X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো

রিয়াসাদ সানভী
২৩ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৬আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৫৬

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো খুব ভোরে বাস নামিয়ে দিয়ে গেলো। আহ, ভালোবাসার বান্দরবান! সবসময়ই দেখেছি, কেরানিহাট দিয়ে বান্দরবানের পথে বাস ঢুকে পড়তেই মনটা কেমন উদাস হয়ে যায়। তবে বাসস্ট্যান্ডে নামতেই মনের মেঘ কেটে রোদ হাসে। প্রতিবার এমনটা কেন হয় তা প্রকৃতিদেবই ভালো জানেন। আমার কাছে এর চেয়ে ভালো ব্যাখ্যা আর নেই।

এবার অবশ্য শুধু অ্যাডভেঞ্চার করতে আসিনি। ট্রেকিং হবে নিশ্চয়ই। একইসঙ্গে অন্যকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আছে কাঁধে। সেই দল এখনও বান্দরবান এসে পৌঁছায়নি। রাঙামাটি থেকে খুব ভোরে রওনা দিয়েছে তারা। তাদের এসে পৌঁছাতে সকাল সাড়ে ৮টা-৯টা বাজবে।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো তাজিনডং হোটেলে নাশতা সেরে শঙ্খ নদীর ব্রিজে গিয়ে দাঁড়ালাম। শহর জাগছে একটু একটু করে। নদীর পাড়ে ফসল চাষের আয়োজন চলছে। নদীতে প্রত্যাশার চেয়ে জল কম। শরতের এ সময়ে পানি আরও বেশি থাকা উচিত। জলবায়ু পরর্বতন হচ্ছে। আর শঙ্খের উজানে ব্যাপক হারে বন উজাড় রীতিমতো আশঙ্কাজনক।

এদিকে অন্য দলের সবাই এসে পৌঁছালেন। আমরা চললাম আমাদের একদিনের ক্ষণিক আবাসে। থাকার জায়গাটি বেশ সুন্দর। নাম বললে সবাই চিনবেন। এখন বান্দরবান বললেই আমজনতা যেসব জায়গা চেনে সেগুলোরই একটি। সরকারি সেবা পেতে নানান ঝক্কি-ঝামেলার কথা শোনা যায়। কিন্তু সরকারি আতিথেয়তা সবসময়ই বেশ জাঁকালো। যদিও খুব ভাগ্যবান না হলে আমার মতো সাধারণের কপালে সেই সেবা সহজে জোটে না।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো ঠিক হলো সারাদিন বিশ্রাম নেবো। রাতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে দাওয়াত আছে। কাল আমরা রুমার দিকে যাবো। কেওক্রাডংয়ের দিকে যাওয়া হবে হয়তো। সেই উত্তেজনায় আচ্ছন্ন মন। তখনও অনুমান করতে পারিনি রাতের আয়োজনে কী চমক অপেক্ষা করছে।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই আমরা শহরে এসে হাজির। তখনই জানতে পেরেছি প্রবারণা পূর্ণিমার কথা। বান্দরবান শহরে এজন্য দেখলাম উৎসবের আমেজ। মূল আয়োজন রাজার মাঠে। আমরা যাবো সেদিকেই। তখনও প্রবারণা পূর্ণিমার আয়োজন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। শহরের কেন্দ্রস্থলে রাজার মাঠ। এর ঠিক সামনেই রাজবাড়ি। বান্দরবান বোমাং সার্কেলের অধীন। রীতি অনুযায়ী এখানে প্রতি বছর রাজ পূন্যাহ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এখন সবকিছুই আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু দেশের এই পাহাড়ি অংশে সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে বাধা প্রথাটি।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো রাজার মাঠে উপস্থিত হতেই চোখ ছানাবড়া! চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা গোটা এলাকায়। বিশাল প্যান্ডেলের নিচে মঞ্চ। সেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পর আছে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এ অঞ্চলে বিশালসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর বাস। প্রবারণা পূর্ণিমা হওয়ার কথা ছিল তাদের উৎসব। কিন্তু সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে এটি এখন এই অঞ্চলের সবচেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ উৎসব।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো এ আয়োজনের পোশাকি নাম ‘মাহা ওয়াই গোয়েই পোয়ে’। প্রবারণা পূর্ণিমার একটি ধর্মীয় তাৎপর্য আছে। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে শ্রাবণী পূর্ণিমা হয়ে মধু বা ভাদ্র পূর্ণিমা তারপর আশ্বিণী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমা পর্যন্ত হলো বর্ষাব্রত পালনের সময়কাল। গৌতম বুদ্ধ নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই তিন মাস সব ভিক্ষু ও সংঘ নিরবিচ্ছিন্নভাবে ধ্যানে মগ্ন থাকবে। প্রবারণার দিনে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে শেষ হবে এই ব্রত। এ উপলক্ষে ভিক্ষুগণকে চিবর দানসহ বিভিন্নভাবে উদযাপন করা হবে উৎসব। প্রথমে প্রার্থনা, চিবর দানসহ নানান আনুষ্ঠানিকতায় সম্পন্ন হলো ধর্মীয় পর্ব।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো আমাদের বিশেষ নিমন্ত্রপত্র আছে। ফটক পেরিয়ে প্যান্ডেলের ভেতর ঢুকে গেলাম। কয়েকশ’ টেবিল। নানান লোভনীয় খাদ্যদ্রব্যে সেগুলো ভরপুর। গুনে দেখেছিলাম, পানীয়সহ মোট ২৭ ধরনের আইটেম ছিল। নিতান্ত রাক্ষস না হলে কারও পক্ষে সবটা খাওয়া সম্ভব নয়। সব টেবিলে একই অবস্থা। প্রচুর খাবার বেচে গেলো। তখনও চমকের অনেকটা বাকি।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো প্যান্ডেলের বাইরে শুরু হলো ফানুস ওড়ানোর প্রস্তুতি। একটা-দুটো নয়, সংখ্যায় শত শত। নানান আকৃতির নানান বর্ণ ও ঢঙ। আশ্বিনের নির্মেঘ আকাশে চাঁদ উঠেছে গোল থালার মতো। তাকে ক্যানভাসের মাঝখানে রেখে উজ্জ্বল রাতের আকাশে ফানুসের ঢল। সেই রোমাঞ্চ বর্ণনা করা যায় এমন সাধ্য কলমের নেই! শুধু পাহাড়ি আদিবাসী নন, প্রচুর বাঙালিও এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। মানুষের স্রোত যেন আশার প্রতীক হয়ে ওঠে ফানুসের সঙ্গে যাচ্ছে ঊর্ধ্বাকাশে। দূর পাহাড়ের ওপারে চাঁদই যেন সেগুলোর লক্ষ্য।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো ফানুসের পাশাপাশি শুরু হলো চোখধাঁধানো আতশবাজির খেলা। একদিকে নানান আকারের ফানুস, আরেকদিকে আতশবাজি। আকাশে তখন লঙ্কাকাণ্ড। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখি। চোখেরও তো খানিকটা বিশ্রাম চাই। এক অভূতপূর্ব উৎসবের সাক্ষী হলাম। ইংরেজি নববর্ষে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় শহরে আতশ বাজির এমন উৎসবের আবহ দেখা যায় টিভির সুবাদে। এবার প্রত্যন্ত পাহাড়ি শহরে অভূতপূর্ব হৃদয় নিংড়ানো উৎসবের সাক্ষী হয়ে রইলাম। সবশেষে ছিল গানের আয়োজন। যদিও এমন আয়োজনের পর আর শহুরে পপ গানের সুর টানলো না। আমরা চলে এলাম থাকার জায়গায়। সেখান থেকেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আতশবাজির উৎসব। শহর ভাসছে আলোর বন্যায়। আমার সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে রইবে এই ঘটনা।

প্রবারণা পূর্ণিমার আলো মনে রাখবেন
এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা আগামীকাল ২৪ অক্টোবর। যেহেতু এটি বান্দরবান শহরেই, তাই দুই দিনের ছুটিতে সেখানে বেড়িয়ে আসতে পারেন। এটি সার্বজনীন উৎসব হলেও এর ধর্মীয় তাৎপর্য আছে। তাই এমন কিছু করবেন না যাতে অন্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়।

ছবি: লেখক




/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!