চাঁদপুরে জঙ্গলের ভেতরে কয়েকশ’ বছর আগের সুলতানি আমলের প্রাচীন একটি মসজিদের সন্ধান মিলেছে। সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের তালুকদার বাড়ি এলাকায় পাওয়া গেছে এটি। গত ২৯ আগস্ট বিকালে পুরো জঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে এই মসজিদ দৃশ্যমান হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থাপনা ৫০০ বছরের পুরনো। এটি দেখার জন্য প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার বেশ কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি এই প্রাচীন স্থাপনার কথা বেশ কয়েকবার জানালেও কেউই সেখানে যেতো না। কারণ, একটি বিশাল আকারের জির গাছ ও এর শেকড়, বাঁশঝাড়, অন্যান্য লতাপাতা এই মসজিদের বাইরের অংশকে ঢেকে রেখেছিল। পরে আজিজ তালুকদার নামে একজন ১০-১২ বছর আগে জির গাছটি কেটে এটিকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনিও আর আগ্রহ দেখাননি।
৫নং রামপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মসজিদটি জঙ্গলের অনেক ভেতরে, এ কারণে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান করা সম্ভব ছিল না। ভয়ে কেউ এই প্রত্নতাত্ত্বিক মসজিদ দৃশ্যমান ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। পরবর্তী সময়ে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি এটি দৃশ্যমানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দা।’
এই ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা প্রায় ৫০০ বছর আগে সুলতানি আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। এর ভেতরে ঢুকে দেখি কেবল একটাই গম্বুজ। পোড়া ইট, বালি, চুনা ও ছুরকি দিয়ে পুরো মসজিদ নির্মিত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।’
জানা গেছে, মসজিদের দেয়ালঘেঁষে চারপাশে চারটি ছোট মিম্বর রয়েছে। বাইরের দৈর্ঘ্য (উত্তর-দক্ষিণ) মিম্বরসহ ১৬ ফুট ও প্রস্থ (পূর্ব-পশ্চিম) ১৫ ফুট। মসজিদটির ভেতরের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি। এর একটি মেহরাব রয়েছে। দেয়ালে আছে ছোট ছোট কয়েকটি খোঁপ। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ৩৩ ইঞ্চি।
মসজিদটি রক্ষায় প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন ডা. দীপু মনি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘চার-পাঁচ বছর আগে কোনও একটি বইয়ে আমাদের এলাকায় এমন একটি মসজিদের কথা জেনেছিলাম। কিন্তু কোথায় এর অবস্থান তা নির্ণয় করা যাচ্ছিল না। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বরাবরই এমন প্রাচীন কোনও মসজিদ আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে বলেছি। অবশেষে এটি শনাক্ত করা গেছে।’
একই গ্রামের সন্তান প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক রাখি রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গল পরিষ্কারের আগে স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাকে ওই এলাকায় নিয়ে যান। মসজিদটি সুলতানি আমলের হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবেদন করলে মসজিদটি সংরক্ষণ করা হবে।’
এদিকে শিগগিরই এই স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শওকত ওসমান বলেন, ‘মসজিদটি সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। এটি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সবকিছু আমরা করবো।’