কিন্তু ও আমার কোলে বসে থাকে, তাকে গোসল করাতে দেয়, খাওয়াতে দেয়।’
অনেকে বলে থাকেন ডিনডিম নাকি জোয়াওকেও পেঙ্গুইন বলে মনে করে।
জীববিজ্ঞানী ক্রাজেওস্কি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনেডন্টকে বলেন, ‘আমি এমনটা এর আগে কখনও দেখিনি। আমি মনে করি জোয়াওকে নিজ পরিবারের সদস্য বলেই মনে করে ডিনডিম। সম্ভবত তাকে পেঙ্গুইন মনে করে।’
প্রথম যখন পেঙ্গুইনটি লাপাত্তা হ গিয়েছিল তখন অনেকেই জোয়াওকে বলেছিলেন ডিনডিম আর ফেরত আসবে না। অথচ গত কয়েক বছর ধরেই ডিনডিম জোয়াওয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসছে।
‘ও প্রতিবছর জুনের দিকে আসে আর ফেব্রুয়ারির দিকে চলে যায়। প্রতিবছরই ওকে আগের চেয়ে আরও বেশি আদুরে বলে মনে হয় আমার কাছে।’ বলেন জোয়াও। সূত্র: মেট্রো
/এফইউ/বিএ/