X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাবার গিলাফের ইতিহাস

রিয়াসাত আশরাফ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:০৯আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:২১

কাবার গিলাফের ইতিহাস সারা দুনিয়ার মুসলিমদের কিবলা হচ্ছে মক্কা নগরীতে অবস্থিত পবিত্র কাবাঘর। এই মহিমান্বিত ঘরকে একটি গিলাফ বা বস্ত্রখণ্ড দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এই গিলাফের পারিভাষিক নাম ‘কিসওয়াহ’। কালো রেশমি কাপড়ে তৈরি গিলাফটির গায়ে স্বর্ণ দিয়ে লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ’, ‘আল্লাহু জাল্লে জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহু ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম’ ও ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’। কাবার গায়ে ঠাঁই পেয়ে সাধারণ এক বস্ত্রখণ্ড পায় পবিত্রতার পরশ। তাই এই জিনিসের প্রতি সব দেশেরই আগ্রহ। গিলাফ পুরনো হয়ে গেলে তা কেটে মুসলিম দেশগুলোকে উপহার দেওয়ার রীতি রয়েছে সৌদি আরবে।

কাবাঘরের গিলাফ তৈরির কারখানাটি মক্কা নগরীর উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি তৈরিতে ১ কোটি ৭০ লাখ সৌদি রিয়াল ব্যয় হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৪ টাকা।

১৪ মিটার দীর্ঘ ও ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১টি বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় গিলাফ। চার কোনায় সৌন্দর্যবর্ধন করে বৃত্তাকারে লেখা থাকে সুরা ইখলাস। রেশমি কাপড়ের নিচে দেওয়া হয় মোটা সাধারণ কাপড়। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমি কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম ও স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম।

কিসওয়াহ বা গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদনের ইতিহাস
কাবাঘরকে গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সেই সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্রে বলা হয়েছে, হজরত ইসমাঈল (আ.) প্রথম পবিত্র কাবাঘরকে গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন করেন।

ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে, মহানবীর (সা.) পূর্বপুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবাঘরকে প্রথম গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করেন।

তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই পবিত্র কাবাঘর গিলাফের মাধ্যমে আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।

স্বপ্নে পাওয়া আদেশ
মহানবীর (সা.) ইয়াসরিব (মদিনা) শহরে হিজরতের ২২০ বছর আগে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদ শহরটি আক্রমণ করেন। তুব্বা আবু কবর আসাদ ইয়াসরিব ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মক্কায় গিয়ে কাবাঘর তাওয়াফ ও মাথা মুণ্ডন করেন। অতঃপর তিনি এই শহরে কয়েক দিন অবস্থান করেন। মক্কায় অবস্থানকালে তিনি ঘুমের মধ্যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি কাবাঘর গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন করছেন। এ স্বপ্নের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে অবিলম্বে তিনি ‘খাসাপ’ দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদিত করেন। ‘খাসাপ’ হচ্ছে তালগাছ জাতীয় গাছের পাতা ও আঁশের তৈরি এক ধরনের মোটা কাপড়।

তিনি আবার স্বপ্ন দেখেন আরও উন্নত মানের কাপড় দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদন করছেন। অতঃপর তিনি খাসাপের পরিবর্তে মামিজিয়ান ও প্যাপিরাস দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদন করেন। ইয়েমেনের মামিজ নামক একটি উপজাতীয় গোত্র এই কাপড় তৈরি করতো। এরপরও তৃতীয়বারের মতো তিনি স্বপ্নে আরও উন্নতমানের কাপড় দিয়ে কাবা আচ্ছাদনের স্বপ্ন দেখেন। তৃতীয় দফা স্বপ্নের পর তিনি ইয়েমেনের লাল ডোরাকাটা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবাঘরকে আচ্ছাদিত করেন।

হজে কাবাঘর স্পর্শ করার এমন দৃশ্য নিয়মিত (ছবি: রয়টার্স) সুন্দর কাপড়ের গিলাফ
তুব্বা আবু কবরের রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আচ্ছাদন করতে থাকেন। এটি নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামি কালো রঙের সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণখচিত ক্যালিগ্রাফিযুক্ত মোটা গিলাফ দিয়ে কাবাঘর আচ্ছাদন করা হয়। কাপড়টিকে কিসওয়াহ বলা হয়। আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদী ১৬০ হিজরিতে হজ পালনকালে পবিত্র কাবা থেকে একটি ছাড়া সব কিসওয়াহ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সপ্তম হিজরিতে মুসলমানদের মক্কা বিজয়ের পর গিলাফ পরানোর সংস্কৃতি অব্যাহত থাকে। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবাঘরের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ দেন। একই বছরের মাঝামাঝি প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত করে তা দিয়ে কাবাঘরকে আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরি পর্যন্ত এই কারখানা গিলাফ বা কিসওয়াহ তৈরি অব্যাহত রাখে।

১৩৮১ হিজরিতে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগরের মাধ্যমে রেশমি ও সোনালি সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরানোর ব্যবস্থা করা হয়। ১৩৮২ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ নতুনভাবে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমি রঙের সঙ্গে কালো কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে কোরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালি আভায় উদ্ভাসিত।

হজের আগে কাবাঘর আচ্ছাদনের জন্য মক্কার কারখানায় রেশমি ও কটন কাপড়ে কিসওয়া নকশার কাজ চলে পুরোদমে গিলাফ পরিবর্তন
প্রতি বছর হজের আগে কাবা শরিফের গিলাফ সরিয়ে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। হাজিদের ইহরামের শ্বেত শুভ্রতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তখন সাদা গিলাফ পরানো হয়। হজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজে নতুন গিলাফ পরানো হয়। এরপর আগের গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন মুসলিম দেশকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।

উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট অবলম্বনে।

/জেএইচ/চেক/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত, যা জানা গেলো
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৩ সদস্য আটক
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
বাংলাদেশি আমেরিকানদের প্রশংসা করলেন ডোনাল্ড লু
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
মেটা-ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনালের ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি