X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

কলকাতার ফ্লাইওভার ধসের নেপথ্যে

বিদেশ ডেস্ক
৩১ মার্চ ২০১৬, ১৮:০২আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৬, ১৮:০২
image

1 দেখে শিখতে জানে না! ঠেকেও শিখতে জানে না ‘পরিবর্তনে’র সরকার! এমনকি, জানে না তিন বছরে শুধরে নিতেও!
উল্টোডাঙায় উড়ালপুল ভেঙে পড়েছিল ঠিক তিন বছর আগে। ২০১৩-র মার্চে। ‘পরিবর্তনে’র জমানায়! যখন অনেক উদ্যম-টুদ্যমের কথা শোনা গিয়েছিল! ‘পরিবর্তনে’র সরকার দেখে আর ঠেকে শিখতে জানলে, তিন বছরে দ্রুত ভুল শুধরে নিতে জানলে, বৃহস্পতিবার উড়ালপুল ভেঙে জোড়াসাঁকো কার্যত শ্মশান হয়ে যেত না! শহরে আজকের এই এত বড় সর্বনাশের দায়টা কার? প্রশ্নটা এ ভাবেও তোলা যায়, দায়টা প্রথমেই কে বা কারা ঝেড়ে ফেলতে চাইবেন?
তথ্য বলছে, ওই ঘটনার জন্য যদি প্রথমেই কাউকে ‘কৃতিত্ব’ দিতে হয়, তা হলে তার নাম- কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। 

কেএমডিএ-র ‘কৃতিত্ব’ কোথায়? 

অনেক ভেবে-চিন্তে, বিস্তর খোঁজ-খবর নিয়ে কেএমডিএ ওই উড়ালপুল নির্মাণের কাজের বরাতটা দিয়েছিল হায়দরাবাদের একটি নির্মাণ সংস্থা ‘আইভিআরসিএল’-কে! যে সংস্থাটির মাথায় ছিল অনেক ‘গৌরবের পালক’! যে সংস্থাটিকে আগেই কালো তালিকাভুক্ত করে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। তাকে কালো তালিকায় ফেলে দিয়েছিল ঝাড়খণ্ড সরকারও। গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের শুরু করা তদন্তের প্রেক্ষিতে ওই সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও। ‘আইভিআরসিএল’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কাজের যথাযথ পরিবেশ গড়ে তুলতে না পারায় সংস্থাটির দুই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

যাদের সামনে পর পর তিনটি রাজ্যের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তাদের কাজকর্মের গুণমান আর গাফিলতির জন্য, সেই ভিন রাজ্যের ‘আইভিআরসিএল’-কেই ওই উড়ালপুল বানানোর কাজের বরাত দিয়েছিল কেএমডিএ! কত টাকার বরাত? ১৬৪ কোটি টাকার।

কেএমডিএ-র ‘কৃতিত্ব’কে কি খাটো করা যায়?

আর এই ঘটনায় শুধু কেএমডিএ-কে কাঠগড়ায় তুলেই কি নিজের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে ‘পরিবর্তনে’র সরকার?

রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র পর পরই উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল উল্টোডাঙায়। তাতেও প্রচুর মানুষ মারা যেতে পারতেন। কিন্তু সেটা ছিল মধ্য রাতের ঘটনা। তাই জান-প্রাণ বেঁচে যায় বহু মানুষের। তার পর শহরের আরেক প্রান্তে আরেকটি উড়ালপুল বানানোর সময় যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার ওপর কি কড়া নজর রাখা উচিত ছিল না ‘পরিবর্তনে’র সরকারের? 

ঠিকই, আড়াই কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের ওই উড়ালপুলটি বানানোর কাজটা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। সাত বছর আগে! ওই উড়ালপুলের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২-র মার্চে। তার পরেও ‘হচ্ছে হচ্ছে’ করে সময় পিছনো হয়েছে। তার পর ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, গত বছর মে মাসেই ওই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এর পরেও কেটে গিয়েছে পাক্কা একটা বছর। তবু কাজ শেষ হয়নি। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগেই জানিয়েছিলেন, এ বছরের গোড়ার দিকেই চালু হয়ে যাবে ওই উড়ালপুল। মুখ্যমন্ত্রীও কথা রাখেননি! তাঁর দেওয়া সময় বদলে দিয়েছিলেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমই। জানিয়েছিলেন, ‘‘কাজটা শেষ হতে একটু দেরি হবে।’’ সামনে ভোট। সম্ভবত তাই আরও কতটা দেরি হবে, তা বলেননি পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। ভাবুন, কী করিৎকর্মা সংস্থাকে দিয়ে কাজটা করাচ্ছিল কেএমডিএ!

হায়দরাবাদের ওই নির্মাণ সংস্থাটি কতটা ‘গুণের নিধি’ তা কেএমডিএ জানত না? উল্টোডাঙার ঘটনার পরেও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় খোঁজ-খবর রাখেননি? খবর নেননি পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম? রাজ্যে রাজ্যে ওই নির্মাণ সংস্থাটির বদনামের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছয়নি? এই ঘটনার পর পরই আজ মুম্বই শেয়ার বাজারে ওই নির্মাণ সংস্থাটির শেয়ারের দাম পড়ে গিয়েছে ৪.৪৪ শতাংশ।

প্রযুক্তিবিদরা কী বলছেন?

মূলত ওই উড়ালপুলের নকশায় ভুল ছিল বলেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল বৃহস্পতিবার। বড়সড় ত্রুটি ছিল ওই উড়ালপুলের গার্ডার স্ল্যাব নির্মাণে। যতটা ভারী থাকা উচিত সেই স্ল্যাবগুলি, তার চেয়ে সেগুলি অনেক অনেক বেশি ভারী ছিল। তাই সেগুলি ভেঙে পড়েছে।

এখানেও আঙুলটা উঠছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের দিকে। কলকাতা পুরসভার দিকে। কেএমডিএ-র দিকে তো বটেই।

নকশায় যদি বড়সড় গলদ থেকেই থাকে, তা হলে সেই নকশা কী ভাবে অনুমোদন করল কলকাতা পুরসভা?

সাত বছর ধরে ওই উড়ালপুল বানানোর কাজটা চলছে। আর বার বার তা শেষ হয়ে যাওয়ার সময় ধার্য করা হচ্ছে। আর সেটা পিছনোও হচ্ছে। উল্টোডাঙার ঘটনার পরেও কেন সেটা হচ্ছে, কোথাও কোনও গাফিলতি থেকে যাচ্ছে কি না, তার খোঁজখবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না কেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম?

এ বছরের গোড়ায় ওই উড়ালপুলের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানানোর পরেও যে তা হল না, সেই প্রশ্নটা কি মাথায় এসেছিল ‘পরিবর্তনে’র সরকারের কোনও স্তরে?

তাঁর দেওয়া ‘ডেডলাইনে’ কেন উড়ালপুলের কাজটা শেষ হল না, সেই খবরাখবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন কি মুখ্যমন্ত্রী?

 

সৌজন্য: আনন্দবাজার পত্রিকা

 

/বিএ/

 

সম্পর্কিত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী নিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
সর্বশেষ খবর
চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
উপজেলা নির্বাচনচেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন অপহরণের শিকার সেই প্রার্থী
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
‘হোম অব ক্রিকেটে’ বাংলাদেশের স্পিন কোচ মুশতাক
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ