চারপাশে হিমালয় পর্বত। মাঝখানে বিমানবন্দর। ভাবুন তো কত মনোরম লাগছে দেখতে! ভারতের সিকিম রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাকিয়ং বিমানবন্দর তাই আলোচনা সৃষ্টি করেছে ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার বাড়ি সেখানেই!
চীন সীমান্ত থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিটার (৪ হাজার ৫৯৩ ফুট) ওপরে পাকিয়ং গ্রামের কাছে এর রানওয়ে। বলা হচ্ছে, পৃথিবী গ্রহের সবচেয়ে অন্যরকম ও চোখধাঁধানো বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরটি উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বক্তৃতায় বলেন, ‘এটি ভারতের শততম বিমানবন্দর। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় এভিয়েশন স্পর্শ করলো নতুন মাইলফলক।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১ একর জমির ওপর পাকিয়ং বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার (৫৭৫ কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা)। তিনি মনে করেন, ‘এর মাধ্যমে ভারতের প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের দক্ষতা ফুটে উঠেছে। পাহাড় পরিষ্কার থেকে শুরু করে ভারী বৃষ্টিসহ প্রতিকূল আবহাওয়াকে তারা যেভাবে মোকাবিলা করেছেন তা প্রশংসনীয়। এটি সত্যিই প্রকৌশলের বিস্ময়কর কৃতিত্ব।’
এর আগের দিন সিকিমে পৌঁছান মোদি। ২৩ সেপ্টেম্বর বিমান থেকে তোলা কয়েকটি ছবি টুইটারে শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘শান্ত ও চমৎকার অনুভূতি হলো। সিকিম যাওয়ার পথে ছবিগুলো তুলেছি। অন্যরকম সৌন্দর্য ও আশ্চর্যময়!’ সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া হ্যাশট্যাগ।
সিকিমের প্রথম বিমানবন্দর এটাই। ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার লম্বা ও ৩০ মিটার চওড়া রানওয়ের জন্য ৮০ দশমিক ৩৮ মিটার বাঁধ দিয়ে জায়গা তৈরি করা হয়েছে। চারপাশ ঘিরে রেখেছে গভীর উপত্যকা।
এই বিমানবন্দরের নির্মাণকাজে সময় লেগেছে নয় বছর। তাই এটি ওই অঞ্চলে বহুল প্রতীক্ষিত।
বিমানবন্দরে দুটি পার্কিং বেস ও একটি টার্মিনাল ভবন রয়েছে। ২ হাজার ৩৮০ মিটার টার্মিনালে সর্বোচ্চ ১০০ জন যাত্রীকে একসঙ্গে সেবা দেওয়া যাবে। তবে সেখানকার মূল আকর্ষণ হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য।
বিমানের যাত্রীদের কাছে জানালা দিয়ে পাকিয়ং বিমানবন্দরের চারপাশের পাহাড়-পর্বতের দৃশ্য বেশ উপভোগ্য হবে।
আটটি পাহাড়ের মাধ্যমে তিব্বত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সিকিম সংযুক্ত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটি হিমালয়ের মনোরম দৃশ্যের জন্য ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। সেখানে আছে ২৮টি পর্বতশৃঙ্গ, ২১টি তুষার নদী আর ২০০টিরও বেশি হ্রদ।
আগামী ৪ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিক যাত্রীসেবা শুরু হবে পাকিয়ং বিমানবন্দরে। ভারতের সবচেয়ে বড় বাজেট এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে অন্যতম স্পাইসজেট সেখানে দিনে দুটি করে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করবে। এরমধ্যে পাকিয়ং বিমানবন্দর থেকে দেড় ঘণ্টায় কলকাতা ও পাকিয়ং থেকে একঘণ্টায় গোয়াহাটি যাওয়া যাবে।
পশ্চিমবঙ্গে পাকিয়ংয়ের আগে সিকিমের মূল শহর গ্যাংটকের কাছের বিমানবন্দর ছিল বাগদোগরা। গ্যাংটক থেকে সড়কপথে সেখানে যেতে লেগে যায় পাঁচ ঘণ্টা।
গ্যাংটকের দক্ষিণে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাকিয়ং বিমানবন্দর।
আশা করা হচ্ছে, পাকিয়ং বিমানবন্দরের সুবাদে সিকিমের পর্যটন গতিশীল হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিকিম হলো পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। ফলে পাকিয়ং বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে যেতে অনেকের আগ্রহ তৈরি হবে। হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ, ট্যুর গাইডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন