X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

সুন্দরীতমা রেমাক্রি ও নাফাখুমের অবাক সৌন্দর্যে

রিয়াসাদ সানভী
১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৩৫আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ২১:০০

সব সুন্দর কেড়ে নিয়েছে নাফাখুম থুইসাপাড়া থেকে বেরোতে বেরোতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। তবে রুটটা বেশ সহজ। নাফাখুম হয়ে রেমাক্রি বাজারে থাকবো, এমনই পরিকল্পনা। রাতে ছিলাম থুইসাপাড়ারই একটি খেয়াং পরিবারে। তাদের আতিথেয়তা ছিল অসাধারণ। ঝলমলে সকালে থুইসাপাড়া থেকে পাঁচ মিনিট হেঁটে পৌঁছে গেলাম জিনাপাড়া। সেখানে না দাঁড়িয়ে সোজা হেঁটে নেমে এলাম রেমাক্রিতে। আগের দিনের মতোই রেমাক্রির এপার-ওপার করছি। এখানে নির্দিষ্ট কোনও রাস্তা নেই। তাই যেদিকে সুবিধা, সেদিকেই যেতে হচ্ছে। এদিকে রেমাক্রির স্রোত আরও বেশি। প্রতিটি জায়গায় বেশ কসরত করতে হচ্ছিল।

শরতের ঝলমলে আকাশের নীল যেন মিশেছে রেমাক্রির জলে। আমরা বিদেশি ভূ-স্বর্গের গালগপ্পো শুনি। দেখি স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী, বন আর পাহাড়ের মেলবন্ধনের অপার্থিব সব দৃশ্য। এখন মনে হচ্ছে, আমি সেই ভাগ্যবান যে নিজের দেশেই ভূ-স্বর্গের দেখা পেয়েছে।

থুইসাপাড়া থেকে আড়াই ঘণ্টার ট্রেকের পর অবশেষে শোনা গেলো নাফাখুমের গর্জন। আমরা পেছন থেকে আসছি। পা টিপে টিপে সেই সৌন্দর্যের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমি নিশ্চিত, এখানে এসে থামতে বাধ্য হবেন কবি। মহাবিশ্বের সব প্রাণশক্তি ভর করেছে ঝরনাধারায়। অবিরত এর গর্জন শুনিয়ে যাচ্ছে জীবনের গান। আমরা সেই জীবনসুধা পান করলাম সর্বোচ্চ মাত্রায়।

রেমাক্রির জীবনধারা ঠাঠা রোদে নাফাখুমের সামনে বসেছিলাম ৪৫ মিনিট। উঠতে যাবো, তখন দেখা হলো ঢাকা থেকে আসা একদল পর্যটকের সঙ্গে। থানচি থেকে গত কয়েকদিন পর্যটক আসা বন্ধ ছিল। ঈদের পর তারাই প্রথম দল হিসেবে নাফাখুমে এলো। কুশল বিনিময় হলো। এবার তারা নাফাখুমের রূপ প্রাণভরে দেখুক। আমাকে যেতেই হবে।

আবার রেমাক্রি ধরে বাজারের দিকে এগোনো। টানা চারদিন ধরে হাঁটছি। শেষের দিকে যত এগোচ্ছিলাম তত যেন ক্লান্তি এসে ভর করছে। সত্যি বলতে, যে পথ চারদিনে ফেলে এসেছি সেটি সাধারণভাবে আরও দুই দিন বেশি লাগতো। এভাবে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম রেমাক্রি মুখের সামনে। এবার একটু রেমাক্রি নিয়ে বলি।

রেমাক্রি মিশেছে শঙ্খে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমার দেখা বাংলাদেশের সুন্দরতম খালের নাম রেমাক্রি। এর শুরু রুমার সুংসাংপাড়ার কাছে ডবল ফলস থেকে। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে নিরবধি চলা জলরাশি এসে যত মিশেছে খালটির জলে, তত রূপ বদল করছে রেমাক্রি। বাংলাদেশের সুন্দরতম দুই ঝরনাধারা আমিয়াখুম ও নাফাখুম হয়ে যে স্থানে সুন্দরীতমা রেমাক্রি মিশেছে সুন্দর নদী শঙ্খের সঙ্গে, সেটিই রেমাক্রির মুখ। এটিও আরেক অসাধারণ জায়গা।

ধাপে ধাপে পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা জলের ক্যানভাস এখানে সৃষ্টি হয়েছে জলপ্রপাতে। রেমাক্রি মুখও এই রুটের কাঙ্ক্ষিত একটি জায়গা। এখান থেকে বাজারে যেতে হলে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রচণ্ড রোদে আমরা রেমাক্রি মুখে খানিক অপেক্ষার পর একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে বাজারে এসে পৌঁছালাম প্রায় আড়াইটায়। ঘাটে নেমেই আগে মন ভরে খেয়ে নিলাম ভাত, মুরগির মাংস ও ডাল। এত তৃপ্তি করে বোধহয় বহুদিন খাইনি! পরের দিন থানচি ফেরার নৌকাও এখান থেকেই ঠিক করলাম।

ভরদুপুরে নাফাখুম এরপর সোজা লাল পিয়ানদার কটেজে। রেমাক্রিতে বেড়াতে আসা সবাই লাল পিয়ান বমকে চেনে। ঢালা বিছানা, জনপ্রতি ১৫০ থাকা। খাওয়াও এখানে বেশ সস্তা। আমরা বাদে আর কেউ নেই। বেশ কয়েকদিন ধরেই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের এই এলাকায় আসতে দেওয়া হয়নি।

কটেজে ব্যাগ-প্যাক রেখে একছুটে চলে গেলাম ঘাটে। পুরো চারদিন যত ময়লা জমেছিল শরীরে, শঙ্খের পুণ্য জলে সব ধুয়ে শুদ্ধ করে নিলাম। জীবনের এ এক আশ্চর্য আনন্দ! শঙ্খের কোলে শরীর গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে সূর্যস্নানের সময় মনে হলো, আমার আর কোথাও না গেলেও চলবে! সখ্য হলো দুই পাহাড়ি শিশুর সঙ্গেও। তারা গাছের লাল পেয়ারা খাওয়ালো।

জিনা পাড়া, সকালে যাত্রা শুরু এখান থেকেই কটেজে ফিরে বারান্দায় বসে খোশগল্প করার ফাঁকে চোখে পড়লো, নৌকা ভরে পর্যটকরা আসছে রেমাক্রি বাজারের দিকে। এতদিন বন্ধ থাকার পর রুট খুলে দিতেই এ অবস্থা। দেখতে দেখতে পুরো বাজার ভরে গেলো পর্যটকে। তৌহিদকে বললাম সুখের দিন শেষ!

সন্ধ্যা হলো। জমজমাট রেমাক্রিতে চরম আড্ডাবাজির সঙ্গে হলো সুপারমুন দর্শন। চাঁদের আলো কুয়াশার জলে মিশতে মিশতে শুনিয়ে গেলো হারিয়ে যাওয়ার ইন্দ্রধ্বনি। ক্লান্তিতে আমাদেরও ঘুমের দেশে হারিয়ে যাওয়ার সময় হলো।

নাফাখুমের সামনে লেখক মনে রাখবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবানগামী বাসের ভাড়া ৬২০ টাকা। বান্দরবান শহর থেকে এক ঘণ্টা পরপর বাস ছেড়ে যায় থানচির উদ্দেশে। ভাড়া ২০০ টাকা। বান্দরবানে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে থানচি বাসস্ট্যান্ড। অবশ্যই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা যেকোনও আইডি কার্ডের কয়েকটি ফটোকপি রাখবেন। থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। থানচি থেকে গাইডের খরচ প্রথম দিন ৮০০ টাকা, পরবর্তী দিনে ৭০০ টাকা করে। রেমাক্রি বাজার থেকে স্থানীয় গাইড নেবে ৫০০ টাকা।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক