ছুটি কিংবা অবকাশযাপনের জন্য দুবাই বেশ জনপ্রিয় গন্তব্য। উষ্ণ আবহাওয়া, শপিংয়ের সুযোগ, বিলাসবহুল হোটেল, গ্ল্যামারাস লাইফস্টাইল ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সুবাদে সেখানে পর্যটকরা যান ঝাঁকে ঝাঁকে। ক্রমে এই ভিড় বেড়ে চলেছে। তবে দুবাইয়ে আছে কঠোর কিছু আইন। তালিকাটা বেশ লম্বা। তাই হোটেলে থাকা, অ্যালকোহল, ওষুধসহ অনেক জিনিস সঙ্গে নেওয়া ও বেশ কিছু কাজের ব্যাপারে সতর্কতা জরুরি। এগুলো করলে যেতে হতে পারে জেলে। এমনকি জীবন পড়ে যায় হুমকির মুখে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই শহরে যেসব কাজ করবেন না সেই তালিকা দেওয়া হলো নিচে।
হোটেল রুম ভাগাভাগি
বিয়ে ছাড়া কিংবা রক্তের সম্পর্ক নেই এমন বিপরীত লিঙ্গের কারও সঙ্গে হোটেল রুম শেয়ার করা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেআইনি। এমন কোনও যুগলের বিয়ে ব্যতীত সম্পর্ক স্থাপনের আলামত পাওয়া গেলে আর রক্ষা নেই! জেল, জরিমানা ও নির্বাসন, যেকোনও কিছু কপালে জুটতে পারে। কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সীরা হোটেল বুকিং দিতে পারে সেখানে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ হোটেল বা হোস্টেলে ধরা পড়লে বিশাল অঙ্কের জরিমানা অথবা দীর্ঘ জেলে কাটাতে হতে পারে। বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। অভিভাবকদের অনুমোদন ও ঠিকানা এবং বিমানবন্দরে যিনি অভ্যর্থনা জানাবেন তার পরিচিতিসহ ১৮ বছরের কম বয়সীরা সেখানে যেতে পারে। শিশু পাচার ঠেকাতেই এমন নিয়ম। এছাড়া সমকামিতা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সমকামীদের বিয়ের কোনও স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না দেশটিতে।
ছবি তোলা
সরকারি ভবন ও সামরিক স্থাপনার আশপাশে ছবি তোলার ক্ষেত্রে পর্যটকদের সাবধান থাকতে হয় দুবাইয়ে। সামরিক স্থাপনা, সরকারি ভবন ও বিমানবন্দরের আশপাশে পাখি দেখা ও উড়োজাহাজের ওঠানামা উপভোগের সময় ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।
নাচানাচি
দুবাইয়ের বাড়িঘরে ও অনুমোদিত ক্লাব কিংবা অনুষ্ঠানে কেবল নাচের অনুমতি আছে। সংযুক্ত আর আমিরাতে জনসমক্ষে নাচানাচিকে ‘অশ্লীল ও উত্তেজক’ হিসেবে মনে করা হয়। সেখানে সাগরপাড়, পার্ক ও আবাসিক এলাকাসহ জনসাধারণের সামনে প্রকাশ্যে নাচ ও উচ্চশব্দে গান-বাজনা নিষিদ্ধ।
জনসমক্ষে আবেগ প্রদর্শন
দুবাইয়ে প্রকাশ্যে ভালোবাসা দেখাতে গেলে জেল পর্যন্ত হতে পারে। বিবাহিত দম্পতিরা হাতে হাত রেখে ঘুরতে পারে। কিন্তু তাদের চুম্বন ও জড়িয়ে ধরাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অতীতে চুম্বনের কারণে বেশ কিছু পর্যটককে গ্রেফতারের ঘটনা দেখা গেছে সেখানে।
কুবচন
জনসাধারণের সামনে ও অনলাইনে গালাগালি আর অভদ্র আচরণ সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের চোখে অশ্লীলতা। এ কারণে অপরাধীকে জেলে কিংবা দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্বাভাবিক থাকা জরুরি। দুই বছর আগে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সহকর্মীকে গালাগাল করার দায়ে এক ব্যক্তিকে সাজা দেন দুবাই আদালত।
ওষুধ
দুবাইয়ে ছুটি কাটাতে যাওয়ার সময় সঙ্গে রাখা যেকোনও ধরনের ওষুধের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। অন্যান্য দেশের সাধারণ কিছু ওষুধও সেখানে নিয়ন্ত্রিত পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো সংযুক্ত আর আমিরাতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া নেওয়া যায় না। যেমন, ডায়াজেপাম, ট্রামান্ডল, কোডেইন প্রভৃতি।
পর্নো
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পর্নো ওয়েবসাইট ও পর্নোগ্রাফি ছবি নিষিদ্ধ। এগুলোতে প্রবেশ কিংবা প্রচার উভয়ই বেআইনি। তাই ভিডিও, বই ও ম্যাগাজিন সেন্সরড কিনা সেদিকে সচেতন থাকা পর্যটকদের জন্য জরুরি।
মাদক
মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশেষভাবে কড়া। মাদক সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সেখানে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হয়। মাদক পাচার, চোরাচালান ও যেকোনও পরিমাণের মাদকসেবন করলে বড়সড় জরিমানা গুনতে হয়। এরমধ্যে মাদক পাচারের সাজার মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এছাড়া স্বল্প পরিমাণ মাদকসেবনের কারণেও কমপক্ষে চার বছরের কারাদণ্ড হয়। এটি নির্ভর করে রক্তে মাদকের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখার ওপর। আরব আমিরাতে ভেষজ মসলাও নিষিদ্ধ।
মাতলামি
অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে দুবাইয়ে কৌশল মেনে চলতে হয়। পর্যটকরা অনুমোদিত স্থানে অ্যালকোহল কিনে খেতে পারে। যেমন হোটেল, রেস্তোরাঁ, ক্লাব। দুবাইয়ে ২১ বছর ও আবুধাবিতে ১৮ বছরের ওপর বয়সীরা মদপান করতে পারে। কিন্তু জনসমক্ষে মদপান ও মাতলামি সেখানে নিষিদ্ধ। সম্প্রতি ফ্লাইটে ওয়াইন পানের কারণে একজনকে গ্রেফতারের পর ঘটনা দেশটিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ইলেক্ট্রনিক সিগারেট
আমিরাতে ইলেক্ট্রনিক সিগারেট নিষিদ্ধ। কারও কাছে এটি পেলেই জব্দ করা হয়।
সূত্র: সানডে এক্সপ্রেস