১৫ হাজার কিলোমিটার পথ। ১৭ ঘণ্টা ৫২ মিনিটের বিরতিহীন ভ্রমণ। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিরতিহীন যাওয়ার অন্যরকম অভিজ্ঞতা হলো যাত্রীদের। বিশ্বের সবচেয়ে দূরপাল্লার এই বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করেছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। এর চেয়ে বেশি সময়ের বিমান রুট আর নেই বিশ্বে।
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টায় আমেরিকায় অবতরণ করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এসকিউ২২। এই যাত্রায় ছিলেন ১৫০ জন যাত্রী ও ১৭ ক্রু। তাদেরই একজন এয়ারলাইন রেটিংস ডটকমের এডিটর-ইন-চিফ জিওফ্রে থমাস। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘কখন যে সাড়ে ১৭ ঘণ্টা চলে গেলো টেরই পেলাম না! ঘড়ির কাঁটা যেন খুব দ্রুতই ঘুরেছে। ভ্রমণটা ছিল বেশ আরামদায়ক।’
উড্ডয়নের আগে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে জানায়, সময় বাঁচাতে বিরতিহীন ভ্রমণে বেশ আগ্রহী যাত্রীরা। নিউইয়র্ক যাওয়ার ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসের সব টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর প্রিমিয়াম ইকোনমি আসনও ফাঁকা ছিল খুব কম।
ভ্রমণে বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা দু’বার খাবার পেয়েছেন। এছাড়া যখন খুশি খাওয়ার সুযোগ নিয়েছেন তারা। ঘুমানোর জন্য ছিল বিছানা। আর প্রিমিয়াম ইকোনমি আসনের যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দেওয়া হয়েছে তিনবার।
এ৩৫০-৯০০ ইউএলআর (আলট্রা-লং-রেঞ্জ) নামের এয়ারবাসের দুই ইঞ্জিনচালিত বিমানটিতে ১৬১ জন যাত্রী বসতে পারে। এর মধ্যে ৬৭টি বিজনেস ক্লাস ও ৯৪টি প্রিমিয়ার ইকোনমি আসন। এই রুটে কোনও ইকোনমি আসন নেই।
দূরপাল্লার রুটে এ৩৫০-৯০০ বিমান আরও কয়েকটি এয়ারলাইন ব্যবহার করে। কারণ মেঝে থেকে সিলিংয়ের উচ্চতা বেশি, জানালা বড় ও জেটল্যাগ কমাতে পরিকল্পিতভাবে আলো ডিজাইন আছে এতে। এটি টানা ২০ ঘণ্টা উড়তে পারে। বোয়িং ৭৭৭ সিরিজের বিমানের চেয়ে ২০-৩০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে এর।
এদিকে সিঙ্গাপুর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে আবারও বিরতিহীন ফ্লাইট শুরুর কথা ভাবছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। সানফ্রান্সিসকোতেও একইরকম ফ্লাইট চালু করতে পারে এই সংস্থা। এজন্য আরও সাতটি নতুন বিমান বানানোর অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনসও সিঙ্গাপুর থেকে সানফ্রান্সিসকোতে বিরতিহীন ফ্লাইট চালায়।
পাঁচ বছর পর আবারও চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কে যাত্রী পরিবহন শুরু করলো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। তখন এ৩৪০-৫০০ বিমান চালাতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হতো। এ কারণে ওই রুটে চলাচল হয়ে উঠেছিল ব্যয়বহুল। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয় এটি।
২০০৪ সালে প্রথম চাঙ্গি-নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট চালু করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। কিন্তু ২০১৩ সালে এটি বন্ধ করতে বাধ্য হন তারা। এরপর থেকে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে বিরতি নিয়ে নিউইয়র্ক ও জাপানের টোকিও আর দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে থেমে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফ্লাইট চালিয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস।
এ বছরের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১৭ ঘণ্টার বিরতিহীন ফ্লাইট চালু করে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় আকাশসেবা সংস্থা কানটাস। আর নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে কাতারের দোহায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টার ফ্লাইট চালায় কাতার এয়ারওয়েজ।
জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে লন্ডন থেকে সিডনিতে ২০ ঘণ্টার বিরতিহীন ফ্লাইট চালু করতে এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে কানটাস। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউইয়র্কেও বিরতিহীন ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা আছে তাদের। অবশ্য এই রুটের দূরত্ব লন্ডন থেকে সিডনির চেয়ে কিছুটা কম।
তবে ফ্লাইট গ্লোবালের গ্রুপ এডিটর ম্যাক্স কিংসলে-জোন্স আশঙ্কা করছেন, নতুন নতুন বিরতিহীন রুটের পরিকল্পনা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিবিসিকে তার করা মন্তব্য, ‘বিরতিহীন ফ্লাইটের ভাড়া বেশি হলেও কোথাও বিরতি টানার অসুবিধা এড়াতে পারায় এয়ারলাইনগুলো টিকিটের দাম কমই রাখবে।’
সূত্র: বিবিসি