X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলকাতার ফ্লাইওভার ধসের নেপথ্যে তৃণমূল কংগ্রেস!

বিদেশ ডেস্ক
০২ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:১৫আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:১৯
image

বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতার কেন্দ্রে নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ধসে পড়ার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে একের পর এক দুর্নীতি আর অনিয়মের গল্প। ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। ফ্লাইওভারের যে অংশ ভেঙে পড়ে, তার সাব-কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজ। যার স্বত্বাধিকারী রজত বক্সী স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর ভাইয়ের ছেলে। সঞ্জয়ের স্ত্রী স্মিতা বক্সী ওই এলাকারই বিধায়ক। এক ভিডিও ফুটেজে নগরায়ন মন্ত্রীকে তৃণমূল কর্মীদের ওই ফ্লাইওভারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করতে দেখা গেছে। আর যারা এই কাজের সাব-কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল, সেই সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজের কর্মস্থল আরেক তৃণমূল মন্ত্রীর বাড়ির পাশে। সবমিলে এ ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে।

রজত বক্সী

 

শুক্রবার প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নগরায়নমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম তার দলীয় সতীর্থ ইকবাল আহমেদকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার আবদারের উত্তরে বলছেন, ‘কেএমডিএ-র বড় বড় কাজ আছে। তুমি করো না কেন? তুমি ফেলো টেন্ডার। আমি করিয়ে দেব।’

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মন্ত্রী শশী পাঁজার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের অপরিসর গলিতে ৫১ এ, গিরিশ পার্ক নর্থ ঠিকানার বাড়িটির নেম প্লেটে সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজ আর রজত বক্সীর নাম রয়েছে। সেই অফিস ঘর অবশ্য এ দিন বন্ধ। স্থানীয়রা জানান, এই অফিস থেকেই রজতের কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবসা চলতো। বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার আগেও অফিস খোলা ছিল। তারপর অফিস বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে মেয়রের সঙ্গে সঞ্জয় বক্সী

স্থানীয় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, রজতের নাম ব্যবহার করা হলেও ব্যবসাটা আদতে সঞ্জয়-স্মিতার। শুধু এই একটা নয়, অন্তত দশটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি ব্যবসা চালান বক্সী দম্পতি। পাশাপাশি বেআইনি নির্মাণ, বেশি দামে দেশি মদ বিক্রি, বাংলাদেশি নারীদের নিয়ে দেহ ব্যবসা – বেনামে সঞ্জয়ের এমন বহু ব্যবসা রয়েছে বলে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পৌরসভায় এবং লালবাজারে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার দিন বহু চেষ্টা করেও সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আর জোড়াবাগান কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী স্মিতা বলেন, ‘রজত আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমাদের এ রকম অনেক আত্মীয় আছে। রজত কী ভাবে ওই কাজের পেয়েছিল, জানি না। আমার প্রভাবে পেয়েছিল, এটা প্রমাণ হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ রজতও বলেন, ‘পদবী এক হওয়ার জন্যই এমন অভিযোগ উঠছে। কাকার সঙ্গে আমার বছরে দুয়েকবার যোগাযোগ হয়।’

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধসে পড়া উড়ালসেতু

যদিও তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার ভাষ্যমতে, ‘পৌরসভা এবং সরকারকে হাতে রেখে কারা ওই এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল, স্থানীয়দের অনেকেই তা জানেন। বাম জমানায় ফ্লাইওভারের কাজ শুরু হওয়ার কথা বলা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাতে কি আর ক্ষতি সামাল দেওয়া যায়?’ ববি অবশ্য দাবি করেন, ‘শপথ করে বলছি, এই রজত কে, আমি জানি না। তাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রশ্নই নেই।’ তবে বিরোধীদের অভিযোগ, কাজ পাইয়ে দেওয়ার সূত্রে যে টাকা আদায় হয়, তার বড় অংশ পৌঁছে যায় শাসক দলের শীর্ষস্তরে। যা শুনে ববির মন্তব্য, ‘চ্যালেঞ্জ করছি, এমন কথা কেউ প্রমাণ করুক।’ বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, ভিডিও ফুটেজই তো তার প্রমাণ!

বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারে ঠিকাদারি কাজের সঙ্গে বছর পাঁচেক ধরে যুক্ত সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজ। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে প্রথমে তারা সিমেন্ট ও লোহা সরবরাহ করত। পরে শ্রমিক সরবরাহের কাজও তারা পায়। দুর্ঘটনার আগের রাতে ফ্লাইওভারের যে অংশে ঢালাই হয়েছিল, সেটিই ভেঙে পড়ে। সেই কাজে যুক্ত ছিল রজতের সংস্থা।

কুলগোত্রহীন সন্ধ্যা এন্টারপ্রাইজকে কেন ফ্লাইওভার তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। এ দিন হাওড়ার মন্দিরতলার বাড়িতে বসে রজত নিজেই জানান, তার অভিজ্ঞতা বলতে বিহারে মাটির তলায় অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন এবং রাজারহাটে মেট্রোর জন্য মাটি সরানোর কাজে শ্রমিক সরবরাহ করা।

কলকাতায় ধসে পড়া ফ্লাইওভার

রজতের দাবি, এই ফ্লাইওভারের কাজে সরাসরি যোগাযোগ ছিল না তার। তিনি স্রেফ শ্রমিক সরবরাহ করেছেন। রড-সিমেন্ট নয়। তিনি বলেন, ‘আমার শ্রমিকরা ঢালাই করেননি। মূল ঠিকাদার সংস্থার রুবির অফিস থেকে ঢালাইয়ের মশলা (রেডিমিক্স) আসতো। প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজারদের নজরদারিতে পাইপে করে তা উপরে তুলে তা ঢেলে দেওয়া হতো। এই কাজে শ্রমিকরা সাহায্য করতো। সে দিনও তা-ই হয়েছিল।’

কিন্তু এলাকার বিরোধী নেতা এবং স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, গত বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাড়া দিতেই নভেম্বর-ডিসেম্বরে ফ্লাইওভারের কাজ নতুন করে শুরু হয়। নির্মাণাধীন সেতুর নীচে একটি মন্দির ছিল। তা ভাঙার বিষয়টিকে সামনে এনেই ফ্লাইওভারের কাজে ঢুকে পড়ে বক্সী-বাহিনী। তারা সিমেন্ট ও বালি সরবরাহ এবং তাদের শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য করে। কেএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, বক্সী-বাহিনীর দাপট বাড়তে থাকলেও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ নীরব থেকেছে। কাঁচামাল নিয়ে অভিযোগ থাকলেও চুপ থেকেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। স্থানীয় একাধিক তৃণমূল নেতার দাবি, ফ্লাইওভার তৈরি নিয়ে নানা অভিযোগ প্রথমদিকেই জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চান ওই ফ্লাইওভার দ্রুত তৈরি হোক। সৌজন্য: আনন্দবাজার পত্রিকা।

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!