নতুন নতুন রুটে সাইক্লিংয়ের জন্য উদগ্রীব থাকে সাইক্লিস্টরা। এক্ষেত্রে সমতল ও পাহাড় বেশি টানে তাদের। এই টানেই ভারতের হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের লেহ পেরিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যানচলাচলের রাস্তা খারদুংলা জয় করে এলেন বাংলাদেশের খুলনার মেয়ে জিনিয়া তাবাসসুম। দেশের প্রথম নারী সাইক্লিস্ট হিসেবে এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।
দেশের প্রথম খারদুংলা জয়ী নিয়াজ মোরশেদের পর সেখানে এ পর্যন্ত সাইকেল নিয়ে গেছেন জিনিয়া তাবাসসুমসহ আরও সাতজন। তবে মেয়েদের মধ্যে তাবাসসুমই প্রথম এই ইতিহাস গড়লেন।
মানালি থেকে খারদুংলার পাহাড়ি রাস্তায় ছয়টি গিরিপথ পড়ে। বাংলাদেশের প্রথম মেয়ে হিসেবে এসবের সামিটে পৌঁছেছেন জিনিয়া তাবাসসুম। এগুলো হলো রোথাং পাস, বারালাচা পাস, নাকিলা পাস, লাচুংলা পাস, তাংলাংলা পাস ও খারদুংলা পাস।
ঢাকার সাইক্লিং গ্রুপ হেমন্ত রাইডার্সের অনুপ্রেরণায় তাবাসসুমের এই যাত্রা। আমিও এ গ্রুপের সদস্য। সাইকেল বক্সে ভরে ঢাকা থেকে ৬ আগস্ট দিল্লির পথে উড়াল দেন তাবাসসুম। সঙ্গে ছিলাম আমি আর গ্রুপের আরেক সদস্য সুইজারল্যান্ডের এরউইন। এরপর বাসে চড়ে দিল্লি থেকে মানালি। ১০ আগস্ট থেকে স্বপ্নপূরণের পথে সাইকেল নিয়ে চলতে থাকেন কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করা এই তরুণী।
চলতে চলতে আমরা দেখলাম, পাহাড়ি রাস্তা শুধু ওপরের দিকেই উঠে যাচ্ছে। কখনও টানা ২৪ কিলোমিটার, কখনও ১৪-১৫ কিলোমিটার। তাবাসসুমের মাঝে মধ্যে মনে হতো কখন চূড়ায় উঠবে, কখন ডাউন হিল আসবে।
১৩ হাজার ৫৮ ফুট উচ্চতার প্রথম গিরিপথ রোথাং পাসের সামিটে পৌঁছানোর পর ঠাণ্ডার কারণে জ্বর আসে তার। এ কারণে তাকে থাকতে হয়েছে ওষুধের ওপর। তবে সাইক্লিং এক্সপেডিশন সফলভাবে শেষ করতে তার মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি দেখেছি।
এই সাইক্লিং এক্সপেডিশনে বেশিরভাগ সময় থাকতে হয়েছে ধাবার তাঁবুতে, নেটওয়ার্কের বাইরে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি টানা ৭-৮ দিন। পথে আমাদেরকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন অন্য সাইক্লিস্টস ও পরিব্রাজকরা।
মানালি থেকে যাত্রা শুরুর পর কষ্টগুলো আর কষ্ট থাকতো না পাহাড়ের সৌন্দর্য ও পাহাড়ি নদী দেখে। সাইকেলে না গেলে এই রূপ উপভোগ করা সম্ভব নয়।
আমরা লেহ পৌঁছাই ২০ আগস্ট। পরদিন স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। ২২ আগস্ট ঈদের দিন ১৭ হাজার ৫৮০ ফুট উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যানচলাচলের রাস্তা খারদুংলা পাসের সামিটে পৌঁছাই আমরা।
আমাদের সাইক্লিং এক্সপেডিশনের প্রথম দুই দিন ছিল খুব কষ্টের। এরপর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কষ্ট কিছুটা কমেছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে রাস্তায় জমে থাকা পানি পেরিয়ে এগোনোও ছিল কষ্টের। ঢলের পানির সঙ্গে আসা পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণে পায়ে ছোপ ছোপ কালো দাগ আর ব্যথার কথা এখনও মনে পড়ে আমাদের। খারদুংলা জয় করা তাবাসসুমের সঙ্গী হতে পেরে আমি ও এরউইন আনন্দিত।
সাইক্লিংয়ে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাবাসসুমের শখ দেশ ঘুরে দেখা। এর আগে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় কয়েকবার সাইকেল চালিয়েছেন তিনি। ১১ দিনে বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফ পাড়ি দিয়েছেন। একক ও গ্রুপ রাইডে ঘুরেছেন দেশের অনেক জেলা। তার অন্য রুটগুলো ছিল হালুয়াঘাট-কুয়াকাটা, ভোমরা-তামাবিল, দর্শনা-আখাউড়া। এবার খারদুংলা জয় করে তিনি যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন। অভিনন্দন তাকে।