X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও)

ওয়ালিউল বিশ্বাস
১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০৮আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১৫:৪৭

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) নন্দিত কথাশিল্পী হ‌ুমায়ূন আহমেদের নন্দনকানন নুহাশপল্লী। সেখানে বসেই বাংলা সাহিত্যের এই জাদুকর তৈরি করেছেন অনবদ্য অনেক সৃষ্টি। বিশেষ করে তার চলচ্চিত্র ও নাটক নির্মাণে অন্যরকম ভূমিকা আছে এই বাগানবাড়ির।

বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব হ‌ুমায়ূন আহমেদ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৯৭ সালে ১৩ বিঘার ওপর সাজিয়েছেন নুহাশপল্লী। জানা যায়, পরবর্তী সময়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে এর আয়তন দাঁড়িয়েছে ৪০ বিঘায়। জায়গাটি গাজীপুর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। পিরুজালী গ্রাম। সেখানেই তার এই ‘সাম্রাজ্য’। নিজের প্রথম ছেলে নুহাশের নামে বাগানবাড়িটির নাম রেখেছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ।

যে কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশপল্লীতে। তবে এই বাগানবাড়িতে ঘোরাঘুরির নির্দিষ্ট কিছু সময় আছে। নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক বুলবুল ইসলাম জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় এই জায়গা। আর বাকিটা সময় বরাদ্দ থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। একঝলকে জেনে নিন নুহাশপল্লীতে যা দেখা যায়।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) সবচেয়ে বড় ঔষধি বাগান
গাছ খুব পছন্দ করতেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। নিজে রসায়ন শাস্ত্রের ছাত্র হওয়ায় ঔষধি গাছের প্রতি আলাদা আকর্ষণ ছিল তার। হয়তো সেজন্যই নুহাশপল্লীতে তিনি গড়ে তোলেন ঔষধি গাছের বাগান। সেখানে আছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির ঔষধি বৃক্ষ। উদ্ভিদবিদ্যার ছাত্রছাত্রী, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ও বৃক্ষপ্রেমীদের গবেষণাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এগুলো।

মাটির প্রাচীর
চীনের প্রচীরের নাম যারা শুনেছেন, তাদের জন্য মজার অভিজ্ঞতা হবে নুহাশপল্লীতে। সেখানে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে বিশাল মাটির দেয়াল। এর ভেতরের দিকে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ বাক্স। প্রিয়জন কারও জন্মদিনে বা চমকে দিতে চাইলে সেই খোপ খোপ বাক্সগুলোতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। বাকিটা বুঝিয়ে দেবেন নুহাশপল্লীর দায়িত্বরত ব্যক্তিরা।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) ‘হৃদয় আকৃতির’ সুইমিং পুল
নুহাশপল্লীতে হ‌ুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেছেন মনোরম দুটি সুইমিং পুল। সেখানে গা ডুবিয়ে আড্ডায় মেতে থাকতেন এই লেখক। তার সঙ্গে এসব আড্ডায় ভারতীয় কথাশিল্পী সুনীল গঙ্গোপ্যাধায়সহ অনেক লেখক-শিল্পী অংশ নিয়েছেন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বড় আকারের সুইমিং পুলটি দেখতে ‘হৃদয় আকৃতির’। যেকোনও দিক থেকেই এটি দেখলে তা মনে হবে। আর ছোট সুইমিং পুল শিশুদের জন্য তৈরি।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) মা-ছেলের ভাস্কর্য ও মাথার বিশাল কঙ্কাল
নুহাশপল্লীর মূল ফটকের ডানদিকে আছে মা ও ছেলের অদ্ভুত এক ভাস্কর্য। এটি দেখে যে কেউই বিমোহিত হবেন। আর সুইমিং পুলের পূর্ব দিকে রয়েছে বিশাল আকৃতির মানুষের মাথার কঙ্কাল আকৃতির ভাস্কর্য। এর মুখ দিয়ে বের হওয়া পানিই এসে পড়ে সুইমিং পুলে।

হোয়াইট হাউস
হ‌ুমায়ূন আহমেদ তার পরিবার নিয়ে অনেকদিন নুহাশপল্লীতে কাটিয়েছেন। আর তিনি থাকতেন ‘হোয়াইট হাউস’ নামের প্রধান ভবনে। এটি তৈরির পেছনে একটা ঘটনা আছে। এই ভবন নির্মাণের সময় ইরাকের সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধ চলছিল। ইরাক-আমেরিকা যুদ্ধ ও ভবন নির্মাণের সময়কে স্মৃতি হিসেবে রাখতে হ‌ুমায়ূন আহমেদ এতে একটি নাটকের শুটিং করেন। নাম ‘চৈত্র দিনের গান’। ভবনটিতে মোট ৯টি কামরা আছে।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) হ‌ুমায়ূন আহমেদের ম্যুরাল
নুহাশপল্লীর মূল ভবন হোয়াইট হাউজের সামনে রয়েছে একটি ম্যুরাল। সাদাকালো এই শিল্পকর্ম দেখে অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। হ‌ুমায়ূন আহমেদের ৬৭তম জন্মদিনে তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও সন্তান নিষাদ হ‌ুমায়ূন ও নিনিত হ‌ুমায়ূন এর উদ্বোধন করেন।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) লিচু বাগান ও সমাধি
নুহাশপল্লীর পুরো লিচু বাগান স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালে ঘিরে রাখা। এর মাঝখানে ধবধবে সাদা শ্বেতপাথরের সমাধি। এর ডিজাইনও হয়েছে হ‌ুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছে অনুযায়ী। মৃত্যুর কয়েক বছর আগেই তিনি নিজের কবরের জায়গা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন এই লিচু বাগান। এই বাগানের লিচু কেউ খায় না। এটি শুধু পাখিদের জন্য বরাদ্দ। মূল ফটকের বাইরে বাঁ-দিক দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি ফটক আছে, সেখান দিয়ে ঢুকে হ‌ুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারতের করতে পারবেন যে কেউ।

তেঁতুল বৃক্ষ ও ভূতবিলাস
হ‌ুমায়ূন আহমেদের মতে, নুহাশপল্লী হচ্ছে ভূতের আবাসস্থল! ১৯৯৭ সালে যখন নুহাশপল্লী তৈরি করা হয়, তখন সব ভুতুড়ে-কাণ্ড হতো। কথিত আছে, নাটকের শুটিংয়ের জন্য যত সেট নির্মাণ করা হতো, সবই ভেঙে পড়তো রাতের বেলায়। এরপর হ‌ুমায়ূন আহমেদ বুঝতে পারেন, এই জায়গায় ভূতের আবাসস্থল আছে। তাই তিনি ভূতদের আবাসস্থল গড়ে তোলেন। দীঘি লীলাবতীর দক্ষিণ পাশে কামরাঙা বাগানের সঙ্গে তেঁতুলের চারা রোপণ করেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। এ নিয়ে অনেকে মজা করলেও দেশের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী ভূতের কবলে পড়েছেন। পরে জানা যায়, সবই ছিল তার রসিক আচরণ। নিজের একটি ভূতবাহিনী দিয়ে কাজগুলো করাতেন তিনি।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) লীলাবতীর ভাস্কর্য ও পদ্মপুকুর
নুহাশপল্লীতে হ‌ুমায়ূন আহমেদের কক্ষের সামনে একটি কদম গাছ আছে। এর নিচে বসে বিকালে চায়ে চুমুক দিতেন তিনি। ঠিক সেই গোলটেবিলের সামনেই রাখা আছে কল্পনার লীলাবতীর ভাস্কর্য। দেখে মনে হবে— লীলাবতী বুঝি বেঞ্চে উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়ছে!

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) লীলাবতী হলো হ‌ুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের প্রথম মেয়ে, যে পৃথিবীর আলো দেখেনি। এই ভাস্কর্যে লীলাবতীর রূপ দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হয়, লীলাবতী বেঁচে থাকলে দেখতে এমনই হতো। এই নামে হ‌ুমায়ূন আহমেদের একটি উপন্যাসও আছে। লীলাবতী ভাস্কর্যের পাশেই আছে পদ্মপুকুর। তার মাঝে বসে থাকে মৎস্যকুমারী। আদতে এটিও একটি ভাস্কর্য।

ঘুরে আসুন হ‌ুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লী (ভিডিও) ট্রি হাউজ
অনেকেরই ইচ্ছে হয় গাছে থাকার। আমাদের পূর্বপুরুষরা জঙ্গলেও বাস করেছেন। এমন একটি ধারণা পাওয়া যায় নুহাশপল্লীর ট্রি হাউজে। সেখানে গাছের ওপর হ‌ুমায়ূন আহমেদ তৈরি করেছেন কাঠের বাড়ি। এটি প্রথমে ছিল তার সমাধির ওপরে। হ‌ুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর অনেক বছর আগেই এটিকে সরিয়ে আনা হয় মাঠের মাঝখানের লিচু গাছের ওপরে।
নুহাশপল্লীর সময়সূচি
নুহাশপল্লী ঢুকতে কোনও পূর্ব অনুমতি লাগে না। ২০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে যে কেউ সেখানে যেতে পারেন। ১০ বছরের নিচে শিশু, ড্রাইভার ও গাড়ি পার্কের জন্য কোনও টাকা লাগে না। নুহাশপল্লীর কোনও সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। বছরের ৩৬৩ দিনই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশেষ অনুরোধে মাগরিবের আজান পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে এই বাগানবাড়ি। বছরের দুই দিন অর্থাৎ ১৩ নভেম্বর (হ‌ুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন) ও ১৯ জুলাই (হ‌ুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিন) নুহাশপল্লী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। ওই দুই দিন কোনও এন্ট্রি ফি লাগবে না।




নুহাশপল্লীতে যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে চড়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে শ্রীপুর, মাওনা, কাপাসিয়া ও হোতাপুরের উদ্দেশে বেশকিছু বাস যায়। এর মধ্যে আছে প্রভাতী, বনশ্রী ইত্যাদি। বাসভাড়া জনপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। হোতাপাড়া থেকে নুহাশপল্লীতে টেম্পো (৩০ টাকা), রিকশা-ভ্যান (৫০ টাকা) অথবা বেবিট্যাক্সিতে (১০০-১২০ টাকা) যেতে পারবেন।
ছবি: সংগৃহীত
* ভিডিওতে নুহাশপল্লী



/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা