X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বরে কোথায় বেড়াতে যাবেন

নাদিয়া নাহরিন
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:৪৩

সেপ্টেম্বরে কোথায় বেড়াতে যাবেন প্রাণজুড়ানো হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য সেপ্টেম্বর উপযুক্ত সময়। কারণ কয়েকটি দেশে খরচের পাশাপাশি মানুষের ভিড়ভাট্টাও থাকে কম। উষ্ণ আমুদে আবহাওয়ায় ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে এ সময় বেড়ানোটা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ উপভোগ্য। ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এখন মিলবে একেকরকম ভ্রমণের স্বাদ। আর বনে-বাদারে অ্যাডভেঞ্চারের জন্য জুতসই আফ্রিকা। এর মধ্যে সমুদ্র সৈকত, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উৎসব, ঐতিহাসিক শহর, প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়সহ অনেক কিছু রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা সাজাতে জেনে নিন কিছু জায়গার কথা।

নীল জলরাশির সমুদ্র সৈকত
ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশগুলো সেপ্টেম্বরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য জুতসই। পাল তোলা ও সাগরপাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের এখনই সময়। এক্ষেত্রে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে পছন্দসই প্রচুর গন্তব্য মিলবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বৃষ্টিপাত আর মধ্য আমেরিকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনতে পারে বলে এসব অঞ্চলে না যাওয়াই ভালো সেপ্টেম্বরে।

মালদ্বীপ: জুলাই-আগস্টে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে আসা মৌসুমি হাওয়া মালদ্বীপকে ভিজিয়ে রাখে। তবে সেপ্টেম্বর সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখন সেখানে ঝকঝকে নীল আকাশ। তবে পুরোপুরি শুষ্ক মৌসুমও বলা যাবে না। হঠাৎ হালকা বৃষ্টি হতেও পারে। খাবার-দাবারসহ সবকিছু মিলবে সুলভ মূল্যে আর সবই সহজলভ্য। সার্ফিংয়ের জন্য এখন জুতসই সময়। চারপাশে প্রবালদ্বীপের পশ্চিম দিকে ডাইভিংও বেশ উপভোগ্য লাগবে। ডলফিন কিংবা বিশাল আকৃতির মানটা মাছের দেখা পাওয়ার সুযোগও রয়েছে নীল জলরাশিতে।

শ্রীলঙ্কা: বর্ষাকাল আসা আগে সেপ্টেম্বরই শ্রীলঙ্কায় উত্তর-পূর্ব দিকের সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর সবশেষ জুতসই মাস। অরুগাম বে ও ট্রিনকোমালির উত্তর উপকূলরেখায় ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা করা যায় অনায়াসে। দারুণ আবহাওয়ায় এ সময় মাঝে মধ্যে নামে হালকা বৃষ্টি। শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বহু প্রাচীন মার্বেল আর বন্যহাতির অভয়ারণ্য মিনেরিয়া জাতীয় পার্ক দেখতে পর্যটক সমাগম হয় বেশি।

মরক্কো মরক্কো: পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর আর উত্তরে ভূমধ্যসাগরের মধ্যে ১২০০ মাইলের দূরত্ব। ফলে সাগরপাড়ে অবকাশযাপনের পরিকল্পনা সাজাতে মরক্কোতে রয়েছে বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল। সহনীয় তাপমাত্রা ও অল্পস্বল্প বৃষ্টির সুবাদে সেপ্টেম্বর সেখানে বেড়ানোর জন্য জুতসই। তেঙ্গিয়ার থেকে আগাদির পর্যন্ত অসংখ্য হোটেল। আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জনপ্রিয় রিসোর্টগুলোতে যাওয়ার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও দারুণ। এছাড়া আছে ঐতিহাসিক বেশকিছু শহর।
ক্রোয়েশিয়া: অবকাশযাপনের সময় পেরিয়ে গেছে ক্রোয়েশিয়ায়। ইউরোপ জুড়ে ছেলেমেয়েদের স্কুল শুরু হয়ে গেছে। এদিকে ভূমধ্যসাগরের সুন্দর আবহাওয়া লাগবে প্রাণজুড়ানো। উষ্ণ জলে ও হালকা বৃষ্টির সম্মিলনে দারুণ সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে সেখানে। খরচও কিছুটা কমে যায় সেপ্টেম্বরে। ফলে অল্প টাকায় নীল জলরাশিতে পাল তুলে বেড়াতে পারেন। সৈকতের বালিতে আরামআয়েশ করার সুযোগ তো আছেই। উপকূলবর্তী ঐতিহাসিক শহরও ঘুরে দেখেন অনেকে। বোনাস হিসেবে পুরো ক্রোয়েশিয়ায় এখন ভিড়ভাট্টা নেই বললেই চলে। 

বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য 

আফ্রিকা মহাদেশের সর্বত্র প্রখর রোদ আর হালকা বৃষ্টি অব্যাহত থাকে সেপ্টেম্বরে। কেনিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার বনেবাদাড়ে বেড়ানো আর আমাজনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ও মাছ ধরার জন্য সেপ্টেম্বরই সবচেয়ে উপযোগী।
পূর্ব আফ্রিকা: বছরজুড়ে প্রাণীরা বন থেকে বনে স্থান পরিবর্তন করে থাকে। এর মধ্যে সাদা-কালো ডোরাকাটা জেব্রা ও হরিণের পাল সেপ্টেম্বরেই বেশি জায়গা পরিবর্তন করে। কেনিয়ায় তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তের সেরেনগেটি থেকে মাসাই মারা সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত হাজার হাজার পশু জায়গা পরিবর্তন করে। তবে মারা নদীর ভরা স্রোত ও সেখানে ওঁত পেতে থাকা ক্ষুধার্ত কুমিরের কারণে এই যাত্রা হতে পারে বিপদসঙ্কুল।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল: জমজমাট বন্যজীবন দেখার সেরা সময় সেপ্টেম্বর। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ সময় কুঁজো তিমির প্রজনন শুরু হয়। এছাড়া ডাঙার সবচেয়ে বৃহৎ প্রাণী হাতির পাল ছুটে আসে বতসোয়ানায়। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আগে ঝক্কি ছাড়াই চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণী দেখতে চাইলে জুতসই হলো নামিবিয়ার জাতীয় পার্ক।
মাদাগাস্কার: পাখিপ্রেমীদের কাছে সেপ্টেম্বরে মাদাগাস্কার হয়ে ওঠে স্বপ্নের জায়গা। এ সময় প্রজননের জন্য অনেক প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটে সেখানে। সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পাখিরা তখন অনেক সরব হয়ে ওঠে। তাদের গানে ভরে ওঠে বন। চিত্তাকর্ষক সব দক্ষতা দেখাতে শুরু করে তারা। পাখির বৈচিত্র্য কাকে বলে দেখতে চাইলে এ জায়গার বিকল্প নেই। হলিউডে অ্যানিমেটেড ছবির সিরিজ ‘মাদাগাস্কার’ দেখে থাকলে দেশটি অপরিচিত নয় কারও কাছে।
দ্য গ্যালাপাগোস: জুন থেকে নভেম্বর হলো গ্যালাপাগোস দ্বীপে বেড়িয়ে আসার উপযুক্ত সময়। এখন সাগরের ঢেউ বেশ উন্মাতাল। সেপ্টেম্বরে সি-লায়নদের যেন মেলা বসে সেখানে! এছাড়া বিশাল আকৃতির নাম না জানা রঙিন মাছ আর বিশাল ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো অ্যালবাট্রস পাখিরা স্বাগত জানাবে এই দ্বীপে। 

উৎসব 

মধ্য শরৎ উৎসব: চীনের অধিবাসীরা হাজারও ফানুস উড়িয়ে, মন্দিরে পূজা দিয়ে ও ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবারের মাধ্যমে ‘মধ্য-শরৎ উৎসব’ উদযাপন করে থাকে। তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ‘মুনকেক’। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে উপহার দেওয়া হয় কারুকাজ করা এই মিষ্টি। প্রতি বছর চীনের চন্দ্রপঞ্জিকার অষ্টম মাসের ১৫তম দিনে (২৪ সেপ্টেম্বর) পূর্ণিমার সময় উৎসবটি হয়ে থাকে।

দাশাইন: নেপালের সবচেয়ে দীর্ঘতম ও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব এটি। প্রতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর টানা ১৫ দিনের এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিন্দু পুরাণ এবং নেপালি ধর্মীয় উপাখ্যান। রাজা রাবণের বিরুদ্ধে রামায়ণ ও দেবী দুর্গার বিজয়কে উদযাপন করতেই মন্দির সাজিয়ে ও ঘুড়ি উড়িয়ে হয়ে থাকে দাশাইন। এ সময় বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার তোড়জোড় থাকে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা একত্রিত হয়ে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, গ্রামীণ মেলা ঘুরে দেখা ও ফসল ভাগাভাগির মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করে।

তিমি উৎসব: দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী শহর হারমেনাসে প্রতি বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনের সাগরকেন্দ্রিক কার্যক্রম ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিমি প্রজাপতির উপাসনা করে। এ সময় দর্শনার্থীরা তিমি দেখতে জড়ো হয় সেখানে। একইসঙ্গে তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারে। তাদের জন্য আরও থাকে গান, বাজার, সুস্বাদু খাবার ও হোয়াল এন হুইলের ক্ল্যাসিক গাড়ির প্রদর্শনী। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু হয় এ উৎসব। দক্ষিণ আফ্রিকায় এটাই একমাত্র সামুদ্রিক উৎসব।

ঐতিহাসিক শহর
সেপ্টেম্বরে ইউরোপ জুড়ে ঋতু পরিবর্তন হয়ে থাকে। গরমের তাপদাহ কমে শরতের আসি আসি করে। ফলে ইউরোপের ঐতিহাসিক শহরের দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানোর জন্য সেপ্টেম্বর চমৎকার সময়। পূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরি ও এস্টোনিয়া অথবা পশ্চিম ইউরোপের ইতালি কিংবা স্পেন, পর্তুগালে গেলে চোখে পড়বে এমন বহু নিদর্শন। খরচ গ্রীষ্মকালীন সময়ের তুলনায় কম। তবে আবহাওয়া এখনও মনোরম। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল শুরু আর পারিবারিক ছুটি শেষ হয়ে যায় বলে ভিড়ভাট্টাও কম থাকে।

ব্রাজিলের ইগুয়াজু ঝরনা প্রকৃতি
ব্রাজিলের ইগুয়াজু ঝরনার সৌন্দর্য দেখতে চাইলে সেপ্টেম্বর মাসটাই সবচেয়ে জুতসই। সেখানে ঝকঝকে আকাশের নিচে নির্মল আবহাওয়ায় দারুণ ছবি তোলা যায় এ সময়। জলপ্রবাহ কম থাকায় ইগাজু জল গড়িয়ে পড়া পাথুরে ভূখণ্ডের দর্শন বেশ উপভোগ্য লাগবে। এছাড়া গভীর ও রহস্যময় আমাজন বন অথবা দক্ষিণ আমেরিকার পানতানালে বেড়ানোর জন্য সেপ্টেম্বর ভালো সময়। রিও শহরে এ সময় হোটেল ভাড়া খুব কম থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর মধ্যপ্রাচ্য অভিযাত্রার জন্য সেপ্টেম্বর চমৎকার মাস। মিসরের বিস্ময়কর প্রাচীন স্থাপনা থেকে শুরু করে জর্ডানের চাঁদতুল্য মরুভূমি, ইসরায়েলের ধর্মীয় স্তম্ভ কিংবা মরক্কোর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এ সময়। রোদের তাপ সহনীয় হওয়ায় এসব দেশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি ট্রেকিং কিংবা জাহাজে চড়ার মতো আউটডোর অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করা যায় অনায়াসে। ইউরোপে স্কুলগুলোর ছুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই খরচ পড়বে তুলনামূলকভাবে কম।

সূত্র: অন দ্য গো ট্যুরস

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা